চিত্তভ্রংশ হওয়ার আগেই সাবধান

‘ডিমেনশা’ বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হতে পারে মেজাজের পরিবর্তন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2021, 02:10 PM
Updated : 5 August 2021, 02:10 PM

পুরানো স্মৃতি মানুষকে কাঁদায় কিংবা আনন্দ দেয়। তবে কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই যদি স্বাভাবিক মেজাজে পরিবর্তন ঘটতে থাকে তবে সেটা হতে পারে স্মৃতিভ্রংশ বা ‘ডিমেনশা’ রোগের লক্ষণ।

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের মতে, ‘ডিমেনশা’র প্রাথমিক অবস্থার আরেক নাম ‘ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশা’। মস্তিষ্কের ‘ফ্রন্টাল’ ও ‘টেম্পোরাল লোব’য়ের প্রভাবে দুর্লভ কিছু মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দেয়। আর সেই উপসর্গগুলোর সমষ্টিগত নাম হলো এই ‘ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশা’।

৪০ থেকে ৬৫ বছর বয়সের মানুষের মাঝে এই ‍উপসর্গগুলো বেশি দেখা যায়। ব্যক্তিত্ব, আচরণ, ভাষা ইত্যাদিকে প্রভাবিত করে সেই উপসর্গগুলো।

সম্প্রতি নতুন এক গবেষণা গবেষণা দাবি করছে, কিছু বিশেষ অনুভূতি শক্তি কমে যাওয়া হতে পারে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ইঙ্গিত।

সুখের অনুভূতি

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সুখ অনুভব করার ক্ষমতা কমে যাওয়াকে বলা হয় ‘অ্যানহেডোনিয়া’, যা ‘ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশা’র একটি বৈশিষ্ট্য।

ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি’য়ের অধ্যাপক মুর‌্যান আইরিস বলেন, “‘অ্যানহেডোনিয়া’ কিন্তু ‘ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশা’য়ের একটি বৈশিষ্ট্য।”

এই রোগের আক্রান্ত মানুষগুলো সুখ, আনন্দ, তৃপ্তি কীভাবে অনুভব করেন সেটা নিয়ে প্রথম গবেষণা করছেন এই গবেষক ও তার দল।

এবিসি অষ্ট্রেলিয়া’কে অধ্যাপক আইরিস বলেন, “একজন সুস্থ মানুষ সুখ যেভাবে অনুভব করেন, বিভিন্ন ধরনের ‘ডিমেনশা’তে আক্রান্ত ব্যক্তি একইভাবে সুখ অনুভব করেন কি-না সেটাই আমরা জানতে চাই।

এজন্য আমরা পর্যবেক্ষণ করছি মোট ১৭২ মানুষকে। এদের মধ্যে ৮৭ জনের আছে ‘ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশা’, ৩৪ জন আক্রান্ত আলৎঝাইমার’স ডিজিজ’য়ে।

তিনি আরও বলেন, “গবেষণার পদ্ধতি দুটি। এক যারা তাদের সেবা করেন তাদের ভালোবাসার মানুষ তাদেরকে প্রশ্ন করা যে, এই রোগে আক্রান্ত হওয়া আগে তারা কতটা হাসিখুশি ছিলেন আর রোগাক্রান্ত হওয়ার পর তাদের সেই ক্ষেত্রে কতটুকু পরিবর্তন এসেছে।”

“আমরা দেখেছি ‘ডিমেনশা’ হওয়ার আগে তাদের জীবনে যতটা আনন্দের ছিল, রোগাক্রান্ত হওয়ার পর তা কমেছে বহুগুনে। তবে একই পরিস্থিতি আবার আলৎঝাইমার’স ডিজিজ’য়ে আক্রান্তদের মাঝে দেখা যায় না।”

“আর দ্বিতীয় পদ্ধতি হল ‘ইমেজিং টেকনোলজি’র মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যে তাদের হাসিখুশি ভাব কমে যাওয়ার কারণটা আসলে কোনো না কোনো ধরনের মস্তিষ্কজনীত রোগই।”

অধ্যাপক আইরিস আরও বলেন, “‘ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশা’তে আক্রান্ত মানুষগুলো সামাজিক বন্ধনগুলো থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চায় না, নিজেদের শখগুলোর ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে তারা প্রচণ্ড নিঃসঙ্গ হয়ে যায় এবং সেই সঙ্গে তাদের আনন্দের অনুভূতিগুলো ভোঁতা হতে থাকে। আমাদের গবেষণায় ঠিক সেটাই আমরা দেখেছি।”

ফলাফল থেকে নতুন চিকিৎসা

ডা. আইরিস আশা করেন তাদের এই গবেষণা মস্তিষ্কের ওই রোগের ভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনে সাহায্য করবে।

তিনি বলেন, “একজন মানুষের আচরণগত পরিবর্তনটা আসলে মস্তিষ্কের প্রভাবে হচ্ছে, তারা নিজেদের আড়াল করে রাখতে চাইছে সেটাই মূল কারণ নয়। এমন নয় যে আপনার প্রিয়জন আপনার সঙ্গে মিশতে চাইছে না। বরং তাদের মস্তিষ্কের যে অংশগুলো সেই সাক্ষাতে আগ্রহ সৃষ্টি করে সেগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না।”

আরও পড়ুন