বন্ধুত্বের চার প্রকার

একজন বন্ধুর জন্য কতটুকু শ্রম, মনযোগ, সময় ব্যয় করতে রাজি আছেন তা থেকেই নির্ধারণ হবে আপনার ‘বেস্টফ্রেন্ড’।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2021, 01:47 PM
Updated : 1 August 2021, 01:47 PM

দীর্ঘদিন ধরেই রেডিও ও টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠার প্রচার করে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের গ্লেন্ডা ডি. শ।

তিনি বলেন, “প্রায় এক দশক আগে নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের বসে আমি অনুভব করলাম আমি সময়টা উপভোগ করছি না। চারপাশের মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবলাম এই মানুষগুলো আমার ঠিক কাছের মানুষ নয়, আর দিন শেষে আমি একপ্রকার নিঃসঙ্গ।

ওয়েল অ্যান্ড গুড ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন “আমি অনুধাবন করলাম, আমার আশপাশে অনেক মানুষ থাকার কারণে অনেক বন্ধুই হয়ত আমার আছে, তবে সেই সম্পর্কগুলো আমি সেচ্ছায় তৈরি করিনি।”

নিজের জীবনের এই উপলদ্ধি থেকেই বন্ধুত্ব নিয়ে গবেষণায় নেমে পড়েন গ্লেন্ডা ডি. শ। বিভিন্ন মনস্তাত্তিক গবেষণা ঘেটে বন্ধুদের স্তর বিভাজন করেন তিনি।

শ’য়ের নতুন বই ‘বেটার ইউ, বেটার ফ্রেন্ডস: আ হোল নিউ অ্যাপ্রোচ টু ফ্রেন্ডশিপ’য়ে সেগুলো তুলে ধরা হয়।

প্রয়োজনের বন্ধু

শ বলেন, “এই মানুষগুলো আপনার সবচাইতে কাছের মানুষ, আপনার বন্ধুমহলের প্রধান সদস্য। আমি আমার প্রয়োজনের বন্ধুগুলোকে খুঁজে পেয়েছিলাম একটা কাগজে নিজের জীবনের লক্ষ্যগুলো লেখার মাধ্যমে। শব্দগুলো লিখে আমি ভাবলাম আমার জীবনের কোন মানুষগুলো আমার এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের পথে সহায়তা করবে, আমাকে বিশ্বাস করবে। পাঁচজনের কথা মাথায় এলো।”

তিনি আরও বলেন, “এই মানুষগুলো আপনার সবচাইতে আস্থাভাজন মনে হবে। তাদের সঙ্গে জীবনের গভীরতম মূল্যবোধগুলো নিয়ে আপনি আলোচনা করবেন। তবে তারা সবকিছুতে আপনার সঙ্গে একমত হবে না, আর সেই মতবিরোধ থেকেই একে অপরকে সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারবেন।”

আবেগের বন্ধু

এই বন্ধুগুলোর সঙ্গে জীবনের কোনো একটা সময়ে আপনার কিংবা এখনও একটা অনুভূতিগত বা মানসিক যোগাযোগ ছিল বা আছে। সম্পর্কটা তাদের সঙ্গে আবেগতাড়িত। জীবনের কিছু প্র্রেক্ষাপটে তারা গুরুত্বপূর্ণ আবার কিছু প্রেক্ষাপটে তা নয়।

“স্কুল কিংবা কলেজ জীবনের প্রথম বন্ধু, ছেলেবেলার খেলার সাথী কিংবা আপনার পাশের বাসার বন্ধু। এরা সবাই এই স্তরের। আপনার জীবনের কোনো একটা পর্যায়ের তারা ছিল গুরুত্বপূর্ণ অংশ কিন্তু সময়ের স্রোতে সম্পর্কটা স্তিমিত হয়ে গেছে হয়ত।”

প্রয়োজনীয় বন্ধুদের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা বজায় রাখতে হলেও এই বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার সময় কোনো সীমাবদ্ধতা মেনে চলার প্রয়োজন হয় না। সবকিছু নিয়ে তাদের সঙ্গে গল্পে মেতে ওঠা যায়,

যেকোনো প্রয়োজনে আপনার একে অপরের পাশে থাকেন। এমনকি কেউ মুখ ফুটে না ডাকলেও। কিন্তু তাদের সঙ্গে প্রতিদিন আপনার আড্ডা হয় না, একে অপরের জীবনের সব খবর আপনারা রাখেন না। প্রয়োজনও নেই।

কয়েক বছর যোগাযোগ না হলেও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের গভীরতাটা থেকে যায় আগের মতোই।

সামাজিক বন্ধু

শ’ বলেন, “কাজের সুবাদে, কোনো শখের কাজে গিয়ে যে মানুষগুলোর সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয় তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের বন্ধু হয়ে ওঠে। দৈনন্দিন সামাজিকতার একটা অংশ তারা এবং যে প্রেক্ষাপটে তাদের সঙ্গে পরিচয় সেই প্রেক্ষাপটেই তারা অবস্থান করেন।”

“যেমন সহকর্মী বন্ধুর সঙ্গে কাজের ফাঁকে টুকটাক আড্ডা তার বিষয়বস্তুও কর্মক্ষেত্রেরই বিভিন্ন ঘটনা। এই মানুষগুলো কাছে আপনি ব্যক্তিগত জীবনের কোনো পরামর্শ চাইতে যান না। আর তাদের সঙ্গে মেশা হয় একটা নির্দিষ্ট গণ্ডি মেনে।”

“তবে এই মানুষগুলোর সঙ্গে প্রতিদিনের অনেকটা সময় একসঙ্গে পার করা হয়। ফলে তাদেরকে খুব কাছ থেকে দেখা হয় প্রতিদিন, যোগাযোগটা হয় নিয়মিত। তাই এই স্তরের বন্ধুরা ওপরের দুই স্তরে উঠে যেতে পারে।”

গুরু শিষ্যের বন্ধুত্ব

এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটা অসম। একপক্ষ এখানে ক্ষমতাধর, অপরপক্ষ নতজানু। ফলে অন্যান্য স্তরের বন্ধুর সঙ্গে কখন দেখা হবে, আড্ডা হবে তা দুই পক্ষই নির্ধারণ করতে পারে। তবে গুরু শিষ্যের বন্ধুতে গুরু ডাকলে শিষ্যকে আসতেই হয়।

“এখানে যারা গুরু, তারা শিষ্যকে তার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেন। ফলে এক অর্থে তারা শিষ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। শিষ্যের কাছে গুরু একজন আদর্শ, ফলে এই সম্পর্কে সীমাবদ্ধতা অনেক এবং তা বেশ স্পষ্ট।”

শিক্ষক, অফিসের বস কিংবা ম্যানেজার, কর্মক্ষেত্রের কোনো শ্রদ্ধেয় বড় ভাই এরাই থাকেন এই স্তরে। এই সম্পর্ক থেকে দুইপক্ষই লাভবান হয়, আর অনেকসময় বন্ধুত্বের উদ্দেশ্যই থাকে লাভবান হওয়া।

একজনের মানুষের বন্ধুমহলের প্রতিস্তরে সর্বোত্তম বন্ধুটা কে হবে তা নির্ভর করবে ওই মানুষটার ওপরে। একজন বন্ধুর জন্য আপনি কতটুকু শ্রম, মনযোগ, সময় ব্যয় করতে রাজি আছেন তা থেকেই নির্ধারণ হবে আপনার ‘বেস্টফ্রেন্ড’।

সবারই সময় আর মনযোগ সীমাবদ্ধ। তাই ব্যক্তিগতভাবে কে কাকে সবচাইতে গুরুত্ব দিচ্ছে সেটাই মুখ্য।

আরও পড়ুন