কার্বোহাইড্রেট একেবারে বাদ দেওয়ার কুফল

খিটখিটে মেজাজ, মাথা ব্যথায় ভোগা কিংবা জ্বরও হতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2021, 11:59 AM
Updated : 23 July 2021, 11:59 AM

ওজন কমানোর চেষ্টায় খাদ্যাভ্যাস থেকে ‘কার্বোহাইড্রেইট’ বা শর্করা কমানো কিংবা বাদ দেওয়াটা বেশ সাধারণ বিষয়।

আর ‘কার্বোহাইড্রেট’ কমানোর সুবাদে মাংস, ডিম, মাখন ইত্যাদি খেয়েও ওজন কমানো যাবে এমন চিন্তাটা অনেকের কাছেই লোভনীয়।

তবে এখানে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও আছে।

খিটখেটে মেজাজ: নতুন খাদ্যাভ্যাসে আসার পর হঠাৎ করেই যদি দেখেন মেজাজ খিটখিটে থাকছে, তবে এর পেছনের কারণটা হতে পারে ‘কার্বোহাইড্রেট’য়ের কমতি।

নিউ ইয়র্কের ‘ইন্টারনাল মেডিসিন ফিজিশিয়ান’ শিনিন লালানি (ডিও) বলেন, “কেউ যদি খাদ্যাভ্যাস থেকে ‘কার্বোহাইড্রেট’ পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেন, তবে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়।”

ইটদিস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “রক্তের শর্করার মাত্রা কমে গেলে ‘অ্যাড্রেনাল’ গ্রন্থি এমন কিছু হরমোন নিঃসরণ করে যা শরীরকে প্রচণ্ড ধকলের ইঙ্গিত দেয়। আর সেই ইঙ্গিতকে শরীর জীবনের ওপর হুমকি হিসেবে ধরে নেয়। এমন পরিস্থিতির কারণে মানসিক অস্বস্তি, বিরক্তি, মনযোগে বাধা ইত্যাদি দেখা দেয়।”

মাথাব্যথা: লালানি বলেন, “কিছু মাথাব্যথা সাধারণ ওষুধ খেয়ে বিন্দুমাত্র কমে না। আর এর পেছনের কারণ হতে পারে ওই ‘কার্বোহাইড্রেট’য়ের অভাব। শরীরে পর্যাপ্ত শর্করা না থাকার কারণেই প্রচণ্ড মাথাব্যথা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে পানি পানের মাত্রা আরও বাড়াতে হবে।”

কোষ্ঠকাঠিন্য: “স্বাভাবিক হোক কিংবা অস্বাভাবিক, একটা মাত্রায় ‘কার্বোহাইড্রেইট’ গ্রহণ করার মধ্যে হঠাৎ করেই যদি তা গ্রহণের মাত্রা অত্যন্ত কমিয়ে কিংবা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর সঙ্গে আমিষ আর চর্বি গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয় তবে নানাবিধ হজম সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়”, বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্টিগ্রেটিভ অ্যান্ড ফাংশনাল নিউট্রিশন অ্যাকাডেমি’র পুষ্টিবিদ অ্যামান্ডা টেরিলো।

অপরদিক লালানি বলছেন, “খাদ্যাভ্যাসে ‘কার্বোহাইড্রেট’য়ের মাত্রা যদি অস্বাভাবিক মাত্রায় কমিয়ে দেওয়া তবে পেট ব্যথা থেকে শুরু করে অন্ত্রের কোনো অংশে ‘ব্লক’ সৃষ্টি হওয়ারও আশঙ্কা থাকবে।”

শারীরিক দুর্বলতা: ‘কার্নিভোর স্টাইল’য়ের সম্পাদকীয় পরিচালক এবং পুষ্টিবিদ আরিয়ানা ফস্টার বলেন, “খাদ্যাভ্যাস থেকে ‘কার্বোহাইড্রেইট’ বাদ দেওয়া শারীরিক জ্বালানির একটি বড় উৎসকে বাদ দেওয়া। ফলে কর্মশক্তি প্রতিদিন ফুরিয়ে যাবে নিমেষেই। দুর্বল অনুভব করবেন, অবসাদ আপনাকে ঘিরে থাকবে।”

খাই খাই ভাব: কোনো নির্দিষ্ট খাবার কিংবা নির্দিষ্ট ধরনের খাবার খাওয়া প্রচণ্ড ইচ্ছাই হল ‘ক্রেইভিং’ বা খাই খাই ভাব।

খাদ্যাভ্যাস থেকে হঠাৎ ‘কার্বোহাইড্রেইট বাদ দিয়ে দিলে স্বভাবতই কিছু খাবার খাওয়া ইচ্ছা হবে। কোনো প্রিয় খাবারের কথা মনে করে আফসোস হবে।

অনেক সময় এই ‘ক্রেইভিং’ অস্বাভাবিক অবস্থায় পৌঁছাতে পারে, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

ফস্টার বলেন, “‘ক্রেইভিং’য়ের পাশাপাশি ‘কার্বোহাইড্রেইট’য়ের ঘাটতি থেকে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি তৈরি হওয়াও সম্ভব। এতে খাওয়ার ইচ্ছা আরও বাড়ে, মেজাজও খারাপ থাকে।”

‘কিটো ফ্লু’: ভবিষ্যতে ভালো অনুভব করার জন্য ‘কার্বোহাইড্রেইট’ ছাড়লেও প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার খারাপ লাগবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সনদ-স্বীকৃত পুষ্টিবিদ জে করউইন বলেন, “খাদ্যাভ্যাস থেকে ‘কার্বোহাইড্রেইট’ বাদ দেওয়ার পর জ্বর বা ‘ফ্লু’য়ের মতো উপসর্গ দেখা। এসময় শরীর নিজেকে ‘ডিটক্স’ করে। প্রচুর পানি পান করতে হবে এই সময়টায়। আর শারীরিক অস্বস্তিগুলোর দিকেও নজর রাখতে হবে।”

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন-