ওজন কমানোর পথে বাধা সৃষ্টিকারী খাবার

দৈনিক চলাফেরা ও শরীরচর্চা খাদ্যাভাস্যের ওপর প্রভাব ফেলে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2021, 10:06 AM
Updated : 5 July 2021, 02:19 PM

স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমাতে চাইলে মনোযোগ সহকারে এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। 

‘কম-চর্বি’, ডায়েট বা ‘প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি’ ইত্যাদি লেখা থাকা পণ্য আদৌ কতটা কার্যকর, সেটাও খেয়াল রাখা দরকার।

অনেকক্ষেত্রে এই সকল খাবারে ক্ষতিকর উপাদান বেশি থাকে যা ওজন কমানোর বদলে বরং কোমড়ের মাপ বৃদ্ধি করে।

তাই ওজন কমাতে চাইলে এসব খাবারের ওপর নির্ভরতা বাদ দিয়ে বরং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন, ‘নোমাদিস্তানিউট্রিশন ডটকম’য়ের প্রতিষ্ঠাতা, নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ এবং ‘ইট ইউর ভিটামিন্স’য়ের লেখক মাস্কা ডেভিস।

‘ইট দিস, নট দ্যাট’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “অধিকাংশ পণ্যের ওপরে ‘ভেষজ’, ‘গ্লুটেইন-ফ্রি’, ‘প্রাকৃতিক’ বা ‘আঁশ-সমৃদ্ধ’ লেখা থাকা মানেই এই নয় যে, এগুলো শতভাগ নিরাপদ বা কার্যকর। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের আশায় এসব খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া অনেকসময় এসব খাবার অনেক বাড়তি শর্করা, সোডিয়াম বা হাইড্রোজেনেইটেড উপাদানযুক্ত হয়ে থাকে।”

তথাকথিত ‘স্বাস্থ্যকর’ খাবার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওজন কমানোর পাশাপাশি শক্তি বাড়ানোও সম্ভব হয়। অন্যথায়, এগুলো ওজন কমানোর পথে বাঁধা সৃষ্টি করে।

সালাদ ড্রেসিং: ওজন কমাতে সালাদ খাওয়া ঠিকাছে। তবে বাজারে পাওয়া যায় এরকম বহু সালাদ ড্রেসিংয়ে থাকে সয়াবিন তেল, চিনি, কৃত্রিম স্বাদ, রং ও লবণ। তাছাড়া অনেকদিন পণ্যটি টিকিয়ে রাখতে ‘প্রিজারভেটিভ’ও ব্যবহার করা হয়।

তাই সালাদ ড্রেসিং না খেয়ে টক দই দিয়ে সালাদ খাওয়া ভালো।

বেকারির খাবার: যতই ‘লো ফ্যাট’ লেখা থাকুক, বেকারির যেকোনো খাবারেই ব্যবহার করা হয় কৃত্রিম স্বাদ, রং ও চিনি। মাফিন, কেক, বিস্কুট এরকম খাবার কেনার আগে তাই মোড়কের ওপর লেখা বিশ্বাস করেছেন তো ঠকেছেন।

লো ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার: দুধের তৈরি খাবার থেকে ফ্যাট বা চর্বি সরিয়ে ফেলা মানেই সেটা স্বাদহীন। তার তাতে বাড়তি স্বাদ আনতে ব্যবহার করা হয় কৃত্রিম চিনি ও রং। বাজার থেকে এরকম খাবার কেনার বাদাম ও টাটকা ফল দিয়ে টক দই খাওয়া ভালো।

নারিকেল তেল: অনেক দেশেই নারিকেল তেল রান্নায় ব্যবহার করা হয়। মাথায় রাখতে হবে এই তেল মাখনের চাইতে ৫০ শতাংশ স্যাচুরেইটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ। ফলে দেহে বাজে কোলেস্টরল বাড়িয়ে দিতে পারে নারিকেল তেল।

বাদাম ও বাদামের মাখন: ওজন কমানোর জন্য এই দুই খাবারই ভালো। তবে প্রোটিনের দিকে লক্ষ্য না দিলে বেশি চর্বি গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে। আর বাজার থেকে কেনা প্যাকেট ও বোতলে থাকা বাদাম ও বাদামের মাখন বা ‘নাট বাটার’ কেনার আগে উপাদানের দিকে নজর দিতে হবে। কারণ এগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেশানো থাকে অতিরিক্ত লবণ ও চিনি।

ডায়েট সোডা: সাধারণ কোমল পানীয়র ছেড়ে ডায়েট সোডা বা কোমল পানীয় পান করলেও ওজন বাড়ে। জার্নাল অফ আমেরিকান জেরিয়াট্রিক সোসাইটি’তে প্রকাশিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস’য়ের করা ২০১৫ সালের গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, ডায়েট সোডা পেটের চর্বি বাড়ায়।

সাদা ভাত: সাদা ভাত মানেই সেখানে শর্করার মাত্রা অনেক। বাদামি চাল বরং ভালো। প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে বাদামি চালের উপরের আবরণ সরিয়ে তৈরি করা হয় সাদা চাল। অর্থাৎ ‘ব্র্যান’ সরিয়ে ফেলার কারণে চলে যায় আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ। বাদামি চালের থেকে সাদা চালের ‘গ্লাইকেমিক ইনডেক্স’ বেশি। অর্থাৎ, খাওয়ার পর বাদামির চাইতে সাদা ভাত রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।

মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন: প্রক্রিয়াজাত করা ছাড়া ভুট্টার খই খাওয়া বরং ভালো। যাতে থাকে ভিটামিন বি-ওয়ান, বি-থ্রি এবং বি-সিক্স। পাশাপাশি পাওয়া যায় আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাস। সঙ্গে থাকে উচ্চমাত্রায় আঁশ।

তবে প্যাকেটজাত ‘মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন’য়ে মেশানো থাকে অতিরিক্ত চর্বি ও লবণ। যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

চিজ বা পনির: দৈনিক ১ থেকে দেড় আউন্স চিজ বা পনির গ্রহণের পরামর্শ দেয় ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’। ১ আউন্স চিজে থাকে ৯ গ্রাম চর্বি। তাই সকালে নাস্তায় ডিমের সঙ্গে চিজ খাওয়া বা পাস্তায় থাকা চিজ খাওয়া মানেই অতিরিক্ত পনির খেয়ে ফেলা। আর পিৎজায় যে পরিমাণ চিজ থাকে তা যে দৈনিক চাহিদার চাইতে অনেক বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।  

প্রক্রিয়াজাত মাংস: যেমন সসেজ, মিটবল ইত্যাদি। এগুলো রান্না করে খাওয়া সহজ বটে। তবে ‘হার্ভার্ড’স স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’য়ের গবেষণায় দেখা গেছে, এসব খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় ৪২ শতাংশ আর টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায় ১৯ শতাংশ।

ফলে জুস: ফল খাওয়া স্বাস্থ্যকর। তবে শুধু ফলের রস খাওয়া মানে সেখান থেকে আঁশ ফেলে দেওয়া। যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় দ্রুত। আর বাজারে কিনতে পাওয়া প্যাকেট ও বোতলজাত যেকোনো ফলের রসেই থাকে বাড়তি চিনি, কৃত্রিম চিনি ও রং।

শুকনা ফল: যে কোনো শুকনো ফল সেটা আম কিংবা কিশমিশ যেটাই হোক, সেগুলো থাকে ঘণীভূত শর্করা ও ক্যালরি। আর এগুলো খাওয়া সহজ বলে বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তাই খাওয়ার সময় পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের সস: বাজারে বিভিন্ন ধরনের সস কিনতে পাওয়া যায়। তবে বোতলে থাকা এসব সসে যেমন থাকে ‘প্রিজারভেটিভ’ তেমনি থাকে চিনি, রং, লবণ ও চর্বি। তাই বাসায় বানানো সস খাওয়াই হবে ভালো পন্থা।

আলু চিপস: বিভিন্ন ধরনের চিপসে যে লবণ ও ফ্যাট থাকে তা সবারই জানা। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে আলু একটি ‘স্টার্চ’ বা শ্বেতসার সমৃদ্ধ সবজি।

‘দি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত বার্মিংহামের ‘ডিভিশন অফ কার্ডিওভাস্কুলার মেডিসিন’, ‘উইমেন’স হসপিটাল অ্যান্ড হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল’ এবং ‘হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’য়ের গবেষণা অনুযায়ী, “যেসব খাবারে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেইটস সমৃদ্ধ সেগুলো ওজন বাড়ায়। এরমধ্যে রয়েছে আলুর তৈরির খাবার। যাতে চিনির পরিমাণ কম হলে ‘স্টার্চ’ বেশি।

তাই ওজন কমাতে চাইলে আলু পরিমাণে খেতে হবে অল্প। আর অবশ্যই চিপস খাওয়া এড়াতে হবে।

আরও পড়ুন