শরীরের ওপর ‘চিট ডে’র প্রভাব

যারা শক্তভাবে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের ‘চিট ডে’ শব্দটা হয়ত স্বর্গীয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2021, 10:52 AM
Updated : 29 June 2021, 10:52 AM

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে যে খাবারগুলো থাকে তার অধিকাংশ মুখরোচক নয়। আর যে খাবারগুলো মুখরোচক তার প্রায় সবগুলোই অস্বাস্থ্যকর।

তাই সপ্তাহের ছয় দিন স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে তাতে বিরক্তি আসার পর সপ্তম দিনে পিৎজা, বার্গার খাওয়া যাবে এই কথা ভাবতেই মনটা খুশি হয়ে ওঠে। আর সেই দিনটাই হল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের ‘চিট ডে’।

এখন এই ‘চিট ডে’ নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকাটাই স্বাভাবিক।

কেউ মনে করেন ছয় দিন কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকার পর একদিন প্রিয় খাবারগুলো খাওয়া সুযোগ মানুষের পাওয়া উচিত। আর আরেক দল মনে করেন ওই একদিনের ইচ্ছেমতো খাওয়া বাকি ছয় দিনের নিয়ন্ত্রণ পণ্ড করে দেবে।

‘মেন্স হেলথ’ ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হলো শরীরের ওপর ‘চিট

সমস্যাটা কোথায়

‘চিট’ মানে প্রতারণা। তাই প্রথম কথা হলো ‘চিট ডে’ শব্দটাই অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পছন্দ করেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাবি ল্যানগার নিউট্রিশন’য়ের সনদ স্বীকৃত পুষ্টিবিদ অ্যাবি ল্যানগার বলেন, “একজন মানুষ যদি তার স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলে তবে সে ভালো। আর যদি ফাঁকি দেয় বা ‘চিট’ করে তবে তা মোটেই ভালো নয়।”

‘চিট ডে’য়ের এই নেতিবাচক দিকটাই সমস্যা। তারপরও অনেকের জন্য এই ধারণা কার্যকর। আর সেই মানুষগুলো এমন একটা খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলেছেন যা স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে মানানসই।

শরীরের ওপর প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন মেডিকাল সেন্টার’য়ের হিসাব বলে, “প্রায় সাড়ে চার কোটি আমেরিকান ‘ডায়েট’ করেন এবং ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন পণ্যে খরচ করেন বছরে প্রায় তিন হাজার তিনশ কোটি ডলার। মানুষ যেভাবেই ওজন কমান না কেনো, সেই কম ওজন ধরে রাখতে হলে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আর জীবনযাত্রা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।”

ল্যানগার বলেন, “শরীরের ওজন কমানো কোনো সহজ কাজও নয়। আর লম্বা সময় চেষ্টা করার পরও ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যার্থ হওয়া প্রচণ্ড হতাশাজনক। কখনও ভেবেছেন, যখন কেউ উপর্যুপরী কার্বোহাইড্রেট, চিনি আর চর্বি গ্রহণ করেন তখন তার শরীরের ভেতরে কি অবস্থা হয়?”

ভার্জিনিয়া বিচ’য়ের জিম হোয়াইট ফিটনেস অ্যান্ড নিউট্রিশন’য়ের কর্ণধার জিম হোয়াইট বলেন, “চিট ডে’তে ইচ্ছামতো খেলেই যে কারও বিপাকক্রিয়ার গতি বেড়ে যাবে, তা নয়। বেশি খেয়ে বেশি ক্যালরি খরচ করে সামলে নেবেন এমনটা ভাবলে ভুল হবে। কারণ শরীর সেভাবে কাজ করে না।”

“খাবার বেশি গ্রহণ করলে বিপাকক্রিয়া সামান্য বাড়ে ঠিক। তবে এক হাজার ক্যালরির একটা পিৎজা খেয়ে যদি মনে করেন বিপাকক্রিয়ার গতি বেড়ে গিয়ে দেড় হাজার ক্যালরি খরচ করে ফেলবে, তা কখনই হবে না। আর এজন্যই আমি ‘চিট ডে’কে সমর্থন করি না।”

“কারণ আমি নিজে দেখেছি যে ওই একদিনে মানুষ এতটাই বাড়াবাড়ি মাত্রায় অস্বাস্থ্যকর খাবার খায় যে বাকি ছয়দিন যা উপকার হয়েছিল তার সবই নষ্ট হয়ে যায়।”

ল্যানগার বলেন, “প্রক্রিয়াজাত চিনি বেশি এমন খাবার খেলে অগ্ন্যাশয় বাড়তি ‘ইনসুলিন’ তৈরি করে। আর তা থেকে পেট ফোলাভাব, পেট ব্যথা সৃষ্টি হয়। আবার বেশি খাবার খেলে তা হজম হতেও সময় বেশি লাগবে। অর্থাৎ ‘চিট ডে’তে খাওয়া খাবার পেটে থেকে যাবে লম্বা সময়, সঙ্গে তার প্রভাবও। অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে শারীরিক নড়াচড়া কমে যাবে, ফলে শরীর ক্রমেই স্থূলতার দিকে এগোতে থাকবে।”

সপ্তাহের একদিন ইচ্ছে মতো খাওয়ার ভালো দিক যে নেই তা নয়।

‘জার্নাল অফ কনজিউমার সাইকোলজি’তে প্রকাশিত গবেষণা বলে, ‘চিট ডে’ মানুষকে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার অনুপ্রেরণা যোগায়।

তাহলে উপায়?

এখন এই দিনটিকে কাজে লাগানোর জন্য নিজেকে বুঝাতে হবে, চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

‘চিট ডে’ একদিনই হতে হবে তা নয়। সপ্তাহের একদিন প্রিয় খাবার থেতে গিয়ে অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে সপ্তাহের দুতিন দিন সামান্য পরিমাণে প্রিয় খাবারগুলো খেলেও স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

প্রতিদিন যতটুক ক্যালরি গ্রহণ করা স্বাস্থ্যকর তার ১০ থেকে ২০ শতাংশ ওই প্রিয় খাবারগুলো দিয়ে পুরণ করতে পারেন।

আবার সামান্য খেতে গিয়ে খাদ্যাভ্যাস থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কাও কম নয়। তাই ‘চিট ডে’ কতটুকু ‘চিট’ করা যাবে সেটাও নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা জরুরি।

প্রতীকী ছবির মডেল: ফখরুল আবেদীন মিলন।

আরও পড়ুন