সকালের যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে বাড়বে আয়ু

‘ব্লু জোন’ এলাকার জীবনযাত্রা অনুসরণ করতে পারলে মিলতে পারে দীর্ঘায়ু।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2021, 02:18 PM
Updated : 20 June 2021, 02:18 PM

গ্রিসের দ্বীপ ‘একারিয়া’, ক্যালিফোর্নিয়ার ‘লোমা লিন্ডা’, ইতালির ‘সার্ডিনিয়া’, জাপানের ‘ওখানাওয়া’ এবং কোস্টা রিকার ‘নিকোয়্যা’- এই পাঁচটি স্থানকে বলা হয় ‘ব্লু জোন’; যেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা ১০০তম জন্মদিন উদযাপন করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের লেখক ও ভ্রমণপিপাষু ড্যান বুয়েটনার। পৃথিবীর কোন স্থানের মানুষ সবচাইতে বেশিদিন বাঁচে আর তারা তাদের জীবদ্দশায় কী করেন সেটা নিয়ে গবেষণার পথ পথিকৃত তিনি।

খাদ্যাভ্যাস, এলাকার পরিবেশ, আশপাশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় কাজ করে এই দীর্ঘায়ুর পেছনে।

‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে তুলে ধরা হল ‘ব্লু জোন’য়ের বাসিন্দাদের চারটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। যা তারা চর্চা করেন সকালে। 

ইকিগাই

সকালে আপনি কেনো ঘুম থেকে ওঠেন? কী উদ্দেশ্যে বিছানা ছাড়েন? সেই উদ্দেশ্যকে পুরোপুরি গুরুত্ব দেওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করেছেন জাপানের বাসিন্দারা।

জীবনের উদ্দেশ্যকে খুঁজে বের করার ধারণাকে জাপানি ভাষায় বলা হয় ‘ইকিগাই’।

জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যই মানুষকে দীর্ঘায়ু দেয় বলে মনে করেন ‘ব্লু জোন’য়ের বাসিন্দারা। আর জীবনের সেই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য যা করতে হবে সেটাই প্রতিদিন একজন মানুষকে বিছানা থেকে টেনে তুলে।

‘ইকিগাই’ ধারণাকে নিজের জীবনে প্রতিফলিত করার প্রাথমিক ধাপ জানিয়েছেন ‘নিউরোসাইন্টিস্ট’ ও ‘অ্যাওয়েকেনিং ইউর ইকিগাই’ বইয়ের রচয়িতা কেন মোগি।

তিনি বলেন, “পাঁচটি স্তম্ভ মানতে পারলে ‘ইকিগাই’ অর্জন করা সম্ভব। সেগুলো হল- শুরুটা হবে ছোট দিয়ে, নিজেকে মেনে নেওয়া, চারপাশের মানুষ ও পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা, তুচ্ছ বিষয়গুলোতে আনন্দ খোঁজা এবং বর্তমানকে উপভোগ করা।”

সকালে স্বাস্থ্যকর নাস্তা বাদ দেওয়া যাবে না

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যে দীর্ঘায়ু পাওয়া জন্য আবশ্যক সেটা অবাক করার কোনো বিষয় নয়।

বুয়েটনার বলেন, “পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস যেমন উদ্ভিজ্জ উৎসভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস, ‘মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট’ একজন মানুষকে দীর্ঘজীবী হওয়ার জ্বালানি যোগাবে। আর তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল সকালের নাস্তা।”

ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডা’র ১০৫ বছর বয়সি বৃদ্ধা প্রতিদিন সকালের নাস্তা করেন অল্প আঁচে রান্না করা ওটমিল দিয়ে। সঙ্গে থাকে খেজুর, কাঠবাদাম আর সয়া দুধ।

এমন এক বাটি খাওয়ার পর তিনি পান করেন ‘প্রুন জুস শুটার’, যা খাবার হজমতন্ত্র দিয়ে পার হওয়াকে সহজ করে, সঙ্গে কমায় রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল।

কফি

কফি পান করা মানে ‘ক্রিমি লাতে’, সঙ্গে কয়েক চামচ চিনি নয়। দুধের পরিবর্তে থাকবে উদ্ভিজ্জ বিকল্প যেমন ‘ওট মিল্ক’ কিংবা ‘আগেভ’।

চিনির বদলে প্রাকৃতিক মিষ্টি, যেমন মধু।

কফির বদলে চা পান করলে উপকার কম নয়, বরং বেশিই। এই চা কিংবা কফির সঙ্গে প্রিয় মানুষগুলো সঙ্গে ক্ষণিকের আড্ডা শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।

অন্যের প্রশংসা

অষ্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক সারাহ উইলসন একবার বুয়েটনারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তার নিজের সকালের অভ্যাস সম্পর্কে।

তিনি বলেছিলেন, “সকালে স্বাস্থ্যকর নাস্তা কখনই বাদ দেই না। ফল আর শষ্যজাতীয় খাবারের পরিমাণ সেখানে সবচাইতে বেশি থাকে। এরপর ২০ মিনিট ব্যায়াম। যোগ ব্যায়াম কিংবা সাইকেল চালানো। এরপর শুরু হয় আশপাশের মানুষের প্রশংসা করা।”

“প্রথম যে মানুষটার সঙ্গে আপনার দেখা হল, তাকে ভালো কিছু বলুন।”

হার্ভার্ড’য়ের গবেষণায় এসেছে, আচার ব্যবহার সংক্রামক বিষয়। অর্থাৎ আপনি যদি কারও সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন তবে আপনিও তার কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাবেন।

‘ব্লু জোন’য়ের মানুষগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক গভীর এবং তারা এর মর্ম বোঝে। সামাজিক জীবনটাকে মধুর করে তোলা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি।

সেটা যে সকালেই হতে হবে তা নয়। সারাদিনই আশপাশের মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন, সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন। এতে জীবন দীর্ঘ যেমন হবে তেমনি হবে আনন্দময়।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন