তিনটি ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে যে কোনো বয়সেই বন্ধুত্ব গড়া সম্ভব।
Published : 15 Jun 2021, 10:07 PM
বয়স যত বাড়ে ততই পুরানো বন্ধুগুলো হারিয়ে যেতে থাকে। আর কর্মজীবনে এসে নতুন করে কারও বন্ধু হওয়ার সময় আর সদিচ্ছা দুটোতেই ঘাটতি দেখা যায়।
এরমধ্যে এসেছে মহামারী; লকডাউন। যে কারণে কর্মক্ষেত্রে যেকটা বন্ধু ছিল তাদের সঙ্গেও ক্রমেই হয়ত দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।
তবে পরিণত বয়সের গণ্ডিতে থেকেও নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যায়।
সাক্ষাৎ করা আর বন্ধুত্ব করা একই বিষয়
যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব বিশেষজ্ঞ, ‘লাইফ কোচ এবং ‘গিভ ইট আ রেস্ট: দ্য কেস ফর টাফ লাভ ফ্রেন্ডশিপস’য়ের রচয়িতা ডেনিয়েল বায়ার্ড জ্যাকসন বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা বিভিন্ন অ্যাপভিত্তিক ‘প্ল্যাটফর্ম’য়ে বন্ধু পাতানো যদি আপনার সঙ্গে মানানসই না হয়, তবে আপনার বন্ধুর বন্ধুদের সুযোগ দেওয়া উচিত।”
ওয়েলঅ্যান্ডগুড’ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “আমাদের সবারই একাধিক বন্ধু আছে, সেই বন্ধুদের একাধিক বন্ধু আছে যাদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও ভদ্রতার রক্ষার খাতিরে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় সম্পর্ক তো আছেই। কোনো এক অদ্ভুত কারণে অনেকেই তাদের বন্ধুর বন্ধুদের সঙ্গে বন্ধুত্বের এই মাত্রাটাকে বাড়াতে অনীহা পোষণ করেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘কল ইওর গার্লফ্রেন্ড’ নামক ‘পডকাস্ট’ শো’র আয়োজক অ্যামিনাটো সউ-এর ভাষায়, “নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মানুষগুলো দিকেও নজর দেওয়া উচিত। আমার ব্যক্তিগত জীবনের ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধু আমি ‘ইন্টারনেট’ থেকে পেয়েছি।”
বন্ধুত্ব হবে সহজ
কারও বন্ধু হওয়াটা কখনই কোনো কঠিন কাজ হওয়া উচিত নয়। তবে বাস্তব জীবনে কারও বন্ধু হতে চাওয়াটাও যেন প্রেমের সম্পর্ক গড়ার মতোই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এবিষয়ে জ্যাকসন বলেন, “যেকোনো সম্পর্ক যদি দীর্ঘদিন ঘরে রাখতে চান, টিকিয়ে রাখতে চান, তবে তা কখনই সহজ হয় না।”
তিনি আরও জানান, “২০০৯ সালে ‘জার্নাল অফ সোশাল অ্যান্ড পারসোনাল রিলেশনশিপস’য়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। এতে অংশগ্রহণকারীদের নিঃসঙ্গতাকে পর্যবেক্ষণ করা হয় দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে।”
দেখা যায়, যারা মনে করেন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা ভাগ্যের ব্যাপার তারা অত্যন্ত নিঃসঙ্গ মানুষ। অপরদিকে যারা মনে করেন বন্ধুত্ব গড়ার জন্য চেষ্টা প্রয়োজন তাদের নিঃসঙ্গতার মাত্রা কম।
কারণ এই মানুষগুলো পুরানো সম্পর্ক ধরে রাখতে এবং নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন, আত্মত্যাগ করেন।
জ্যাকসন আরও বলেন, “কেউ যদি মনে করে সম্পর্ক গড়ে তোলা সহজ, তবে সামান্য টানাপোড়ন দেখা দিলেই সে পুরানো সম্পর্ক থেকে পালিয়ে নতুন সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করবে। ফলে প্রতিবার তাকে আবার শুরু থেকে শুরু করতে হবে।”
একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকা জরুরি
“প্রতিটি মানুষের বন্ধুত্বের গভীরতাভেদে আলাদা স্তর থাকে। তবে মধ্যবয়সে এসে নতুন কাউকে ‘বেস্টফ্রেন্ড’ বানালে হয়ত হতাশাই মিলবে”, বলেন জ্যাকসন।
তিনি আরও বলেন, “এই ‘বেস্টফ্রেন্ড’য়ের কাছ থেকে প্রতিটি মানুষের কিছু আকাঙ্ক্ষা থাকে। এই চাওয়া কিংবা প্রাপ্তির প্রত্যাশাগুলো সে মুখে বলবে না ঠিকই, তবে মনে প্রাণে বিশ্বাস করবে, যেকোনো সময় ‘বেস্টফ্রেন্ড’কে পাশে পাওয়া যাবে, মনের কথা বলার জন্য সবসময় তাকে পাওয়া যাবে। আবার সেই ঘনিষ্ট বন্ধুটাকে সঠিক কথাগুলো বলতেও জানতে হবে।”
বিবাহিত জীবনে এই বিষয়গুলো সমস্যা বয়ে আনে। কারণ ওই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর জায়গাটা আমার, এমনটাই ধারণা থাকবে আপনার সঙ্গীর। এখন সেই জায়গায় অন্য কেউ থাকলে জীবনসঙ্গী নিজেকে অসহায় মনে করবেই।
আবার আপনার দীর্ঘদিনের বন্ধুটিও প্রত্যাশা করে যে আপনার ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’য়ের জায়গাটা তারই দখলে। দীর্ঘদিনের বন্ধু বলা হলেও এখানে শুধু সময় নয়, আরও অনেক বিষয় ভূমিকা রাখে।
যেমন ওই বন্ধুর সঙ্গে কতটা সময় একসঙ্গে পার করেছেন, কতটা স্মৃতি আছে তার সঙ্গে, জীবনের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় ওই বন্ধু সাক্ষী ছিল কিংবা সঙ্গী ছিল, একে অপরের জন্য কতটা ত্যাগ করেছেন।
মার্কিন লেখক ও ‘বিগ ফ্রেন্ডশিপ’ বইয়ের সহকারী লেখক অ্যান ফ্রিডম্যান বলেন, “প্রতিটি মানুষের জীবনে এমন একজন দীর্ঘদিনের পুরানো বন্ধু থাকা আবশ্যক। এখন যদি থাকে, আর তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’য়ে তকমা দেন তবে হয়ত বড় কিছু হারাবেন”, বলেন ফ্রিডম্যান।
আরও পড়ুন