মদ্যপান শুধু হতাশাই বাড়ায় না মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দেয়

অ্যালকোহল খারাপ। আর প্রতিদিন গ্রহণ করলে দেহে পড়ে বাজে প্রভাব।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2021, 12:35 PM
Updated : 12 June 2021, 12:35 PM

মদ্যপান যে খারাপ সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর প্রতিদিন এই ধরনের পানীয় পান করলে যকৃত, পাকস্থলীর বারোটা বাজার পাশাপাশি যে অস্থিরতা কাটাতে মদ্যপান চলছে সেটাও কমে না মোটোই।

অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়া ও হজমক্রিয়ায় সমস্যা

হজমক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার জন্য অন্ত্রের কিছু ব্যাক্টেরিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে প্রতি চুমুক মদ অন্ত্রের ওপর সরাসরি ও তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে।

‘অ্যালকোহল রিসার্চ’ নামক সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা মোতাবেক, মদ অন্ত্রের ওই স্বাস্থ্যকর ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে। আর প্রতিদিন মদ্যপান করলে পাকস্থলী ও হজমতন্ত্রের ভেতরের আবরণ ক্ষয় হতে থাকে এবং একসময় ছিদ্র হয়ে যায়। আর এই হজমতন্ত্রেই শরীর বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

তাই এখানে কোনো সমস্যা তৈরি হওয়া মানে সামান্যতেই অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কাও বাড়বে।

ওজন বাড়বে

ক্যালিফোর্নিয়ার সনদস্বীকৃত পুষ্টিবিদ কোরাল ডেবারেরা এডেলসন বলেন, “মদের সঙ্গে মানানসই খাবার আছে অসংখ্য। তবে শুধুই মদই যদি কেউ অতিরিক্ত পান করেন তবে তাতেই প্রচুর ক্যালরি যায় শরীরে।”

“শরীর প্রথমে ‘অ্যালকোহল’কে জ্বালানি উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে অন্যান্য খাবারের পুষ্টি উপাদান, চর্বি, ‘কার্বোহাইড্রেট’ ইত্যাদি সবই শরীরের চর্বি হিসেবে জমা হয়। মদ্যপান শরীরে জমা চর্বির খরচ যেমন কমায় তেমনি নতুন খাবারকে আরও চর্বি হিসেবে জমা করতে বড় ভূমিকা রাখে।” 

শরীরচর্চা হবে পণ্ডশ্রম

ভালো থাকতে ও ওজন কমাতে প্রতিদিন ব্যায়াম করছেন। পাশাপাশি যদি প্রতিদিন মদ্যপান করেন, তবে শরীরচর্চা কোনো কাজেই আসবে না।

এডেলসন বলেন, “পেশির ক্ষয়পূরণের হার কমিয়ে দেয় ‘অ্যালকোহল’। আর শরীরচর্চার মাধ্যমে পেশির ছেঁড়া আর জোড়া লাগার মাধ্যমেই পেশি গড়ে্ উঠে।”

‘পিএলওএস’ জার্নালে ২০১৪ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলে, “শরীরচর্চার চার ঘণ্টা পরেও যদি কেউ মদ্যপান করে, তবে বাড়তি প্রোটিন গ্রহণ করার পরও তার পেশি বৃদ্ধির গতি কমে যায়। তাই শরীরচর্চা আর মদ্যপানের মধ্যে সময়ের ব্যবধান যত বেশি হবে ততই ভালো।”

ঘুম ভালো হবে না

প্রতিদিন মদ্যপান করলে হৃদস্পন্দনের গতি হবে বেশি। একারণে শরীর পুরোপুরি শান্ত হওয়া হবে দুষ্কর আর সেখান থেকেই সৃষ্টি হবে ঘুমের সমস্যা।

রাতে আরামের ঘুমানোর জন্য সামান্য মদ্যপান করলে তাই দেখা যায় রাতে ঘুম ভেঙে যায়।

হার্ভার্ড হেল্থ’য়ের পরিসংখ্যান বলেন, “ইনসোমনিয়া’ বা অনিদ্রা রোগের প্রায় ১০ শতাংশের পেছনে শুধু মদ্যপানকে দায়ী করা যায়।”

যুক্তরাষ্ট্রের ‘মায়ো ক্লিনিক’য়ের তথ্য মতে, “শরীরের অন্যান্য পেশিকে শিথিল হতে বাধা দিলেও গলার পেশিকে শিথিল করে অ্যালকোহল। ফলে শ্বাস নেওয়ার পথ সরু হয়ে যায়। আর সেখান থেকেই ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’, নাক ডাকা ইত্যাদি সমস্যার সুত্রপাত হয় কারণ।”

যকৃতের ওপর চাপ বাড়ে

প্রতিদিন মদ্যপান করলে তা পরিশোধন করার জন্য যকৃতের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ঝড় বয়ে যায়। এই বাড়তি কাজের চাপ যকৃতকে দুর্বল করতে থাকে।

যারা প্রচুর মদ্যপান করেন তাদের প্রায় ১৫ শতাংশ আক্রান্ত হন ‘অ্যালকোহল রিলেটেড লিভার ডিজিজ (এআরএলডি)’য়ে।

হেল্থলাইন ডটকম আরও জানায় এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা শুরুতে কিছুই টের পান না। যখন চর্বি যকৃতের আশপাশে জমতে শুরু করে তখনই উপসর্গ দেখা দেওয়া শুরু হয়।

বমি, অবসাদ, পা ও পেট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি এই রোগের সাধারণ উপসর্গ। 

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি

মদ্যপানের কারণে শরীরে কী পরিমাণে চর্বি জমছে তা চট করে বোঝার উপায় থাকে না।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, “নিজের অজান্তই একজন অতিরিক্ত মদ্যপায়ীর হৃদযন্ত্রের চারপাশের রক্তনালীতে চর্বি জমতে থাকে। ‘ট্রাইগ্লিসেরাইড’ ধরনের চর্বিই এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয় উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর কোলেস্টেরল ‘এলডিএল’ আর নিম্নমাত্রার উপকারী কোলেস্টেরল ‘এইচডিএল’।”

সব মিলিয়েই হার্ট অ্যাটাক আর স্ট্রোকের ঝুঁকিটা বাড়ে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া

মদ্যপানের অভ্যাসটা যাদের প্রতিদিনের তারা হয়ত খেয়াল করছেন সামান্য কারণে শরীর রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। এর কারণ হল ‘অ্যালকোহল’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে ফেলে, বলছে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক।

নিউ ইয়র্কের ‘গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট’ ডা. নিকেত সোনপাল বলেন, “যে কোনো ধরনের জীবাণু সংক্রমণের শিকার হওয়া সম্ভাবনা বেড়ে যায় যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়, করোনাভাইরাস তো অবশ্যই।”

তাই মদ্যপান ত্যাগ করাই সবচাইতে ভালো।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন