দেহের মধ্যভাগ যদি স্ফিত দেখতে না চান তবে সকালের নাস্তা খেয়ে যান।
Published : 11 Jun 2021, 03:06 PM
আর সেই নাস্তায় থাকতে হবে প্রোটিন ও আঁশ সমৃদ্ধ খাবার।
ওজন কমাতে অনেকেই সকালের নাস্তা খাওয়া এড়িয়ে যান। তবে পেটের চর্বি কমাতে না খেয়ে নয় বরং সকালে খেতে হবে।
বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, যারা সকালে প্রোটিন ও আঁশ সমৃদ্ধ খাবার দিয়ে নাস্তা করেন তাদের শরীরে স্ফিতভাব কম। পাশাপাশি সারাদিন অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতাও কমায়।
এছাড়া ‘জার্নাল অফ নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, যারা সকালে নাস্তা করেন না তাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ ও ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ পেটের মেদের ওপরে প্রভাব ফেলে তাই, পেট সমতল রাখতে এগুলোর প্রতি মনযোগ দেওয়া জরুরি।
দীর্ঘমেয়াদের দিকে নজর দিন
যুক্তরাষট্রের ‘গ্রেইন ফুডস ফাউন্ডেশন’য়ের পুষ্টিবিদ ও ‘ফুডওয়েল স্ট্র্যাটেজি’য়ের প্রতিষ্ঠাতা স্ট্রেসি ক্রাভচিক বলেন, “পেট সমতল দেখানোর মতো কোনো জাদুকরী খাবার নেই।”
সকালের খাবার দীর্ঘমেয়াদিভাবে ওজন কমাতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও পরামর্শ দেন, “ভালো অভ্যাস ভবিষ্যতে ভালো ফলাফল নিয়ে আসে। তাই নাস্তায় আঁশ সমৃদ্ধ খাবার, চর্বিহীন প্রোটিন, ফল ও সবজি খাওয়া দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং বাড়তি খাবার গ্রহণের চাহিদা কমায়।”
পুষ্টিকর নাস্তা
সকালে পুষ্টিকর নাস্তা খাওয়া সারাদিন পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে।
‘ফাইনালি ফুল্লি, ফাইনালি স্লিম’ বইয়ের লেখক ও যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ লিসা ইয়ং বলেন, “সকালে পুষ্টিকর খাবার খেলে বেশি খাবার খাওয়ার দরকার নেই।”
পেট ভরা থাকায় দুপুরে খাবারের আগে বাড়তি নাস্তার প্রয়োজন হয় না।
“পুষ্টিকর নাস্তা খেতে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ও আঁশ-জাতীয় খাবার খান, এগুলো দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে ও শক্তি যোগায়। নাস্তায় ডিম, ওটমিল, ফল, বাদামের মাখন, শস্যের রুটি ও সবজি রাখা যেতে পারে।”
উদ্ভিজ্জ-ভারী নাস্তা
‘বিচ বডি সুপার ট্রেইনার’ অটাম ক্যালাব্রেস বিশ্বাস করেন, বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে সকালের নাস্তা গুরুত্বপূর্ণ।
‘লুজ ওয়েট লাইক ক্রেইজি ইভেন ইফ ইউ হ্যাভ অ্যা ক্রেইজি লাইফ’ বইয়ের এই লেখক আরও বলেন, “পেট সমতল রাখতে বিপাকক্রিয়া সচল থাকা জরুরি। আর সকালের নাস্তা একে উন্নত করতে সাহায্য করে।”
তিনি প্রতি দুএক ঘণ্টা পরপর খাওয়ার পরামর্শ দেন।
বলেন, “আমি দেখেছি চিকিৎসকরা নাস্তায় আঁশযুক্ত ভারী উদ্ভিজ্জ খাবার খেতে বলেন। এগুলো বিপাক ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে সাহায্য করে।”
তিনি আরও পরামর্শ দেন, “প্রক্রিয়াজাত খাবার– মাফিন, সিরিয়াল ও প্যানকেক ইত্যাদির বদলে সবজি, টফু, বাদাম ও বীজ খেতে পারেন। খাবারে উদ্ভিজ্জ উপাদান যোগ করা উপকারী।”
তাই বলে আলুভাজি অবশ্যই নয়।
সঠিক প্রোটিন গ্রহণ
কৃত্রিম প্রোটিন ট্যাবলেট বা পাউডার পানিতে গুলিয়ে খাওয়ার প্রচলন আমাদের দেশে খুব একটা না থাকলেও এই বিষয়ে সাবধান থাকা ভালো।
কারণ বিশ্বায়নের এই যুগে দেখা গেল ‘প্রোটিন পাউডার’ গ্রহণ করার জনপ্রিয়তা শুরু হয়ে গেছে এই দেশে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্পোর্টস মেডিসিন’য়ের নিবন্ধিত ‘ফিটনেস’ ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডেভিড সটার বলেন, “এসকল খাবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রক্রিয়াজাত। তাই পেট সমতল রাখতে চাইলে প্রাকৃতিক প্রোটিন গ্রহণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।”
ডিম সেদ্ধ বা মুরগির মাংস হতে পারে উৎকৃষ্ট।
নাস্তার আগে দুএক গ্লাস পানি পান
সকালে পানি পানের কোনো ক্ষতিকর দিক নেই। গবেষণায় দেখা যায়, পানি পান পেট ভরা রাখে এবং ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা কমায়।
মিষ্টি পানীয় গ্রহণ ও খাওয়ার ইচ্ছা কমাতেও সাহায্য করে। এছাড়া তৃষ্ণার অনুভূতি অনেকসময় মস্তিষ্কে ক্ষুধার ভুল সংবেদন প্রেরণ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্স’য়ের করা এক গবেষণা থেকে জানা যায়, “স্থূল ও প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যারা সকালে নাস্তার আগে এক আউন্স পানি পান করেন তাদের মধ্যে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ১৩ শতাংশ কম।”
সকালে পানি পান সারাদিন পেট ফোলাভাবও দূর করতে পারে।
আলাবামা ভিত্তিক পারিবারিক চিকিৎসক ও ‘ওপেন হার্ট’ বইয়ের লেখক ডা. আকিল তাহেরভাই বলেন, “প্রতিদিন সকালে কফি পানের আগে আমি দুই গ্লাস গরম পানি পান করি।”
কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে তিনি এই কাজ করে যাচ্ছেন, এবং উপকারও পেয়েছে।
“পানি পান করতে ভালো না লাগলে তাজা বাঙ্গি খেতে পারেন, এটা পানির ভালো উৎস” বলেন ইয়ং।
এতে আছে ভিটামি এ, সি, পটাসিয়াম ও আঁশ।
দিনে দুএক কাপ বাঙ্গি খাওয়া ভালো। আর এতে ক্যালরি কম থাকায় নিজের পছন্দ মতো বেশি খেলেও সমস্যা নেই।
আরও পড়ুন