রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনিয়ে খাওয়ার আগে সাবধান হন।
Published : 04 Jun 2021, 12:52 PM
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে রেস্তোরাঁর মুখরোচক খাবারগুলো অনেকেই ঘরে বানাতে শিখে নিয়েছেন এতদিনে। গ্রিল চিকেন, পাস্তা, বার-বি-কিউ ইত্যাদি খাবারের আয়োজন চলছে। আবার রেস্তোরাঁ থেকে খাবার ‘হোম ডেলিভারি’ হচ্ছে।
রেস্তোরাঁয় খাবারও এখন বেশিরভাগ সময় গরম অবস্থাতেই বাসায় পৌঁছে যায়। তবে প্রক্রিয়াজাত উপকরণ দিয়ে তৈরি এসব খাবার গরম আবহাওয়ার কারণে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় বলে দাবি করে ‘ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)’।
‘বেস্টলাইফ’ নামক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হলো বিস্তারিত।
বাসায় মজার কোনো খাবার রান্না হলে অধিকাংশ সময়ই তা বেঁচে যায় না। ঘরের সবাই একসঙ্গে বসে খাবার শেষ করে ফেলেন। তবে ঘরের সবাই একসঙ্গে বসতে গিয়ে অনেকসময় খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আবার পরিবারের কোনো সদস্য অনুপস্থিত থাকলে তার জন্য তুলে রাখা হয়।
এখানেই সমস্যা সৃষ্টি করে অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া।
ইউএসডিএ’য়ের মতে, “আবহাওয়ার তাপমাত্রা যখন ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়, তখন নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিছু খাবার।
‘পোল্ট্রি মুরগি, অন্যান্য মাংস, বিভিন্ন ধরনের সস, সালাদ, কেটে রাখা ফল ও সবজি ইত্যাদি এক ঘণ্টার বেশি সময় বাইরে ফেলে রাখা নিরাপদ নয়। কারণ এই সময়ের পর থেকে খাদ্যবাহী রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন জীবাণু সেই খাবারগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে দ্রুত। আবহাওয়া প্রচণ্ড গরম আর আর্দ্র হওয়ার কারণেই জীবাণু দ্রুত বংশ বিস্তারের সুযোগ পায়।
ইউএসডিএ’য়ের করা ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী, “যুক্তরাষ্ট্রের ৬৬ শতাংশ মানুষ তাদের রান্না করা খাবারগুলো গরম রাখার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেন না। অর্থাৎ চুলা থেকে নামানোর পর সেগুলো যত ঠাণ্ডা হতে থাকে ততই তাতে জীবাণু সংক্রমণ হতে থাকে। তাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে এমন রান্না করা খাবারের তাপমাত্রা খাওয়ার আগ পর্যন্ত ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ধরে রাখতে হবে।”
একই জরিপে এটাও জানা যায় যে, শীতল খাবার পরিবেশনের সময় প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ বরফ ব্যবহার করেন না। ঠাণ্ডা অবস্থায় গ্রহণ করা হবে এমন যেকোনো খাবার কিংবা পানীয়র অভ্যন্তরীন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট অর্থাৎ ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিংবা তার নিচে রাখতে হবে।
বেঁচে যাওয়া খাবার খাওয়ার ঝুঁকি
যত ভালোভাবেই সংরক্ষণ করা হোক না কেনো কিছু খাবার তারপরও একটা নির্দিষ্ট সময় পর আর না খাওয়াই নিরাপদ।
ইউএসডিএ’য়ের মতে, গরুর মাংস রান্নার দুই ঘণ্টার মধ্যেই তা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। তাপমাত্রা যদি ৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে হয় তবে এক ঘণ্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখা উচিত। তবে এভাবে সর্বোচ্চ তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত ওই মাংস খাওয়ার যোগ্য থাকবে।
মুরগির মাংসের জন্যও একই নিয়ম। এজন্য যেকোনো রান্না করা খাবার চারদিনের মধ্যেই খেয়ে শেষ করে ফেলতে হবে।
সংস্থাটি আরও জানায়, “জীবাণু দুই ধরনের হয়। একটি ধরন খাবারে পচন সৃষ্টি করে, অপর ধরন খাবারে খাদ্যবাহী রোগ সৃষ্টি করে। পচন সৃষ্টিকারী জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তন হয়। ফলে তা চোখে দেখা যায়, নাকে টের পাওয়া যায়।”
“খাদ্যবাহি রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু খাবারের স্বাদ কিংবা গন্ধে কোনো পরিবর্তন আনে ফলে তা বোঝা যায় না।”
নষ্ট হতে পারে পাস্তা
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ‘বায়োটেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ার’ আনুক্রিতি মাথুর বলেন, “রান্না করা পাস্তা ফ্রিজে রাখার পরেও কয়েকদিন পর নষ্ট হয়ে যায়।”
২০০৫ সালে ‘জার্নাল অফ ক্লিনিকাল বায়োলজি’তে আসা একটি ঘটনা উল্লেখ করেন এই বিশেষজ্ঞ।
“চারদিনের পুরানো পাস্তা খেয়ে একই পরিবারের পাঁচ শিশু অসুস্থ হয়, একজন মারাও যায়। এই পাস্তা রান্না হয় এক শুক্রবারে, শনিবারে তা বনভোজনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বাড়ি ফিরে তা ফ্রিজে রাখা হয়। পরে সোমবারে সেই পাস্তা খেয়ে ওই পাঁচ শিশু অসুস্থ হয়।”
এই ঘটনার পেছনে দায়ী ছিল ‘ব্যাসিলাস সেরেয়াস’ নামক ব্যাকটেরিয়া, যা স্নেহজাতীয় খাবারে বংশবিস্তার করে।
মাথুর বলেন, “শিশু, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল এরকম প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীর শরীরে প্রবেশ করলে মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে এই ব্যাক্টেরিয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্তরা কোনো চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে যায় বলে এই ব্যাক্টেরিয়ার ভয়াবহতা খবরে উঠে আসে না।”
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন