অতি ভোজন থামানোর পন্থা

চলমান লকডাউনে খাদ্যাভ্যাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2021, 03:59 PM
Updated : 30 May 2021, 03:59 PM

ফলে ওজন বেড়েছে আর তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হঠাৎ কোনো ‘ক্র্যাশ ডায়েট’ অনুসরণ না করে বুদ্ধিমানের কাজ হবে যে বদভ্যাসগুলো গড়ে উঠেছে সেগুলোকে দূর করা।

সম্প্রতি গুগল একটি জরিপ চালায়; যেটার তত্ত্বাবধানে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মনবিজ্ঞানী এবং ‘নেভার বিঞ্জ এগেইন’ বইয়ে লেখক গ্লেন লিভিংস্টোন।

জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকার নাগরিকরা গড় হিসেবে প্রতি সপ্তাহে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এই মহামারীর সময়ে প্রায় চার হাজার দুইশ ক্যালরি বেশি গ্রহণ করেছে।

এই জরিপের সূত্র ধরে ‘ইট দিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লিভিংস্টোন বলেন, “এদের মধ্যে অধিকাংশই ভাবছেন মহামারী শেষ হবে ‘ডায়েট’ করে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনবেন। তবে সমস্যা হল মানসিক অস্বস্তি কাটানোর সঙ্গে খাবারকে একবার জুড়ে দিয়ে যে শক্তিশালী মানসিক বন্ধন তারা তৈরি করেছেন সহজে ভাঙার নয়। করোনাভাইরাস মহামারী শেষ হওয়া পর আরও অনেকদিন তা স্থায়ী হবে।”

তাহলে অতিরিক্ত খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার উপায়? পদ্ধতি রয়েছে অনেক।

খাবারের মাত্রা বেঁধে নেওয়া

লিভিংস্টোন বলেন, “এখন থেকে আলুর চিপস এড়িয়ে চলব এমন প্রতিশ্রুতি করা এক বিষয়। আবার শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খালি আলুর চিপস খাব তবে এক প্যাকেটের বেশি না- দুই রকম প্রতিজ্ঞা কিন্তু এক নয়।”

প্রথম প্রতিশ্রুতিতে কোনো স্থির লক্ষ্য নেই, সীমাবদ্ধতাও নেই, তাই তা মেনে চলতে না পারার সম্ভাবনাই বেশি। আর প্রথম প্রতিশ্রুতির আরেকটি সমস্যা প্রতিবার আলুর চিপস খেতে মন চাইলেই মনের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। আর এক সময় আপনার প্রতিশ্রুতি ভাঙতে বাধ্য।

স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রাচুর্য

আলুর চিপস আর অন্যান্য মুখরোচক খাবার যখন ‘চিট ডে’য়ের জন্য তুলে রাখছেন, তখন পরের ধাপ হল ঘরে প্রচুর স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা।

লিভিংস্টোন’য়ের মতে, “এর কারণ হলো ঘরে পর্যাপ্ত খাবার নেই এমনটা মনে হওয়ার সম্ভাবনা না রাখা। আর মানুষ বুঝতে না পারলেও খাবারের অভাব অনুভব করাটা আসলে সবসময় খাবার নেই তা নয়, বরং পছন্দের মুখরোচক কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবারটা নেই। আর একবার তা মেনে নিয়ে বাইরে গেলেই দেখবেন কোনো না কোনো অস্বাস্থ্যকর তেলে ভাজা খাবারই খেয়েছেন।”

বেশি খাওয়ার কারণটা খুঁজে বের করা

লকডাউনের গৃহবন্দী জীবনে একাকিত্ব, মন খারাপ, মানসিক চাপ ইত্যাদি দূর করতেই কিন্তু খাবারের আশ্রয় নিচ্ছেন। খেতে খেতেই হয়ত ভাবছেন এরপর আর কি খাওয়া যায়। কারণ যতই খান না কেনো তা আপনার একাকিত্ব তো আর দূর করতে পারবে না।

লিভিংস্টোন বলছেন, “অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস মানুষের মানসিক শক্তিকেও দুর্বল করে ফেলে। সেসময় খাওয়ার ইচ্ছাগুলো হয়ে ওঠে অদম্য। মানুষ তার জিহ্বার দাসে পরিণত হয়। এভাবে একসময় তারা পুরোপুরি আসক্ত হয়ে যায়। তাই বেশি খাওয়ার এই অভ্যাস পরিবর্তন করার জন্য মহামারী শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে মস্ত বড় ভুল।”

পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ

কিছু খেতে মন চাইলেই যে তা পেট ভরে খেতে হবে তা কিন্তু নয়। ক্ষুধা আপনার পেটে নয়, মনে। কখন খাবেন, কতক্ষণ খাবেন, কতটুকু খাবেন তা কিন্তু আপনার নিয়ন্ত্রণে।

সামাজিকতায় অংশগ্রহণ

সারাদিন ঘরকুনো হয়ে পড়ে না থেকে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন। বিকাল কিংবা সন্ধ্যায় মাস্ক পরে হাঁটতে গিয়ে পাশের বাড়ির কারও সঙ্গে দেখা হয়ে গেছে। তাকে না দেখার ভান না করে বরং সামাজিক দূরত্ব রেখেই কিছুক্ষণ আলাপ করুন। মোবাইলে দূরের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে গল্প জমান।

লিভিংস্টোন বলেন, “সামাজিকতায় অংশগ্রহণ করলে একদিকে খাবার যেমন মনের আড়াল হবে, তেমনি মানসিকভাবেও আপনি খুশি থাকবেন। ভিডিও কল’য়ে কথা বলার সময় ক্যামেরা চালু করুন। কারণ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে বেড়ে যাওয়া ওজন যখন মানুষ দেখতে পাওয়ার সুযোগ থাকে না, তখন ওজন পরে কমাবো- একথা বলা খুবই সহজ হয়।”

আরও পড়ুন