সন্তানকে স্থূল বানিয়ে ফেলছেন না তো?

অজ্ঞতার কারণে সন্তানের ওজন অতিরিক্ত হতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2021, 02:59 PM
Updated : 27 May 2021, 02:59 PM

স্বাস্থ্যবান শিশু এক কথা। আর স্থূলতা অন্য বিষয়। শিশুর অতিরিক্ত ওজন বর্তমান সময়ে অন্যতম জনস্বাস্থ্য-বিষয়ক সমস্যা।

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে শারীরিক কারণেও শিশুদের মাঝে স্থূলতার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এই বিষয়ে ফেমিনা ডটইন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘ইন্ডিয়ান ডায়টেটিক অ্যাসোসিয়েশন’য়ের পুষ্টিবিদ এবং ‘মাইন্ড ইয়োর ফিটনেস’য়ের প্রতিষ্ঠাতা শ্বেতা ভাটিয়ার দেওয়া তথ্যানুসারে জানানো হল বিস্তারিত।

শৈশবে প্রারম্ভেই শুরু হয় স্থূলতার সমস্যা

শিশুকে পর্যাপ্ত বুকের দুধ পান করালে স্থূলতা থেকে রক্ষা করে। প্রক্রিয়াজাত খাবার দেওয়া হয়- এমন শিশুদের মাঝে স্থূলতার সমস্যা দেখা দেয়।

প্রথম আট মাস শিশুর ওজন পর্যবেক্ষণ করে দেখা উচিত তা ঠিক আছে না সাধারণের তুলনায় বেশি। যদি চার্টের সঙ্গে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় তাহলে শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো শুরু করতে হবে। আর মিষ্টি-জাতীয় খাবার- মধু, চিনি, ও জুস ইত্যাদি বাদ দিতে হবে।  

ওজন বৃদ্ধির হার প্রথম এক বছরে ধীর হতে থাকে। চার থেকে ছয় বছরের মধ্যে চর্বি কমতে থাকে। বয়ঃসন্ধির কাছাকাছি পৌঁছানোর সময় এই ওজন আবার বৃদ্ধি পেতে পারে, যা এড়ানো উচিত।

কৈশোরে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে পেশি গঠনের হার কম থাকে ও চর্বি  জমাট বাঁধার হার বেশি থাকে। এই সময়ের হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি প্রাপ্ত বয়সেও স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।

তাছাড়া এই বাড়তি ওজন নারীদের মাঝে দ্রুত ঋতুস্রাব ও হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে।

শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য করণীয়

শিশুকে সুস্থ রাখতে নিজেকে তার কাছে ‘রোল মডেল’ হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি।

অনুসরণীয় হওয়া: নিজের খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা ও খাবার শিশুর উপরেও প্রভাব ফেলে। বাড়ির সবাই স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছে কিনা, শরীরচর্চা করছে কিনা ইত্যাদির প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। শিশুর সঙ্গে বসে নানা রকমের খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন, এটা দেখে সে শিখতে পারবে।

সবজি খাওয়ায় উৎসাহ দেওয়া: ভাজাপোড়া নাস্তা খাওয়ার পরিবর্তে সবজি সেদ্ধ, দইয়ের সঙ্গে ফল, বাদাম ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন ও শিশুকেও শিখান।

শরীরচর্চা: প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ মিনিট শরীরচর্চা করুন। এটা পেশি সুস্থ ও সুদৃঢ় রাখে। অভিভাবকের শরীরচর্চার অভ্যাস শিশুর মাঝেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল: শিশুরা বাবা-মায়ের স্বাস্থ্য সচেতনতার দিকেও মনোযোগ রাখে।

বাবা-মা স্বাস্থ্য সচেতন হলে সন্তানও তা অনুসরণ করবে। অধিকাংশ বাবা মা সন্তানের বাড়তি ওজনের দিকে খেয়াল রাখে না।

অনেকেই ‘স্থূল’ বিষয়টাকে প্রথম অবস্থায় ‘কিউট’, ‘স্বাস্থ্য ভালো’ ইত্যাদি বলে গুরুত্ব নেয় না। পরে যা শিশুদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই এই ধ্যান ধারণা থেকে বের হয়ে আসা প্রয়োজন। 

পুষ্টিকর খাবার তৈরি: চাকুরিজীবী অভিভাবকরা চক্রাকারে পুষ্টিকর খাবারের মেনু পরিকল্পনা করতে পারেন। নিজে রান্না করলে বা সহকারী রান্না করলে তাকে এই বিষয়ে ঠিক মতো নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।

খাওয়ার সময় শিশুকে খাবারে গুণাগুণ সম্পর্কে জানালে সেই খাবারের প্রতি তার আগ্রহ বাড়াতে সক্ষম।

শিশুকে যতটা সম্ভব মিষ্টি-জাতীয় বাড়তি খাবার থেকে বিরত রাখা উচিত।

সব খাবার খাওয়ার জন্য শিশুকে জোর না করা

শিশুকে জোর করে সব খাবার খাওয়ানো ঠিক না। এতে তার খাবারের প্রতি আগ্রহ নষ্ট হয়। এছাড়াও খাওয়ার সময় মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায় এমন কোনো কাজ যেমন- গেইম খেলা বা টেলিভিশন দেখা থেকে বিরত রাখতে হবে। 

মেনুর দিকে খেয়াল রাখা

শিশু তার খাবার থেকে কতটা কার্বোহাইড্রেইট পাচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও  সে যেন পর্যাপ্ত ভিটামিন, খনিজ ও উন্নত প্রোটিন পায় সেদিকেও নজর দেওয়া জরুরি। এটা তার বিকাশে ভূমিকা রাখবে। 

পর্যাপ্ত ঘুম

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ক্ষুধার হরমোন বেড়ে যায়। ফলে ভাজাপোড়া খাওয়ার ঝোঁক বাড়ে। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম (মোবাইল, টেলিভিশন, কম্পিউটার) ঘুম চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়।

‘দ্যা আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স’য়ের বিশেষজ্ঞরা শিশুদের দুই ঘন্টার কম স্ক্রিন টাইম নির্ধান করে দেন। এতে তাদের ঘুমের চক্র ঠিক থাকে।

শিশুর মানসিক যত্ন

সাত বছরের কম বয়সের স্থূলকায় শিশুর মাঝেও হতাশা দেখা দিতে পারে। এমন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রয়োজন হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তাকে দূরে রাখতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য অনেক সময় অতিভোজন ও বাড়তি ওজনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।  

নিয়মিত স্বাস্থ্য চিকিৎসা

‘দ্যা আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন’ পরামর্শ দেয়, স্থূলকায় শিশু ও কিশোরদের মাঝে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে। যদি তাদের পারিবারিক ইতিহাসে, গর্ভাবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তবে সাবধান হওয়া উচিত। 

শৈশবে শিশুর স্থূলতার সমস্যা সমাধান করতে শিশু বিশেষজ্ঞ, পুষ্টিবিদ, শরীরচর্চাবীদ ও মনরোগ-বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এতে শিশু সুস্থ থাকবে ও স্বাভাবিক মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে।

আরও পড়ুন