রাতের সময়মতো শুয়ে পড়ার পরও গভীর রাত পর্যন্ত এপাশ ওপাশ করা আর পরদিন সকালে ঘুমের অভাবে খিটখিটে মেজাজ নিয়ে দিন শুরু করার অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল স্লিপ ইন্সটিটিউট’য়ের মতে, “১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সের মানুষের সুস্থ থাকার জন্য দৈনিক সাত থেকে নয় ঘণ্টা নির্ভেজাল ঘুম দরকার।”
তবে অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরেই ঘুমের ঘাটতি থেকে যায় নানান কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি)’ সতর্ক করে বলছে, “ঘুমের ঘাটতি থেকে হতাশাগ্রস্ততা, স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদিসহ বিভিন্ন দূরারোগ্য ব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।”
এছাড়াও চোখে ঘুম থাকার কারণে কাজে ভুল, সড়ক দুর্ঘটনা, মেজাজ গরম ইত্যাদি সমস্যা তো প্রায়শই হচ্ছে।
‘মেডিকেল এক্সপ্রেস’ তাদের এক প্রতিবেদনে পেনসালভানিয়ার ‘পেন স্টেট কলেজ অফ মেডিসিন’য়ের গবেষকদের দাবি অনুসারে জানায়, একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ যদি অনিদ্রায় ভোগে এবং দৈনিক ছয় ঘণ্টার কম ঘুমায় তবে তার জ্ঞানীয় ক্ষমতা কমতে থাকে দ্রুতগতিতে। অনিদ্রায় ভোগা কোনো রোগীর ‘ডিমেনশিয়া’ বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হওয়া সম্ভাবনা বেশি তা বুঝতে চিকিৎসকদের সাহায্য করবে এই গবেষণা।”
ঘুমাতে গিয়ে ঘুম আসে না এমন সমস্যায় ভোগেন নাই এমন মানুষ খুব কমই আছেন।
বৈদ্যুতিক পর্দার ব্যবহার কমানো, ঘুমানো আগে ‘ক্যাফেইন’ গ্রহণ না করা, শোবার ঘরে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি ইত্যাদি নানান উপায় অনুসরণ করার পরেও যদি ঘুম না আসে তবে বিশেষজ্ঞের কৌশল কাজে লাগাতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘বেনসন হেনরি ইনস্টিটিউট মাইন্ড’য়ের ডা. হার্বার্ট বেনসন বলছেন, “দিনের যেকোনো একটা সময় বেছে নিন আর মাথা সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে শুধু ওই মুহূর্তটা অনুভব করুন। এতে শরীর বিশ্রাম নেওয়ার সময় এসেছে এমন ইঙ্গিত পাবে।”
ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও পরামর্শ দেন, “বিষয়টা একদিনে হবে না। যত মন ও শরীরকে এই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করতে পারবেন ততই সহজে ঘুমিয়ে পড়তে পারবেন। এখানে মূল বিষয় হল শরীরকে বিশ্রাম নিতে হবে এমনটা বোঝার ইঙ্গিতটায় অভ্যস্ত করা।”
কাজটি করার পন্থা
তো কীভাবে করবেন এই কাজটি। ডা. বেনসন সেটাও জানিয়েছেন।
প্রথমেই অনুসরণ করতে হবে ‘৪-৭-৮’ পদ্ধতিতে নিঃশ্বাসের ব্যায়াম।
প্রথমে শ্বাস টানতে হবে নাক দিয়ে আর ছাড়তে হবে মুখ দিয়ে।
শুরুতে মুখ বন্ধ করে এক থেকে চার গোনা পর্যন্ত নাক দিয়ে শ্বাস টানতে হবে। এবার এক থেকে সাত গোনা পর্যন্ত দম আটকে রাখতে হবে।
তারপর আট পর্যন্ত গোনা অবস্থায় শ্বাস ছাড়তে হবে মুখ দিয়ে। চোখ বন্ধ করে তিন বার এই ‘ব্রিদিং এক্সারসাইজ’ করতে হবে।
এই পদ্ধতির প্রবর্তকের নাম ডা. অ্যান্ড্রু ওয়েইল। তিনি একে স্নায়ুতন্ত্রের জৈবিক ‘ট্রাঙ্কুলাইজার’ হিসেবে আখ্যায়িক করেছেন।
তার মতে, “স্নায়ুতন্ত্রকে যদি শান্ত করা যায় তবেই দ্রুত এবং সহজে ঘুমিয়ে পড়া সম্ভব হবে।”
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন