ঈদের দিনে টেবিল সাজান আরবীয় খাবারে

পারস্যের পোলাও কিংবা লেবাননের মিষ্টান্নের স্বাদ ঘরেই নিতে পারেন নিজের হাতে তৈরি খাবারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2021, 07:20 AM
Updated : 10 May 2021, 04:30 PM

বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত জেদ্দা প্রবাসী রন্ধনশিল্পী তাসনুভা মাহমুদ নওরিনের রেসিপির মিশ্রণ নিয়েই আজকের এই আয়োজন।

বিরিয়ানি ধাঁচের সুস্বাদু খাবার খেবসা

খেবসা মসলা তৈরি:
আস্ত ধনিয়া ১ টেবিল-চামচ। গোলমরিচ আধা চা-চামচ। এলাচ ৫টি। লবঙ্গ ৫টি। জিরা ১ চা-চামচ। দারুচিনি ১ টুকরা। জায়ফল অর্ধেক। তেজপাতা ১টি। হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ।

সব মসলা তাওয়ায় এক মিনিটের মতো টেলে নিয়ে ব্লেন্ডারে নিয়ে সঙ্গে হলুদগুঁড়া দিয়ে ব্লেন্ড করে বাতাস-রোধক বাক্সে ভরে রেখে দিন।

উপকরণ: মুরগির বড় টুকরা ৫/৬টি। বাসমতী চাল ৩ কাপ (চাল ধুয়ে ভিজিয়ে রাখা)। পেঁয়াজকুচি ১ কাপ। রসুনবাটা ১ টেবিল-চামচ। আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ। লবণ স্বাদ মতো। তেল ১/৩ কাপ। খেবসা মসলা ১ টেবিল-চামচ। টমেটোকুচি ১ কাপ। টমেটো পেস্ট ৩ টেবিল-চামচ। গাজরকুচি ১ কাপ। পানি ৬ কাপ। শুকনা লেবু ১টি। কাজুবাদাম এক মুঠ। কিশমিশ এক মুঠ।

পদ্ধতি: কড়াইতে তেল গরম করে কিশমিশ ও বাদাম হালকা ভেজে তুলে রাখুন।  বাকি তেলে পেঁয়াজ নরম করে ভেজে টুকরা করে রাখা মুরগির মাংস ও পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে হালকা ভাজুন। তারপর টমেটো-কুচি, খেবসা মসলা, আদা ও রসুন বাটা এবং টমেটো পেস্ট দিয়ে কষিয়ে নিন।

মসলা থেকে তেল ছেড়ে আসলে মাংস সিদ্ধ হওয়ার জন্য ছয় কাপ থেকে এক থেকে দুই কাপ পানি দিয়ে বাকিটা চালের জন্য রেখে দিন। সিদ্ধ হয়ে আসলে মাংসগুলো তুলে বেইকিং প্যানে নিয়ে উপরে হালকা তেল ব্রাশ করে ইলেকট্রিক ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ১০/১৫ মিনিট হালকা ঝলসে নিন।

ওভেন না থাকলে চুলায় প্যানে তেল দিয়ে ঝলসে নিলেও হবে।

অন্যদিকে মাংস তুলে নেওয়া পানিতে ভিজিয়ে রাখা চাল, শুকনা লেবু, কিছু কিশমিশ, বাদাম ও গাজরকুচি দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে বাকি পানি ঢেলে দিন। দরকার হলে লবণ এখন দিয়ে দিতে পারেন। তারপর ঢেকে দিয়ে রান্না করুন।

চাল হয়ে আসলে নামিয়ে বাকি কিশমিশ, বাদাম ও পোড়া মুরগির মাংসগুলো দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন দারুণ মজার আরবীয় খানা খেবসা।

সঙ্গে দিতে পারেন খেবসার সালাদ। এজন্য লাগবে- বড় টমেটো ২টি। কাঁচামরিচ ৩টি বা ঝাল বুঝে। ধনেপাতা-কুচি পরিমাণ মতো। পেঁয়াজ ১টি।

টমেটোর ভেতর থেকে দানাগুলো ফেলে কিউব করে কেটে নিন। পেঁয়াজ বড় করে টুকরা করুন। কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা বড় আকারে কেটে নিন। এবার লবণ দিয়ে সব টুকরা ব্লেন্ডারে হালকা ভাবে মিশিয়ে নিন। তবে একদম মিহি করা যাবে না। ব্যাস তৈরি আপনার অ্যারাবিয়ান সালাদ।

মাকলুবা, বিরিয়ানির মতোই খেতে

অ্যারাবিয়ান মসলার জন্য লাগবে:
আস্ত ধনে আধা টেবিল-চামচ। আস্ত জিরা আধা টেবিল-চামচ। লবঙ্গ আধা চা-চামচ। এলাচ ১৪-১৫টি। দারুচিনি এক টুকরা। গোলমরিচ আস্ত আধা টেবিল-চামচ। শুকনা-লেবু ২টি।

মাকলুবা’র জন্য লাগবে: মুরগি বা গরুর মাংস ৭০০ গ্রাম। পেঁয়াজকুচি ১ কাপ। আস্ত রসুন ৫-৬টি। গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ। লবণ স্বাদ মতো। হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ। পানি ৫-৬ কাপ। শুকনা-লেবু ১টি। চাল ৩ কাপ। তেল ১/৪ কাপ বা পরিমাণ মতো।

টমেটো সসের জন্য লাগবে: টমেটো পেস্ট ২ টেবিল-চামচ। লবণ স্বাদ মতো। তেল ১ টেবিল-চামচ। অ্যারাবিয়ান মসলা ১/৮ চা-চামচ। পানি ২-৩ টেবিল-চামচ।

আরও লাগবে: বিভিন্ন সবজি। যেমন- বেগুন ১টি বড় গোল করে কাটা। আলু ১টি গোল করে কাটা। টমেটো ১টি গোল করে কাটা। পেঁয়াজ ১টি গোল করে কাটা। ক্যাপসিকাম ১টি কিউব করে কাটা

বেগুন ও আলুতে সামান্য লবণ মিশিয়ে করে তেলে ভেজে তুলে রাখুন। টমেটো, পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম হালকা ভেজে তুলে রাখুন। ফুলকপিও দেওয়া যাবে।

বেশি নরম হয়ে যাওয়া সবজি দেওয়া যাবে না।

পদ্ধতি: প্রথমে অ্যারাবিয়ান মসলা তৈরি করে নিন।

সব মসলা একসঙ্গে নিয়ে তাওয়ায় হালকা গরম করে ব্লেন্ড করুন। এরপর চালনি দিয়ে চেলে রেখে দিন বায়ুরোধক বক্সে। যে কোনো অ্যারাবিয়ান রান্নায় ব্যবহার করতে পারবেন।

তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজ ও আস্ত রসুন ভেজে নিন। এরপর মুরগির মাংস দিয়ে অ্যারাবিয়ান মসলা থেকে ১ টেবিল-চামচ এবং আধা চা-চামচ গোলমরিচ-গুঁড়া দিন। সঙ্গে পরিমাণ মতো লবণ ও হলুদগুঁড়া দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে শুকনা-লেবু ও তিন কাপ পানি দিন।

সিদ্ধ হয়ে গেলে মাংস তুলে নিন। এই মুরগির মাংসের পানিতে চাল ধুয়ে ঢেলে বাকি ৩ কাপ পানি যোগ করুন বা চাল অনুয়ায়ী পানি দিন। দরকার পড়লে লবণ দিতে পারেন।

চাল একদম হয়ে আসলে এখান থেকে অর্ধেক চাল তুলে রাখুন।

অন্য প্যানে ১ টেবিল-চামচ তেল গরম করে টমেটো পেস্ট, অ্যারাবিয়ান মসলা, লবণ ও পানি দিয়ে মিশিয়ে টমেটো সসের মতো তৈরি করে তুলে রাখা ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন সস যেন ঘন হয়।

এবার এমন একটা হাঁড়ি নিন যেটা থেকে মাকলুবা উল্টা করে ঢেলে নিতে সুবিধা হবে।

প্রথমে হাঁড়িতে একটু তেল ব্রাশ করে সারি সারি বেগুন, আলু, টমেটো, ক্যাপ্সিকাম বিছিয়ে, উপরে মুরগির মাংস ও টমেটো সস মেশানো ভাত মিশিয়ে দিন। তারপর হালকা হাতে বা গ্লাস দিয়ে চেপে সমান করে দিন।

এবার বাকি সবজি ও মুরগির মাংস বিছিয়ে বাকি টমেটো সস ছাড়া ভাত বিছিয়ে এ্কই ভাবে চেপে সমান করে উপরে হালকা হাতে পানি ছিটিয়ে দিন।

চুলায় কম আঁচে ১০-১৫ মিনিট দমে রাখুন। ব্যাস মাকলুবা তৈরি।

এবার বড় থালায় হাঁড়ি ভালো মতো ধরে আস্তে করে উল্টিয়ে দিন। তারপর গরম গরম পরিবেশন করুন।

মনে রাখতে হবে: মুরগির মাংস হলে অ্যারাবিয়ান মসলা কম দেবেন। গরুর বা খাসির মাংস হলে দুতিন টেবিল-চামচ দেওয়া যাবে। এই মসলার ঘ্রাণ খুব কড়া। তাই বেশি দিয়ে দিলে পুরো খাবার তিতা হয়ে যাবে।

পারস্যের জনপ্রিয় বিরিয়ানি লুবিয়া পোলাও

উপকরণ:
বাসমতি চাল ২ কাপ। খাসী বা গরুর মাংস ছোট করে কাটা অথবা কিমা ৪০০ গ্রাম। তেল ৩,৪ টেবিল-চামচ। লবণ স্বাদ মতো। পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ। আদা ও রসুন বাটা ১ চা-চামচ। পাপরিকা পাউডার ১ চা-চামচ। হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ। ধনে গুঁড়া ১ চা-চামচ। গোল মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ। গরম মসলা ১/৪ চা-চামচ। টমেটো টুকরা করে কাটা ১ কাপ। টমেটো পেস্ট ১ টেবিল-চামচ। বরবটি টুকরা করে কাটা ৪০০ গ্রাম। অথবা আলু টুকরা করে কাটা ২ কাপ।

পদ্ধতি: প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ ভেজে মাংস দিন। একে একে সব মসলা, টমেটো টুকরা ও পেস্ট দিয়ে মাংস কষিয়ে রাঁধুন। পানি দিয়ে মাংস আধা সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সিদ্ধ হয়ে আসলে বরবটি দিয়ে দিন।

মাখা মাখা হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করে দিন।

চাল ও লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে তুলে নিন। প্যানের নিচে আলু ভেজে বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর রান্না ভাত দিয়ে ওপরে রান্না মাংস দিয়ে স্তর করুন।

হাঁড়ির ঢাকনা কোনো সুতির কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দিন যেন ভাপের পানি চালে পড়ে চাল নরম হয়ে না যায়। দমে রাখুন ১০-১৫ মিনিট।

বিরিয়ানির মতো খাবার মান্দি

মান্দি মসলা তৈরি:
১ টেবিল-চামচ আস্ত ধনে। ১ টুকরা দারচিনি। ১ টেবিল-চামচ আস্ত জিরা। ১ চা-চামচ লং। ১ টেবিল-চামচ এলাচ। ১টি শুকনা লেবু। ১ চা-চামচ হলুদ গুঁড়া।

গোটা মসলাগুলো হালকা টেলে নিয়ে শুকনা লেবু-সহ ব্লেন্ড করে নিন। এরপর হলুদ-গুঁড়া মিশিয়ে নিলেই মান্দি মসলা তৈরি।

মান্দির চিকেনের জন্য যা যা লাগবে

মুরগি ৫০০ গ্রামের দুই ভাগ করে নেওয়া। হলুদ গুঁড়া সামান্য। লবণ স্বাদ মতো। জাফরান বা খাবার রং সামান্য। মান্দি মসলা পরিমাণ মতো।।

সবকিছু দিয়ে মুরগির মাংস মেরিনেইট করে রেখে দিন এক ঘণ্টা।

চাল রান্নার জন্য যা যা লাগবে

বাসমতি চাল ২ কাপ। তেল ১/৪ কাপ। পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ। লবণ স্বাদ মতো। মান্দি মসলা দুতিন টেবিল-চামচ। লং তিন-চারটি। এলাচ তিন-চারটি। দারুচিনি ২ টুকরা। কিশমিশ ও বাদাম পরিমাণ মতো।

পদ্ধতি

মেরিনেইট করা মুরগি কোনো স্টিমারের ওপর বসিয়ে স্টিম করুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এরমধ্যে মাংস আধা সিদ্ধ হয়ে আসবে। নিচে জমে থাকা মাংসের পানিটি রেখে দিন চালের জন্য।

তেল গরম হলে পেঁয়াজ ভেজে গোটা গরম মসলা, লবণ, মান্দি মসলা ও চাল দিয়ে মিনিট খানিক ভেজে সিদ্ধ মাংসের পানি আর চাল অনুযায়ী পানি দিয়ে চাল আধা রান্না করে নিন।

চালের পানি শুকিয়ে আসলে ওভেন প্রুফ কোনো প্যান বা হাঁড়িতে চাল বিছিয়ে দিয়ে ওপরে কিশমিশ, বাদাম ও মুরগির মাংস বিছিয়ে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে ঢেকে দিন।

এবার ইলেক্ট্রিক ওভেনে ১৮০ ডি.গ্রি. সেলসিয়াসে সম্পূর্ণ রান্না হওয়া পর্যন্ত বেইকড করুন।

চুলায় চাল কতটা সিদ্ধ হল সেটার ওপর নির্ভর করবে ওভেনে কতক্ষণ রান্না করতে হবে। চাল সিদ্ধ হওয়ার ধরন ও মাংস সিদ্ধ হওয়ার সময় হিসেব করে সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ মিনিট বা ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লাগতে পারে। তাই এই ক্ষেত্রে আন্দাজটা বুঝে নিতে হবে।

চাইলে রান্না হয়ে আসার পর মাংস কিছুক্ষণ রেখে উপরে বাদামি বর্ণ করে নিতে পারেন।

নামিয়ে কয়লা গরম করে কয়লার ধোঁয়া দিয়ে মিনিট খানিক রেখে পরিবেশন করুন।

মিষ্টান্ন লেবানিজ কাতাইফ

প্যানকেকের জন্য যা লাগবে:
ময়দা আধা কাপ। সুজি আধা কাপ। ইস্ট আধা চা-চামচ। বেইকিং পাউডার ১/৪ চা-চামচ। চিনি ১ টেবিল-চামচ। লবণ ১/৮ চা-চামচ। পানি পরিমাণ মতো।

পদ্ধতি: ময়দা ও সুজির সঙ্গে সব মিশিয়ে পানি দিয়ে প্যানকেকের ব্যাটার বানিয়ে রেখে দিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট। তারপর আবার ভালো মতো ফেটে নিন।

নন-স্টিক প্যান গরম করে প্যান কেকের ব্যাটার দিয়ে প্যান কেক বানিয়ে নিন।

প্যান কেকের ওপর বুদ বুদ ছিদ্র হবে। এই প্যানকেক অপর পাশ উল্টোনোর প্রয়োজন নেই। নামিয়ে একপাশ ধরে চেপে কোনের মতো আকার দিন।

ক্রিমের জন্য: তরল দুধ ১ কাপ। কর্ন ফ্লাওয়ার ২,৩ টেবিল-চামচ। চিনি ৩ টেবিল-চামচ বা স্বাদ মতো।

পদ্ধতি: দুধের সঙ্গে চিনি, কর্ন ফ্লাওয়ার মিশিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। ঘন হয়ে আসলে নামিয়ে ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করুন।

পরিবেশনের আগে প্যানকেকের ভেতর ক্রিম দিয়ে ওপরে পেস্তাবাদাম দিয়ে সাজিয়ে  পরিবেশন করুন।

মনে রাখতে হবে: ব্যাটার যদি কিছুক্ষণ রাখার পর বেশি ঘন মনে হয় সামান্য পানি দিয়ে আবার পাতলা করে নেবেন।