ক্ষুধার্ত অবস্থায় যেসব কাজ করা ঠিক না

পেট খালি অবস্থায় কেনাকাটা করতে গেলে বেশি খরচ করে ফেলতে পারেন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2021, 03:28 PM
Updated : 6 May 2021, 03:28 PM

শরীরের জ্বালানির অভাব হলে মেজাজ ও স্বাস্থ্যে ওপর প্রভাব পড়েই। শরীরে ম্যাজম্যাজে ভাব, ক্লান্তি, কোনো কাজ করতে ইচ্ছা না হওয়া, খিটখিটে মেজাজ- এরকম অনুভূতির শিকার ক্ষুধার্ত অবস্থায় প্রায় সকলেই হয়ে থাকেন।

তাই খালি পেটে কিছু কাজ না করাই ভালো। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণার ভিত্তিতে জানানো হল বিস্তারিত।

কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া: নেদারলান্ড’য়ের উট্রেক্ট ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা বলছেন, “ক্ষুধার্ত থাকলে কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করার আগ্রহ কমে যায়, ফলে হুট করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে মানুষ। আর সেই সিদ্ধান্তগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরে আফসোসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”

এর কারণ হল ‘গ্রেলিন’ নামক ক্ষুধার হরমোন, যা তৈরি হয় অন্ত্রে। এই হরমোন মস্তিষ্কের বিচার বুদ্ধির ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে।

কেনাকাটা না করা: অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে পয়সা অপচয় করতে না চাইলে বাজার করার আগে অবশ্যই কিছু খেয়ে নিতে হবে। ক্ষুধার্ত অবস্থায় কেনাকাটা করতে গেলে মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনে। এরমধ্যে অস্বাস্থ্যকর কিন্তু মুখরোচক খাবারের আধিক্যও চোখে পড়ে।

‘ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা’র কার্লসন স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট’য়ের ৫টি গবেষণার মধ্যে একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ৮১ জন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা বেশি ক্ষুধার্ত ছিলেন তারা ৬৪ শতাংশ অর্থ বেশি খরচ করেছেন।

ঝগড়া না করা: এখানেও দায়ী ‘গ্রেলিন’ হরমন।

যতই মেজাজ খারাপ হোক সঙ্গীর ওপর রাগারাগি করার আগেই কিছু খেয়ে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

কারণ ‘ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি’র গবেষকদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে শুধু ক্ষুধার্ত থাকলেই নয়, অতিরিক্ত রাগের অনুভূতিও থেকেও ‘গ্রেলিন’ নিঃসরণ বাড়ে। আর এই হরমন যে মস্তিষ্কের বিচার-বুদ্ধির ক্ষমতা দমিয়ে রাখে তা আগেই বলা হয়েছে।       

তাই কিছু খেয়ে শান্ত মেজাজে কথাবার্তা চালাতে হবে। ক্ষুধার্ত অবস্থায় মানুষ স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে পারেনা। তাই এসময় ঝগড়া বাঁধলে এমন কিছু বেফাঁস কথা বলে ফেলতে পারেন যা সম্পর্কে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

শরীরচর্চা না করা: অনেকেই মনে করেন খালি পেটে ব্যায়াম করলে আরও বেশি চর্বি খরচ হবে। তবে শরীরে যখন জ্বালানির অভাব তখন শরীরের ওপর বাড়তি ধকল দেওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা।

এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফিটনেস’ বিশেষজ্ঞ জেন জার্লিং, তার ‘ব্রেকিং দ্য চেইন অফ ওবিসিটি: ১০৭ টুলস’য়ে লিখেছেন, “শরীর জমিয়ে রাখা চর্বি খরচ করতে চায় না। বরং সহজে পাওয়া এমন জায়গা থেকে শক্তির যোগান দিতে চেষ্টা করে। তাই খালি পেটে ব্যায়াম করার ফলে পেশির কোষ থেকে শর্করা ভেঙে শক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে শরীর। যে কারণে পেশির গঠনের পরিবর্তে ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।”

তাই খালি পেটে ব্যায়াম করার জন্য পর্যাপ্ত শক্তিও পাওয়া যায় না। এজন্য শরীরচর্চার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে হালকা হজমযোগ্য কিছু খেয়ে নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

ঝাল খাবার থেকে দূরে থাকা: খালি পেটে ঝাল খাবার খেলে পাকস্থলির ভেতর উপরের আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দেখা দিতে পারে পেটের গোলমাল।

হাফিংটন পোস্টে এই বিষয়ের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ল্যাঙগন মেডিকল সেন্টার’য়ের পাকস্থলী ও অন্ত্র বিশেষজ্ঞ ডা. লিসা গানঝু বলেন, “খালি পেটে ঝাল খাবার খাওয়া পেটের সমস্যা বাড়ায়, পাশাপাশি দেখা দিতে পারে পাকস্থলির প্রদাহ।”

অনেকক্ষণ অভুক্ত থাকার পর হালকা পুষ্টিকর কোনো খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এক্ষেত্রে দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে দই খুবই ভালো। যা পেটের ভেতর আলাদা একটা আস্তর তৈরি করে। সমস্যা না থাকলে দুধও পান করা যেতে পারে।

আর পেটে কিছু পড়ার পরেই মসলাজাতীয় বা ঝাল খাবার খাওয়া পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

আরও পড়ুন: