অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন: রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা ও লক্ষণ

সমস্যা বিরল হলেও রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ জেনে রাখলে বিপদ এড়ানো সম্ভব।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2021, 07:28 AM
Updated : 21 April 2021, 07:28 AM

ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) ৭ এপ্রিল তাদের ওয়েবসাইটে এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানিয়েছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ‘ভ্যাক্সজেভরিয়া’ গ্রহণকারীদের মাঝে রক্তে অণুচক্রিকার সংখ্যা কমে যাওয়া ও রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার যে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে তাকে ‘বিরল’ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত।

সকল পেশাজীবী চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষ যারা এই টিকা গ্রহণ করেছেন বা করছেন তাদের সকলকে এই ‘দুর্লভ’ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

টিকা গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে ইএমএ। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ ঘটনাতেই দেখা গেছে ভুক্তভোগী হচ্ছেন নারী এবং তাদের বয়স ৬০ বছরের মধ্যে।

পাশাপাশি কিছু ঝুঁকিপূর্ণ পূর্বাভাসও জানিয়েছে সংস্থাটি। ‘ইএমএ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানান হল বিস্তারিত।

‘ফার্মাকোভিজিল্যান্স রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট কমিটি (পিআরএসি)’ এর তথ্য মতে, ‘ব্লাড ক্লট’ বা রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘সেরেব্রাল ভেনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস, সিভিএসটি’; পাকস্থলিতে যাকে বলা হচ্ছে ‘স্প্লানচিক ভেইন থ্রম্বোসিস’ এবং ধমনীতে।

সেই সঙ্গে থাকছে রক্তে অণুচক্রিকা বা ‘প্লেইটলেটস’ কমে যাওয়া এবং রক্তপাত।

‘ইএমএ’র এক কমিটি ৬২টি ‘সেরেব্রাল ভেনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস’ এবং ২৪টি ‘স্প্লানচিক ভেইন থ্রম্বোসিস’য়ের ঘটনা নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণের পর ২২ মার্চ ফলাফল জমা দেয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’য়ের ‘ড্রাগ সেফটি ডেটাবেইজ’ ‘ইউড্রাভিজিল্যান্স’য়ের কাছে। ওই ঘটনাগুলো মধ্যে ১৮টি ছিল প্রাণঘাতি।

তবে কমিটির দাবি, রক্ত জমাট বাঁধা ও অণুচক্রিকার সংখ্যা কমে যাওয়া, এই পরিস্থিতির মিশ্রণ অত্যন্ত বিরল ঘটনা। আর এই টিকা ‘কোভিড-১৯’ থেকে ‍সুরক্ষা দিতে যতটুকু ভূমিকা রাখছে সে তুলনায় এই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার সংখ্যা নগন্য। 

রক্ত জমাট বাঁধা এবং অণুচক্রিকার সংখ্যা কমে যাওয়া, দুটো একসঙ্গে দেখা দেওয়ার একটি যৌক্তিক কারণ হতে পারে ‘ইমিউন রেসপন্স’ বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতিক্রিয়া।

সেই সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলছে সংস্থাটি। রক্ত জমাট বাঁধা এবং অণুচক্রিকা কমে যাওয়ার লক্ষণগুলোকে দ্রুত সনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারলেই কেবল এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।

লক্ষণগুলো কী?

টিকা গ্রহণের পর বুক ব্যথা, দম ফুরিয়ে আসা বা দম নিতে কষ্ট হওয়া, পা ফুলে যাওয়া, ক্রমাগত পেট ব্যথা, স্নায়বিক সমস্যা যেমন- ক্রমাগত এবং প্রচণ্ড মাথা ব্যথা কিংবা দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, যেখানে টিকা দেওয়া হয়েছে সেই স্থান থেকে দূরে কোথাও ত্বকের নিচে ক্ষুদ্র রক্তের ছোপ দেখা দেওয়া।

এই লক্ষণগুলোর প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখার জন্য চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দিয়েছে ইএমএ। সেইসঙ্গে লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন