কলা অবহেলা করার ক্ষতিকর দিক

সহজলভ্য কলা থেকে মেলে এমন সব পুষ্টি উপাদান যা শরীর সু্স্থ রাখতে সহায়তা করে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2021, 12:17 PM
Updated : 20 April 2021, 12:17 PM

সস্তা, সহজলভ্য, খেতে ঝামেলা কম এবং খাওয়ার উপায়ও অনেক। পুষ্টিগুণের হিসেব বাদ দিলেও এই বিষয়গুলোর দিক থেকে কলা অন্যান্য ফলের তুলনায় এগিয়ে।

আর অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মধ্যে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম আর ভিটামিন সি’য়ের যে যোগান এই ফল থেকে মেলে তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তবে সহজেই যা পাওয়া যায় তার মূল্যায়ন কমে যায়, কলার ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম নেই। তাই কলা খাওয়াকে যারা অবহেলা করে অন্যান্য দামি ফল বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা স্বাস্থ্যগত কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারেন।

খাদ্য ও পুষ্টি-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হলো সেই বিষয়ে বিস্তারিত। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: বিশেষত কাঁচা কলা ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’য়ের দারুণ উৎস। এই উপাদানে আছে ‘প্রিবায়োটিক ইফেক্ট’। মানে হলো উপাদানটি হজমতন্ত্রে থাকা স্বাস্থ্যকর ও উপকারী ব্যাক্টেরিয়াকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়। তাই স্বভাবতই খাদ্যাভ্যাস থেকে কলা বাদ দিলে অন্ত্রের ওই উপকারী ব্যাক্টেরিয়া বঞ্চিত হবে। ফলে তাদের সংখ্যা কমবে।

২০১৩ সালে ‘ফ্রন্টিয়ারস ইন ইমিউনোলজি’তে প্রকাশিত গবেষণাভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শরীরে পর্যাপ্ত ‘প্রিবায়োটিক ফাইবার’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। কলার মতো ‘প্রিবায়োটিক ফাইবার’ সরবরাহকারী ফল খাদ্যাভ্যাসে না থাকলে উপাদানটির ঘাটতি দেখা দেবে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হবে দুর্বল এবং বাড়বে রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি।

শরীরচর্চার ধকল: শরীরচর্চার জন্য শরীরের জোর বাড়াতে ‘প্রোটিন বার’ কিংবা বিভিন্ন ‘স্পোর্টস ড্রিংকস’য়ের পরিবর্তে কলা বেছে নেওয়া সহজ, সস্তা এবং পুষ্টিকর। মাঝারি আকারের কলায় প্রায় ৫১৭ মি.লি. গ্রাম পটাশিয়াম থাকে, যা এই খনিজের দৈনিক চাহিদার ১১ শতাংশ। পটাশিয়ামের অভাবে পেশিতে ব্যথা হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা।

২০১২ সালে ‘পিএলওএস ওয়ান’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন দাবি করে, ব্যায়ামের পর শরীরের ধকল পুষিয়ে নিতে কলা অত্যন্ত উপকারী। যেকোনো কার্বোহাইড্রেইট ভিত্তিক পানীয়র তুলনায় অনেক বেশি ‘ডোপামিন’ তৈরি করতে সক্ষম কলা কিংবা তা দিয়ে বানানো স্মুদি। অর্থাৎ কলা না খেলে শরীরচর্চার ধকল সামলাতে বেশি সময় লাগতে পারে।

ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ: ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে খাদ্যাভ্যাস থেকে যারা কলা বাদ দিয়েছেন তারা হয়ত হিতে বিপরীতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।

‘জার্নাল অফ ফাংশনাল ফুড’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলে, কাঁচা কলা খাওয়া কারণে শরীরে যাওয়া ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’ ওই দিনে গ্রহণ করা ক্যালরির মাত্রা কমাতে পারে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত। তবে পাকা কলা খেলে আবার এই প্রভাব দেখা যায় না।

মৌসুমি রোগের ঝুঁকি: প্রতি বছরই যদি মৌসুমি সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হন। তবে কলা না খাওয়া তার একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।

এই ফরে রয়েছে এক ধরনের ‘সুগার-বাইন্ডিং ফাইবার’ যার নাম ‘লেকটিন’। এই উপাদানের ভাইরাসনাশক গুনাবলী আছে যা কয়েক ধরনের ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা’ ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়।

তবে এটাও ঠিক যে ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য শুধু কলা যথেষ্ট নয়। তাই হাত পরিষ্কার রাখা ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করার কোনো বিকল্প নেই।

উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি: রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার জন্য জরুরি উপাদান পটাশিয়াম। যে খাবারগুলোতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, তাদের রক্তচাপ কমানোর ক্ষমতা অনেকটা পটাশিয়াম ক্লোরাইড’য়ের মতো। রক্তচাপ কমানোর চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত উপাদান এই পটাশিয়াম ক্লোরাইড।

স্ট্রোকের ঝুঁকি: উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। আর পটাশিয়াম যেহেতু এই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, তাই পরোক্ষভাবে পটাশিয়ামে ভরপুর কলা খাদ্যাভ্যাসে থাকলে তা স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমাবে।

আরও পড়ুন-