মধুপুর বনে প্রকৃতির পরশে

ফুল, পাখি আর মান্দি ও কোচ সম্প্রদায়ের আতিথেয়তা মিলবে আবিমা গ্রিন কটেজে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2021, 06:52 AM
Updated : 12 March 2021, 01:26 PM

বেড়াতে যান কেনো? এমন প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলবেন শহরের যান্ত্রিক পরিবেশ থেকে বেরিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা দেশের বিভিন্ন অংশে গিয়ে প্রকৃতি হয়ত দেখে আসি। তবে যেখানে প্রকৃতি দেখতে যাওয়া সেখানকার পরিবেশটা কতটুকু দেখা হয়? মেশা হয় কি সেই পরিবেশের সঙ্গে?

কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন’স একবারও যাননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে সমুদ্রে মাছ ধরে বেড়ানো মানুষগুলোর সঙ্গে গল্প করা সুযোগ কজনই বা পেয়েছেন। সিলেটের চা বাগানে বেড়াতে গিয়ে দুটি পাতা একটি কুঁড়ি যে মানুষগুলো তুলে আনে তাদের সঙ্গে একবেলা ভাত খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল কখনও?

শুধু বেড়ানো নয়, নতুন একটি পরিবেশ, সংস্কৃতির সঙ্গে মেশার অভিজ্ঞতা অর্জন করার ইচ্ছা যাদের আছে তাদের জন্য একটি আদর্শ স্থান হবে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন সংলগ্ন আবিমা গ্রিন কটেজ।

বিস্তারিত জানিয়েছেন এই আয়োজনের ‍উদ্যোক্তা মোল্লা সাগর।

মোল্লা সাগর চলচিত্র নির্মাতা। চলচিত্র নির্মাণে এসে এখানকার বন আর বনবাসী মান্দিদের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে চলচ্চিত্র ‘মান্দি’ নিয়ে কাজ করছেন এই অঞ্চলেই।

দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে যাতায়াতের সুবাদে নিজেদের থাকার সুব্যবস্থার প্রয়োজন বোধ করেন তারা। পরে সেই চিন্তাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে সমমনা মানুষদের এই অঞ্চলের আদিবাসিদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ‍সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন। চাচ্ছিলেন মানুষে মানুষে জাতিতে জাতিতে সংস্কৃতিক আদান প্রদানের একটি শিল্পিক উপস্থাপন ঘটাতে। আর সেই চিন্তা থেকেই সৃষ্টি হয় আবিমা গ্রিন কটেজ।

টাঙ্গাইল মধুপুর বনের পাশে পীরগাছা অঞ্চলে প্রায় ২ বিঘা জায়গায় এই কটেজ। ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল কটেজের দুয়ার খোলার পরিকল্পনা থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনাভাইরাস মহামারী, কাজও পিছিয়ে যায়। অবশেষে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় আবিমা।

বর্তমানে মোট আটটি মাটির ঘর আছে এখানে। এর মধ্যে দুটি ঘরে আছে দুটি করে ‘সিঙ্গেল’ বিছানা আর বাকিগুলো একটি করে ‘ডাবল’ বিছানা। আটটি ঘরের মধ্যে তিনটি ঘর এলাকার আদিবাসী মান্দি সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া। আর বাকি ঘরগুলো একক।

ফলে পুরোপুরি এলাকাবাসির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কটা দিন থাকার সুযোগ যেমন পাওয়া যাবে পাশাপাশি থাকবে ব্যক্তিগত দূরত্ব বজায় রাখার সুযোগটাও।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের ব্যবস্থা এখানে নেই। তবে মাটির ঘরের অভিজ্ঞতা আরও নিবিড় করে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে। 

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে দূরত্ব ১৫৫ কিলোমিটার। নিজস্ব যানবাহন নিয়ে যেতে পারবেন, কটেজের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা আছে, আছে চালকদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা।

গণপরিবহনে যেতে চাইলে রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে উঠে তিন ঘণ্টায় পৌঁছে যেতে পারবেন মধুপুর শহরে। সেখানেই অতিথিদের জন্য অপেক্ষা করবে আবিমা গ্রিন কটেজের নিজস্ব যানবাহন। ঢাকা থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের ভাড়া ৫শ’ টাকা।

প্যাকেজ

আবিমায় সকল খাদ্য সার বিষ মুক্ত-প্রাকৃতিক।

প্যাকেজের আওতায় থাকবে মধুপুর থেকে ‘পিক আপ’ ও ‘ড্রপ অফ সার্ভিস’-সহ দুজন মানুষের জন্য থাকা ও তিন বেলা খাওয়া। একটি রুমের জন্য খরচ হবে ৬ হাজার টাকা।

তিন বেলার জন্য নির্ধারিত তালিকা থেকে বেছে নিতে পারবেন পছন্দের খাবার।

এছাড়াও মান্দি ও কোচ সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের স্বাদও নিতে পারবেন কটেজে বসেই।

অক্টোবর, নভেম্বর মাসে গেলে মান্দি সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উৎসব উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া যাবে।

কটেজের সময়সীমা দুপুর ১২টা থেকে পরদিন দুপুর ১২টা।

যারা দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চান তাদের জন্য জনপ্রতি দুই হাজার টাকার প্যাকেজ থাকছে। এর আওতায় লোক সংখ্যা অনুযায়ী কটেজে বিশ্রামের ব্যবস্থা, সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও সন্ধ্যার নাস্তার ব্যবস্থা রয়েছে।

বুকিং প্রক্রিয়া

গ্রামের পরিবেশ, স্থানীয়দের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রাকে সম্মান জানিয়ে তাদের সঙ্গে কয়েকটা দিন কাটানোর মতো মনমানসিকতা যাদের আছে তাদের জন্যেই আবিমা গ্রিন কটেজ হবে আদর্শ।

যাওয়ার কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে কটেজে ফোন করে বুকিং দিতে হবে। স্থান সংকুলান এবং আবিমা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতেই এখানে বেড়ানো সুযোগ পাওয়া যাবে।