হিম বাতাস থেকে ত্বক রক্ষার পন্থা

কালেভদ্রে মুখে শীতল হাওয়ার পরশ ভালো লাগলেও ত্বকের জন্য তা মোটেই ভালো নয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2021, 06:58 AM
Updated : 31 Jan 2021, 06:58 AM

বিশেষ করে যারা দুই চাকার বাহন চালান তাদের জন্য এই বাতাস অত্যন্ত ক্ষতিকর। ঠাণ্ডা লাগার প্রবল সম্ভাবনা তো আছেই। সঙ্গে আছে ত্বকের ক্ষতি।

ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস হিউস্টন’য়ের ম্যাকগোভেন মেডিকাল স্কুল এবং বেইলর কলেজ অফ মেডিসিন’য়ের অধ্যাপক এবং স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ত্বক বিশেষজ্ঞ রজনি কাত্তা স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “প্রবহমান হিম শীতল বাতাসে সাইকেল কিংবা মোটরসাইকেল চালানো, পাহাড়ে চড়া, দৌঁড়ানো, হাঁটাহাঁটি ইত্যাদির সময় দেখা দিতে ‘উইন্ড বার্ন।”

কী এই উইন্ড বার্ন?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ত্বক বিশেষজ্ঞ মেলিসা পিলিয়াঙ্গ বলেন, “ত্বকের বাহ্যিক অংশে বাতাসের কারণে হওয়া ক্ষতিকে আমরা ‘উইন্ড বার্ন’ বলি। ত্বকের বাইরের অংশটি আসলে পুরো ত্বকের সুরক্ষা আস্তর হিসেবে কাজ করে। হিম শীতল বাতাসের সংস্পর্শে আসলে এই আস্তরে থাকা ‘ফ্যাটি লিপিড’ ক্ষয়ে যায়, ফলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

ডা. কাত্তা বলেন, “এই অবস্থায় ত্বকে লালচেভাব, স্পর্শকাতরতা, চামড়া ওঠা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। নাক ও গালের ত্বক সবচাইতে বেশি ক্ষতির শিকার হয় এই পরিস্থিতিতে।”

রোদে পোড়ার সঙ্গে এর তফাৎটা অনুভবে। রোদে পোড়া হয় গরম, ফোলাভাব অনুভূত হয়। অন্যদিকে হিম বাতাসে ত্বকে সুঁচ ফোটানো বা টানটান ভাব অনুভূত হয়। সুবিধার দিক হল হিম বাতাসের এই ক্ষতি নিজ থেকেই সেরে যায় কয়েক দিনের মধ্যেই। তবে কোষ পর্যায়ে হওয়া ক্ষতিটা থেকে যেতে পারে স্থায়ীভাবে। 

ক্ষতি এড়ানোর উপায়

নিউ ইয়র্ক’য়ের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের ‘ডার্মাটোলজি’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জশুয়া জেইকনার বলেন, “শীতকালে ত্বকে যথাসম্ভব মৃদুমাত্রার সাবান বা অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত। ‘এক্সফোলিয়েশন’ কমিয়ে আনতে হবে অনেকটা, বন্ধ রাখতে পারলে ভালো, কারণ এতে ত্বক আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এমন ‘ময়েশ্চরাইজার’ ব্যবহার করতে হবে যাতে আছে ‘সেরামাইডস’। এটি ত্বকের কোষ পর্যায়ে সৃষ্টি হওয়া ফাটলগুলো পূরণ করে বাইরের সুরক্ষা আস্তরকে শক্তিশালী করবে।”

তিনি আরও বলেন, “ভালোমানের ‘পেট্রোলিয়াম’ ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে ঠোঁটের জন্য। ত্বকের এই অংশের জৈবিক সুরক্ষা সবচাইতে কম। ফলে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল। এই প্রসাধনী সবসময়ই হাতের কাছে থাকা উচিত।”

“শীতের ‘সান প্রটেকশন’ জরুরি। ‘মিনারেল সানস্ক্রিন’ ব্যবহার করতে পারেন। এতে থাকবে ‘জিঙ্ক অক্সাইড’ কিংবা ‘টাইটেনিয়াম ডাই-অক্সাইড’ যা ত্বকের জন্য অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের ‍তুলনায় কোমল”, বলেন জেইকনার।

ত্বকের ক্ষয় সারানোর উপায়

ডা. জেইকনার বলেন, “ভালোমানের একটি ‘ময়েশ্চারাইজার’ হবে আপনার পরম বন্ধু। ঘন ক্রিম বা মলম ত্বকের ক্ষয়পূরণ করবে। নারিকেল তেল কিংবা ‘করোডিয়াল ওটমিল’ সমৃদ্ধ প্রসাধনী ত্বকের অস্বস্তি দূর করতে বেশ উপকারী হবে। তবে যেকোনো নতুন প্রসাধনী ব্যবহারের আগে তা সামান্য ব্যবহার করে পরীক্ষা করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।”

“গরম পানিতে গোসল আরামের হলেও তা অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করে ফেলতে হবে। গরম পানিতে লম্বা গোসল ত্বকের আর্দ্রতা দূর করে।” বলেন ডা. কাত্তা।

গা মুছেই শরীরের ময়েশ্চারাইজার মেখে নিতে হবে। হালকা ভেজা ত্বকের ময়েশ্চারাইজার মাখলে ত্বকের আর্দ্রতা আটকে থাকে।

ডা কাত্তা আরও বলেন, “নিয়মিত কোন প্রসাধনী ব্যবহার করছেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ‘অ্যান্টি-এইজিং ক্রিম’ যাতে আছে ‘রেটিনয়েড’ কিংবা ব্রণের চিকিৎসার প্রসাধনী যাতে আছে ‘বেনজয়েল পেরোক্সাইড’ কিংবা ‘স্যালিসাইলিক অ্যাসিড’, এগুলো সবই ত্বকে অস্বস্তি বাড়াবে শীতকালে।”

আরও পড়ুন