করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিরল লক্ষণ

অদ্ভুত কিছু উপসর্গ আছে যা হতে পারে তীব্রভাবে কোভিড-১৯’য়ে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2021, 07:13 AM
Updated : 2 Jan 2021, 07:13 AM

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কিছু লক্ষণ আছে খুবই সাধারণ আবার কিছু আছে খুবই জোরালো। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সীমাহীন লক্ষণগুলোর মাঝে কিছু অদ্ভুত বিরল লক্ষণও রয়েছে, যা দেখে ধারণা করা যেতে পারে রোগী হয়ত তীব্র ভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

নীলাভ ঠোঁট

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “মুখ বা ঠোঁট নীল বর্ণ ধারণ করলে হতে পারে জোড়ালো-ভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।”

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘নার্স টুগেদার’ প্রতিষ্ঠানের সেবক ড. লিপহার্ট রোয়াডস বলেন, “নীলচে ঠোঁট যাকে বলা হয় ‘সায়ানোসিস’, যা দেহে অক্সিজেনের অভাব-জনিত লক্ষণ। আর এরকম হলে হতে পারে সেটা করোনাভাইরাস থেকে।”

“মুখ ও ঠোঁটের ত্বক খুবই পাতলা, যে কারণে রক্তে অক্সিজেনের চরম অভাব দেখা দিলে দেহের এই অংশেই নীলাভ বরণ ধারণ করে আগে।”

“প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত হওয়া কোভিড-১৯’য়ে আক্রান্ত হওয়া কিছু রোগীর ক্ষেত্রে আমরা এরকম দেখেছি। ফুসফুসে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন না থাকায় প্রদাহ থেকে ঠোঁট নীল হয়ে যেতে পারে।”

তবে রোয়াডস আরও বলেন, “নীলাভ ঠোঁটের সঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টা খুবই বিরল। সাধারণভাবে রোগী ফুসফুসের অন্যান্য জটিলতায় বেশি ভুগেন। যেগুলোর মধ্যে আছে কাশি এবং হাঁপানি রোগীর মতো শাঁ শাঁ করে নিঃশ্বাস ফেলা।”

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স সেন্টার ফর হেল্থ সিকিউরিটি’র জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ আমেশ.এ.আডালজা বলেন, “সব রোগীর যে সাধারণ লক্ষণগুলো দেখা দেবে এমন কোনো কথা নেই। এমনও দেখা গেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর নীলাভ ঠোঁট হওয়া ছাড়া আর কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি। এই ধরনের জটিল অবস্থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় ‘সাইলেন্ট’ বা ‘হ্যাপি হাইপোক্সিস”

লন্ডনের ‘হুইটিংটন হসপিটাল’য়ের কর্তব্যরত চিকিৎসক হিউ মন্টগমরি ‘দি সান’ পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার এক কোভিড-রোগীকে নিরীক্ষা করার ১৫ মিনিট পরেই মারা যান। বাইরে থেকে তার অবস্থা ভালোই মনে হচ্ছিল। তবে দেহের ভেতর ছিল প্রচণ্ড অক্সিজেনের অভাব।”

তাই রোয়াডস সাবধান করে দিয়ে বলেন, “নীলাভ ঠোঁট মানেই শরীরে প্রচণ্ড মাত্রায় অক্সিজেনের অভাব- তাই একে জরুরি অবস্থা ধরে কোভিড-১৯’য়ে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হিসেবে নিয়ে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।”

শ্বাস-প্রস্বাসে সমস্যা

নিঃশ্বাস নেওয়ার সমস্যাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

তবে ‘হার্ভার্ড হেল্থ’ বলছে সাময়িক শ্বাস-প্রস্বাসের সমস্যা বা ‘টেম্পোরারি শর্টনেস অফ ব্রেথ’য়ের সঙ্গে জটিল শ্বাস-প্রস্বাসে সমস্যা হওয়ার কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। এই ‘শর্টনেস অফ ব্রেথ’ মানসিক চাপ থেকেও হতে পারে।

‘হার্ভার্ড হেল্থ’য়ের ওয়েবসাইটে আরও বলা আছে, “যদি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, প্রতিবার নাক দিয়ে বাতাস টানতে কষ্ট করতে হয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মনে রাখতে হবে করোনাভাইরাস মহামারীর আগেও নিঃশ্বাসের সমস্যা ছিল, এখনও আছে এমনকি মহামারী চলে গেলেও থাকবে। কারণ যেটাই হোক, দ্রুত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা।”

বুকে স্থায়ী ব্যথা বা চাপ অনুভব

সিডিসি’র তালিকায় থাকা আরেকটি জরুরি লক্ষণ, যা হয় মারাত্মক হৃদ-সংক্রান্ত জটিলতার  থেকে, যা ভাইরাসের কারণেই হতে পারে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. গ্রেগ ফোনারো ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’কে জানান, বহু সংখ্যক রোগীর মাঝেই হৃদ-সংক্রান্ত জটিলতা দেখা গেছে। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগীর মধ্যে এক চতুর্থাংশের মাঝেই ছিল জটিল হৃদ-সমস্যা। যেগুলোর মধ্যে আছে ‘মায়োকার্ডিসিস’ বা হৃদপিণ্ডের পেশিতে ব্যথা এবং হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া।

হঠাৎ বিভ্রান্তি

সিডিসি’র তথ্যানুসারে, যদি ঘুম থেকে উঠে বা জেগে থাকা অবস্থায় বিভ্রান্ত বোধ করেন বা কোনো কিছু বুঝে উঠতে না পারেন তবে সেটা হতে পারে মারাত্মক কোভিড-১৯’য়ে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।

এই বিকারগ্রস্ততার কারণ হতে পারে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেনের অভাব। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক প্রতিবেদনে জানানো হয় প্রায় ৮০ শতাংশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে শেষ বেলায় স্নায়ুর সমস্যা দেখা গেছে।

ঘুম থেকে ওঠা বা জেগে থাকায় সমস্যা

যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে জ্ঞান হারানোর বিষয়টা অবশ্যই মারাত্মক জটিল অবস্থা হিসেবে দেখা হয়, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও সেটা ব্যাতিক্রম নয়।

সিডিসি’র মতে, যদি কোনো কারণ ছাড়াই কারও জেগে থাকতে বা ঘুম থেকে উঠতে সমস্যা হয় তবে অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। পাশাপাশি নিশ্চিত হতে হবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি-না। না হলে এই ভাইরাস বিষয়টাকে আরও জটিল করে তুলবে।

আরও পড়ুন