খাদ্যাভ্যাস থেকে মাংস বাদ দেওয়া কুফল

খাদ্য তালিকায় শুধু উদ্ভিজ্জ-খাবার রাখলে হাড়ের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2020, 08:23 AM
Updated : 17 Dec 2020, 08:23 AM

খাদ্যাভ্যাস থেকে পুরোপুরি মাংস বাদ দেওয়ার স্বাস্থ্যগত সুফল আছে অনেক। ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি দূরারোগ্য ব্যাধির সম্ভাবনা যেমন কমাবে তেমনি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও অনেক সহজ হবে। তবে সমস্যাও যে নেই তা নয়।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘বিএমসি মেডিসিন’ শীর্ষক সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে জানায়, পুরোপুরি উদ্ভিজ্জ উৎসভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস হাড়ের সুস্বাস্থ্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

‘ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড’ ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টল’য়ের গবেষকরা মিলিতভাবে এই গবেষণা পরিচালনা করেন।

এজন্য প্রায় ৫৫ হাজার অংশগ্রহণকারী খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করা হয়, প্রায় ১৮ বছর ধরে।

দেখা যায়, ‘ভিগান’ অর্থাৎ যারা একেবারেই প্রাণিজ খাবার খায় না, ‘নিরামিষাশী’ ও ‘পেসকেটারিয়ান’ অর্থাৎ যারা মাংস খায় না তবে মাছ খায় তাদের মাঝে মাংসভোজীদের তুলনায় ‘হিপ ফ্র্যাকচার’ বা পশ্চাতের হাড় ক্ষয়ের ঘটনা বেশি দেখা যায়।

উদ্ভিজ্জ উৎসনির্ভর কিছু বিশেষ খাদ্যাভ্যাস আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে এদিক থেকে।

‘নিরামিষাশী’ ও ‘পেসকেটেরিয়ান’দের ‘হিপ ফ্র্যাকচার’য়ের আশংকা সর্বভোজীদের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।

‘ভিগান’দের ঝুঁকি আরও বেশি, সর্বভূকদের তুলনায় তাদের ‘হিপ ফ্র্যাকচার’য়ের আশঙ্কা ২.৩ গুন আর পা ভাঙার আশঙ্কা দ্বিগুন বেশি।

যেকারণে উদ্ভিজ্জ খাবারে অভ্যস্তদের হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা বাড়ে

যু্ক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ এবং ‘অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিকস’য়ের মুখপাত্র জিনজার হালটিন বলেন, “ভেজিটেরিয়ান’ আর ‘ভিগান’দের খাদ্যাভ্যাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন কে, ভিটামিন ইত্যাদি হাড় গঠনকারী পুষ্টি উপাদান থাকে। তবে সমস্যা হল হাড় গঠনকারী অন্যান্য উপাদানগুলোর অভাব তাদের শরীরে থেকে যায়। বিশেষত, ক্যালসিয়াম।”

“রক্ত জমাট বাঁধা, পেশির সংকোচন-প্রসারণ এবং স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যালসিয়ামের ধারাবাহিক সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর খাবার থেকে যখন সেই চাহিদা মেটানো যায় না তখন শরীর তার অভ্যন্তরিন ক্যালসিয়ামের মজুদের ওপর নির্ভরশীল হয়, আর সেই মজুদ হল হাড়।”

“কালেভদ্রে এমনটা ঘটলে সমস্যা হয় না তবে যখন তা দীর্ঘদিনের নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় তখনই বাঁধে বিপত্তি। হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হতে থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “আরেকটি সমস্যা হল প্রোটিনে ঘাটতি। ক্যালসিয়াম শোষণে এবং হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই পুষ্টি উপাদান। উদ্ভিজ্জ উৎসভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস থেকে প্রোটিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব হলেও ‘ভেজিটেরিয়ান’রা যতটুকু খান তা হাড় গঠনের চাহিদা মেটানো জন্য যথেষ্ট নয়।”

“বডি ম্যাস ইনডেক্স’য়ের মাত্রা কম হওয়াও হাড় দুর্বল হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখে। আর ‘ভেজিটেরিয়ান’ ও ‘ভিগান’দের খাদ্যাভ্যাসের ধরন ‘বডি ম্যাস ইনডেক্স’ কমায়, ফলে হাড় ফেটে যাওয়া প্রবণতা বাড়ে। কারণটা সহজ, ওজন যখন বেশি, তখন হাড় সুরক্ষিত রাখার জন্য শরীরে মাংসের পরতও বেশি।”

নিরামিষাশী’রা যেভাবে হাড় সুরক্ষিত রাখতে পারবেন

খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, বয়স, জিন সবকিছু মিলিয়ে হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। বয়স আর জিন কারও নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা মানুষের নিয়ন্ত্রণে।

উদ্ভিজ্জ উৎসের মধ্যে কপি, শালগম, ওলকপি, বাঁধাকপি, ‘বক চই’ ইত্যাদিতে ক্যালসিয়ামের মাত্রা সবচাইতে বেশি। ‘টফু’, কাঠবাদাম, কমলা, ডুমুর ইত্যাদিতে মাঝারি। পালংশাক, বিট, ‘সুইস চার্ড’ বা বিট পাতা ইত্যাদিতে সবচাইতে কম ক্যালসিয়াম মেলে।

ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে ‘সাপ্লিমেন্ট’ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন ভিটামিন কেটু এবং ভিটামিন ডি গ্রহণের। এই দুই ভিটামিন একসঙ্গে গ্রহণ করলে তা ক্যালসিয়ামকে হাড়ে সঠিকভাবে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে হবে। যাদের ওজন কম বা ‘বডি ম্যাস ইনডেক্স’য়ের মাত্রা ১৮.৫ এর কম তাদের উচিত পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া। সেই সঙ্গে চাই শরীরচর্চাও।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন