সকালের নাস্তা থেকেও ওজন বাড়তে পারে

সুষম খাবার দিয়ে দিনের শুরু করতে না পারলে দেহের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2020, 01:14 PM
Updated : 11 Dec 2020, 01:14 PM

কথায় বলে, ‘সারাদিনের প্রধান খাবার হচ্ছে সকালের নাস্তা’। কারণ সকালে ভালো মতো খেলে সারাদিন ক্লান্ত কম লাগার পাশাপাশি ক্ষুধার পরিমাণও কমে।

তবে সকালের নাস্তা যদি সুষম না হয় তাহলেও হিতে বিপরীত হতে পারে।

এখন কীভাবে বুঝবেন সকালের নাস্তা থেকে সঠিক পুষ্টির যোগান আসছে কি-না।

পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে সেরকমই কিছু খাবার সম্পর্কে বলা হল যা সকালের নাস্তায় খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

নাস্তায় প্রোটিন না থাকা: সকালের নাস্তায় পর্যাপ্ত প্রোটিন না খেলে সারাদিন অতৃপ্তি বহন করতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ ও ‘চিয়ারফুল চয়েস’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাকেঞ্জি বার্গেস বলেন, “সারাদিনের অতৃপ্ত ভাব থেকে ক্ষুধা লাগার সম্ভাবনা বাড়ে যা দিনের অন্যান্য সময়ে খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আর খাওয়ার পরিমাণ বাড়া মানেই অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ।”

“সকালের নাস্তায় প্রোটিন রাখার চেষ্টা করুন। যেমন- দুটি কলার সঙ্গে ‘নাট বাটার’ হতে পারে দারুণ প্রোটিনের উৎস। অথবা হতে পারে একবাটি ‘সিরিয়াল’য়ের সঙ্গে সিদ্ধ ডিম।

অতিরিক্ত শর্করা যুক্ত খাবার: ‘দি টোটাল বডি ফাংশনাল প্রোগ্রাম’য়ের লেখক ও যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত পুষ্টি-বিষয়ক প্রশিক্ষক অ্যাডি ও’নিল পরামর্শ দেন, “সকালে অতিরিক্ত চিনি ও ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ যু্ক্ত খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। না হলে এগুলো আপনার যকৃতে প্রভাব ফেলবে।”

তিনি আরও বলেন, “পূর্ণ শষ্যের খাবার খাওয়া উচিত, যা সারাদিনের বিপাক কার্যক্রমকে চালু রাখতে সাহায্য করে ভালোভাবে।”

শুধু কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ: দিনের শুরুতে শুধু কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করলে সারাদিন ক্ষুধার্ত বোধ করার সম্ভাবনা বাড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ মলি কিম্বাল বলেন, “সকালের নাস্তায় কার্ব গ্রহণ করা খারাপ তা বলছি না, তবে শুধুই কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করাটা তৃপ্তিদায়ক নয়। সারাদিন খিদা লেগেই থাকবে।”

পাউরুটি, দুধ, বাজারে পাওয়া যায় নানা স্বাদের প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটে বন্দি দই, নানান রকম সিরিয়াল, শুধু ফলের স্মুদি- এইরকম খাবার শুধু খেলে হবে না। সঙ্গে যোগ করতে হবে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাদা পাউরুটির পরিবর্তে বাদামি রুটি খাওয়া সঙ্গে থাকতে পারে ডিম, সবজি ও ফ্যাট ফ্রি দই।

একদমই নাস্তা না খাওয়া: ওজন কমাতে গিয়ে অনেকেই সকালে কিছুই খান না। তবে এর বিপরীত ফল হল দুপুর কিংবা রাতে বেশি খাওয়া হয়ে যায়। ফলাফল ওজন বৃদ্ধি।

‘দি ডিশ অন নিউট্রিশন’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ও যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ স্যান্ডি ইওনান ব্রিখো বলেন, “সকালে যদি খিদা অনুভব না হয় তবে এমন হালকা কিছু খান যা অন্তত আপনাকে দুপুর পর্যন্ত কিছু খাওয়ার কথা মনে করাবে না। আবার সকালে যদি তাড়াহুড়া থাকে তবে চটজলদি তৈরি করা যায় এমন কিছু খেয়ে বের হন। যেমন- তৈরি হওয়ার ফাঁকে ডিম সিদ্ধ করে নিতে পারেন।”

সুষম নাস্তা না খাওয়া: ইওনান ব্রিখো বলেন, “সকালে সুষম খাবার না খেলেও ওজন বাড়তে পারে।”

“যেমন- শুধু প্যানকেক খেলেন কিন্তু কোনো প্রোটিন খেলেন না। ফলে পেট ভরা অনুভত হবে না। যা দিনের পরবর্তী সময়ে বেশি খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে।”

সুষম খাবারের উদাহরণ হতে পারে- রুটি দুটি সসেজ সঙ্গে কলা, প্যানকেকের সঙ্গে মধু, রুটি সবজির সঙ্গে ডিম।

শুধু সিরিয়াল খাওয়া: আমাদের দেশের অনেকেই এখন পশ্চিমা ধাঁচের মতো সিরিয়াল খেয়ে সকালের নাস্তা করেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ সিলভিয়া কার্লি বলেন, “বেশিরভাগ সিরিয়ালেই পরিশোধিত শষ্য ও কৃত্রিম পুষ্টি উপাদান দেওয়া থাকে। পাশাপাশি এগুলো সাধারণত উচ্চ শর্করাযুক্ত হয়। তাই সিরিয়ালের সঙ্গে অন্যান্য প্রোটিন বা স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ না করলে এর থেকে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।”

ক্যালরি গ্রহণ কমানো: সকালে যাদের কাজের চাপ থাকে বা ক্ষুধা লাগে না তাদের উচিত হবে কম করে হলেও কিছু খাওয়া। যা পরে বেশি খাওয়ার হাত থেকে বাঁচাবে। সকালে কিছুই না খাওয়া মানে একদমই ক্যালরি গ্রহণ না করা। তাই কিছু না কিছু খেতেই হবে। আর সেজন্য দরকার পরিমিত প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও শষ্য।

যেমন- শুধু ডিমের সাদা অংশ খাওয়ার চাইতে পুরো ডিম খাওয়া ভালো। সঙ্গে থাকতে পারে দুটি কলা ও অপরিশোধিত বা বাদামি আটার রুটি। কলার পরিবর্তে বাদামও রাখা যেতে পারে।

তাড়াতাড়ি খাওয়া: যুক্তরাষ্ট্রের ইজেড কেয়ার ক্লিনিক’য়ের চিকিৎসক শ্যানন হেনরি বলেন, “তাড়াহুড়া করে এলোমেলো-ভাবে খেলে বেশি খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে ক্যালরি গ্রহণও বেশি হয়ে যায়। যা ওজন বাড়ায়।”

সকালের নাস্তায় প্রোটিন রাখার পরামর্শ দেন হেনরি। যা সারাদিন পেট ভরা অনুভূতি দেবে। পাশাপাশি দিনের অন্যান্য খাবার বেশি দেরি করে খাওয়া যাবে না। এতে কর্মশক্তি কমে গিয়ে দুর্বলভাব চলে আসবে শরীরে।

আরও পড়ুন