মানসিক চাপ থেকে উচ্চ রক্তচাপ

সময় মতো চিকিৎসা না করালে হৃদরোগ-সহ বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2020, 08:48 AM
Updated : 7 Dec 2020, 08:48 AM

হৃদরোগ, স্ট্রোকের একটি অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দিক হল উচ্চ রক্তচাপ।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের মতে, ১২০/৮০ এমএম/এইচজি হল স্বাভাবিক রক্তচাপ।

‘সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার’ ১৩০ থেকে ১৩৯ এমএম/এইচজি এবং ‘ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেশার’ ৮০ থেকে ৮৯ এমএম/এইচজি হলে তাকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপের ‘স্টেজ ওয়ান’।

রক্তচাপ যখন নিয়মিত ১৪০/৯০ এমএম/এইচজি মাত্রায় থাকে তখন তাকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপের ‘স্টেজ টু’।

এই পর্যায়ে এসে চিকিৎসকরা ওষুধ সেবন ও জীবনযাত্রায় দ্রুত পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে হিউস্টনের বেইলর কলেজ অফ মেডিসিন’য়ের ‘মেডিসিন’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিজয় নামবি বলেন “সময় মতো চিকিৎসা করা না হলে উচ্চ রক্তচাপই হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং রক্তনালীর ক্ষতিজনীত বিভিন্ন রোগের সুত্রপাত ঘটায়। মানসিক চাপ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুভাবেই রক্তচাপকে প্রভাবিত করে।

মানসিক চাপের ধরন

ডা. নামবি বলেন “মানসিক চাপগ্রস্ত অবস্থায় শরীরে ‘ফাইট-অর-ফ্লাইট রেসপন্স’ সক্রিয় হয়ে উঠে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া, ভীতিকর কিংবা বিপদের সময় এটি ভালো। কোনো মানুষ ভয় পেলে বা চমকে উঠলে তার রক্তচাপ বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে মানসিক চাপ ‘সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম’কে সক্রিয় করে ‘অ্যাড্রেনালিন’ ও ‘কর্টিসল’ নামক হরমোন নিঃসরণ করে যা হৃদস্পন্দনের গতি ও রক্তচাপ দুটাই বাড়িয়ে দেয়। নিজেকে বিপদ থেকে বাঁচাতে এমনটাই হওয়া উচিত।”

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ

কর্মক্ষেত্র, আর্থিক অবস্থা, ব্যক্তিগত সমস্যা ইত্যাদি থেকে ক্রমাগত মানসিক চাপ তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিগুলো রক্তচাপের ওপর সরাসরি কী প্রভাব ফেলে তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলমান।

যা জানা গেছে তা হল, এই মানসিক চাপ একজন মানুষের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, যা রক্তচাপকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।

ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিন/ ইয়েল নিউ হ্যাভেন হসপিটাল’য়ের ‘মেডিসিন(নিউরোপ্যাথি)’ বিভাগের অধ্যাপক, ‘অ্যাসোসিয়েট ডিন অ্যান্ড ডিরেক্টর অফ গ্যাজুয়েট মেডিসিন এডুকেশন’ স্টিফেন জে. হুয়োট বলেন, “আপনি যখন মানসিক চাপে থাকেন তখন ভালো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। অথচ আপনি জানেন সেগুলো আপনার জন্য ভালো। এদের মধ্যে অন্যতম হল স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা ইত্যাদি।”

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপের প্রভাব

ডা. হুয়োট বলেন, “যতবার রক্তচাপ স্বাভাবিকের চাইতে বেশি হয়ে যায়, ততবারই রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর মানসিক চাপের কারণে যদি আপনি অস্বাস্থ্যকর খাবার খান, ওজন বেড়ে যায়, শরীরচর্চা না করেন, রক্তচাপ কমানোর ওষুধ খান তবে এসবকিছুই রক্তচাপের সমস্যা বাড়াতে থাকে। আবার এই চাপ সামলানো জন্য যখন মদ্যপান, ধূমপান, মাদক সেবন করেন তখন তা রক্তচাপের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেই, সার্বিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে মারাত্মক হারে।” 

মানসিক চাপে থাকা মানুষগুলো ঘুমাতে পারেন না, আবার পারলেও ঘুম ভেঙে যায়। মাত্র একরাত ভালোভাবে না ঘুমালেই তা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। আর যাদের ইতোমধ্যেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের ঘুম না হলে আর তার সঙ্গে পরের দিনের চাপ ও পরিশ্রম যোগ হয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এগুলোই প্রতিনিয়ত একজন মানুষের হৃদরোগের মৃত্যুবরণের ঝুঁকি বাড়াতে থাকে।

মানসিক চাপ সামলানো

প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে আপনার মানসিক চাপের কারণ। এবার জানতে হবে সেই কারণটা কি পরিবর্তন যোগ্য?

কাজ যদি মানসিক চাপের কারণ হয় তবে কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনের কথা ভাবতে হবে। ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলে তা সমাধানের উপায় খুঁজতে হবে। তবে সবকিছু পরিবর্তন করাও সম্ভব হয় না, সেক্ষেত্রে মানসিক চাপকে সামাল দেওয়ার পথ বের করতে হবে।

প্রতিদিন চাপ কমানো

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে যা নিয়মিত অনুশীলন করলে উপকার পাওয়া সম্ভব। এদের মধ্যে কোনটি আপনার জন্য উপযোগী তা খুঁজে নিতে হবে।

পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, ধ্যান, যোগ ব্যায়াম, ‘ডিপ ব্রিদিং’, শরীরচর্চা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, জানান ডা. নামবি।

ডা. হুয়োট বলেন, “শরীরচর্চা নিঃসন্দেহে মানসিক পরিবর্তন করে যা মানুষকে ভালো অনুভব করায়। আপনি যখন ভালো অনুভব করবেন, তখন মানসিক চাপগুলোর সঙ্গে তাল মেলাতেও পারবেন ভালো।”

শারীরিক অবস্থা জানা

“প্রতিবছর একবার রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত”, বলেন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েল হেলথ’স স্যান্ড্রা অ্যাটলাস বেজ হার্ট হসপিটাল’য়ের ‘ডিরেক্টর অফ কার্ডিওভাস্কুলার হেলথ অ্যান্ড লিপিডোলজি’ গাই এল, মিন্টজ।

তিনি আরও বলেন, “যাদের বংশে উচ্চ রক্তচাপের ঘটনা আছে তাদের আরও বেশি পরীক্ষা করানো উচিত। পাশাপাশি ভালোমানের রক্তচাপ পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত।”

“নিজের যত্ন নেওয়া, যেমন- লবণ খাওয়া কমানো, নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা, প্রয়োজন মাফিক ওষুধ সেবন ইত্যাদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অসামান্য ভূমিকা রাখবে”, বলেন ডা. মিন্টজ।

আসল বিষয় হল

রক্তচাপকে যে অসংখ্য বিষয় প্রভাবিত করে তার একটি হল মানসিক চাপ। এটি সমস্যার সম্ভাবনা বাড়ায় ঠিক, তবে শুধু একারণেই যে আপনার রক্তচাপ বেড়ে যাবে এমনটা নয়।

তাই মানসিক চাপ কমালে কিংবা একেবারে না থাকলেও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে ওষুধ সেবন করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন