কোলন ক্যান্সার বিষয়ে সাবধানতা

লক্ষণ বুঝে দ্রুত চিকিৎসা নিতে পারলে কোলন ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2020, 06:47 AM
Updated : 24 Nov 2020, 06:47 AM

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের ইনস্টিটিউট অফ ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড হেপাটোবিলিয়ারি সাইন্স’য়ের ‘জিআই অনকোলজি অ্যান্ড ব্যারিয়াটিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. আমানজিত সিং’য়ের দেওয়া তথ্যানুসারে কোলন ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হল।

‘কলোরেক্টাল’ ক্যান্সারের শুরুটা হয় অন্ত্র কিংবা পায়ুপথে। সুত্রপাতের স্থানভেদে একে ‘কোলন ক্যান্সার’ অথবা ‘রেকটাম ক্যান্সার’ বলা হয়।

‘লার্জ ইন্টেসটাইন’, ‘লার্জ বাওয়েল’ দুটোই হলো বৃহদান্ত্রের আরেক নাম, যাকে আবার ‘কোলন’ নামেই চিহ্নিত করা হয়। অপরদিকে বৃহদান্ত্রের শেষ প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে পায়ুপথে গিয়ে শেষ হওয়া ‘চেম্বার’টি হল ‘রেকটাম’।

কোলন আর রেকটাম ক্যান্সারের উপসর্গগুলো একই রকম হওয়ার কারণে এদেরকে একত্রে ‘কলোরেক্টাল’ ক্যান্সার বলা হয়।

রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন কিংবা রেকটাম’য়ের ভেতরের দেয়ালে মাংসের দলা তৈরি হয় যাকে বলা হয় ‘পলিপস’। সময়ের পরিক্রমায় এবং চিকিৎসার অভাবে এই ‘পলিপস’ পরিণত হয় ক্যান্সার কোষে।

বংশগত কারণ, খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, ধূমপান, ‘ইনফ্লামাটরি বাওয়েল ডিজিস (আইবিএস)’ ইত্যাদি এই রোগের অন্যমত প্রধান কারণ।

পুরুষের এই রোগে মৃত্যুবরণ করার সম্ভাবনা বেশি। আবার নারী-পুরুষ উভয়েরই কোলন ক্যান্সার হওয়া সম্ভব হলেও, পুরুষদের রেকটাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

উপসর্গ

* অন্ত্রের কার্যক্রমের গুরুতর পরিবর্তন। বেশিরভাগ সময় ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা। সাধারণ সময়ের চাইতে মলের আকার পরিবর্তন বা খুবই চিকন মলত্যাগ।

* পায়ুপথে রক্ত, রক্ত মিশ্রিত মলত্যাগ।

* সবসময় পেটে বা অন্ত্রে অস্বস্তি। যেমন- খিঁচুনি, গ্যাস ও ব্যথা।

* মলত্যাগের পরেও সব সময় অনুভূত হওয়া যে ভালো মতো পেট খালি হয়নি।

* দুর্বলতা ও কোনো কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন কমা।

চিকিৎসা

ক্যান্সার কোনো ‘স্টেজ’য়ের আছে তার ওপর নির্ভর করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ‘টিউমার’ অপসারণ, ‘রেডিয়েশন থেরাপি’, ‘কেমোথেরাপি’ ইত্যাদি চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অস্ত্রোপচার হল প্রথম চিকিৎসা।

ক্যান্সার কোষে অন্ত্রের ভেতরে ছড়িয়ে পড়লে অন্ত্রের কিছু অংশ কেটে ফেলা সম্ভব, যাকে বলা হয় ‘পার্শিয়াল কলেকটমি’।

আরেকটি চিকিৎসা পদ্ধতি হল ‘ওস্টোমি’। যেখানে অন্ত্রের সুস্থ অংশ থেকে পেটের বাইরে ‘ওপেনিং’ তৈরি করা হয় এবং সেখানে একটি ব্যাগ বসানো হয়। মল এই ব্যাগে এসে জমা হয়।

এছাড়াও আছে রেডিয়েশন থেরাপি যেখানে ‘এক্স-রে’ ও ‘প্রোটন’য়ের সাহায্যে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।

প্রতিরোধ ব্যবস্থা

প্রাণঘাতি এই ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে প্রথমেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে হবে। শাকসবজি, শষ্যজাতীয় খাবার, ভিটামিন, খনিজ, ভোজ্য আঁশ এবং ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ থাকে এমন খাদ্যাভ্যাস বেছে নিতে হবে। এই উপাদানগুলো অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে অত্যন্ত জরুরি।

ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে। শারীরিক ওজন একটা স্বাস্থ্যকর মাত্রায় থাকতে হবে।

বংশে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী থাকলে পরিবারের সকল সদস্যের উচিত বয়স ৪৫ পেরোলে কিংবা তার আগে থেকেই নিয়মিত ‘কোলন ক্যান্সার’য়ের পরীক্ষা করানো।

একটা সময় ছিল যখন ‘কলোরেক্টা’ ক্যান্সারকে ধরে নেওয়া হত পশ্চিমা বিশ্বের রোগ।

তবে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রাচুর্য, অতিরিক্ত ওজন, অলস জীবনাযাত্রা ইত্যাদির কারণে এই রোগ আজ পুরো বিশ্বেই তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।

এমনকি ৪০ বছরের কম বয়সিদের মাঝেও আজকাল এই রোগ দেখা দিচ্ছে এবং একবার অস্ত্রোপচার, ‘কেমোথেরাপি’ ও ‘রেডিয়েশন থেরাপি’য়ের মাধ্যমে সুস্থ হওয়া পর আবার তা ফিরে আসছে।

আরও পড়ুন