ভালো থাকতে বিশেষজ্ঞরা যা করতে বলেন

খারাপের মাঝেও ভালো থাকার রয়েছে কিছু পন্থা।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2020, 11:06 AM
Updated : 19 Nov 2020, 11:06 AM

করোনাভাইরাস মহামারীর কবলে চলতি বছরটা সবার জন্যই দুর্বিসহ একটা সময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাইরাসের কবলে অগনিত মানুষ তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। যারা সুস্থ হয়েছেন তাদেরও ধকল কম যায়নি। আর আতঙ্ক হয়ত আজও বিরাজমান পুরো পরিবারে।

যারা ভাইরাসের কবলে পড়েননি, তাদের সময়টাও ভালো যাচ্ছে না কোনো দিক থেকেই। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে গিয়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা হয়নি বহুদিন। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন, বেতন কমেছে। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সবদিক মিলিয়ে প্রত্যেকেই একটা মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন পার করছেন

এই মানসিক অবস্থায় কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনার কয়েকটি উপায় তুলে ধরেছেন মনবিজ্ঞানীরা। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল সেই উপায়গুলো।

ইতিবাচক দিকগুলোতে মনযোগ

যুক্তরাষ্ট্রে ‘কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ফর বেটার লিভিং’য়ের প্রতিষ্ঠাতা টাটিয়ানা মেস্তেচিকিনা, পিএইচডি বলেন, “চারিদিকে অসংখ্য নেতিবাচক বিষয় থাকলেও ইতিবাচক ঘটনাও কম নেই। নিজের জীবনের সেই ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে এবং সেগুলোর জন্য মনে কৃতজ্ঞতা পোষণ করার চেষ্টা করতে হবে। একে অভ্যাসে পরিণত করার জন্য প্রতিদিন জীবনের যে বিষয়গুলোর জন্য আপনি ধন্য সেগুলোর তালিকা বানাতে পারেন। সেটা হতে পার সুস্বাদু কোনো খাবার থেকে পারিবারিক প্রসংশা পর্যন্ত যেকোনো কিছুই।”

যে কাজ মনকে চাঙ্গা করে

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট’ ও ‘বিহেভিয়ার হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস’ সংস্থার কর্ণধার সারি শেইট, পিএইচডি বলেন, “এমন একটা কাজ খুঁজে বের করতে হবে তা আপনি প্রতিদিন করলেও বিরক্তি আসে না, বরং আনন্দ পান। এদের মধ্যে থাকতে পারে গান শোনা, বাইরে হাঁটতে যাওয়া, বই পড়া, গরম পানি দিয়ে লম্বা একটা গোসল ইত্যাদি। তবে এমন কাজের শেষ নেই, আপনাকে শুধু আপনার নিজের জন্য কোনটা প্রযোজ্য সেটাই খুঁজে নিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক সময় মন খারাপ থাকলে নিজের প্রিয় কাজগুলোর কথা চট করে মাথায় আসে না। এজন্য আমার রোগীদের প্রায়ই বলি নিজের প্রিয় কাজগুলোর তালিকা বানাতে, যাতে ওই সময়গুলোয় হাতে কাছে মন ভালো করার কি সুযোগ আছে তা দেখে নেওয়া যায়।”

ডাইরি লেখা

ডা. শেইট বলেন, “মন মেজাজ সামলানোর চমৎকার উপায় ডাইরিতে মনে কথাগুলো লেখা। গবেষণায়ও দেখা গেছে এই অভ্যাস হতাশা, মানসিক অস্বস্তি, মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। মনের কষ্ট, ক্ষোভ, ভয়গুলোকে ডায়রিতে লিখে রাখার কোনো ভুল পদ্ধতি নেই। তবে শুধু নেতিবাচক কথাই নয়, জীবনের ভালো দিকগুলো নিয়েও লেখা উচিত। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল আবেগের স্রোতে গা ভাসিয়ে না দিকে জীবনের আনন্দঘন মুহূর্তগুলোকেও মনে রাখা।”

পরিবার ও বন্ধুদের কাছাকাছি থাকা

ডা. শেইট বলেন, “সামাজিক সম্পর্কগুলো প্রতিটি মানুষের ভালো থাকার জন্য জরুরি। বর্তমান মহামারীর কারণে প্রিয় মানুষগুলো সঙ্গে মেলামেশা হয়ত কঠিন হয়েছে, তবে তা অসম্ভব হয়ে যায়নি। ফোনে যোগাযোগ করতে পারেন, ভিডিও কলে আড্ডা দিতে পারেন। এমনকি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাক্ষাৎ করতেও মানা নেই।”

আনন্দঘন মুহূর্তগুলো উপভোগ করা

নিউ ইয়র্কের লেনক্স হিল হাসপাতালের ‘ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট’ সাবরিনা রোমানফ বলেন, “মন খারাপ হলে যদি সেই চিন্তাগুলো নিয়েই পড়ে থাকেন তবে ভালো কিছু হওয়া সম্ভব নয়। মন খারাপের মুহূর্তগুলো আনন্দঘন কোনো পরিবেশে গেলে, জীবনে কোনো খুশির মুহূর্ত আসলে তাকে উপভোগ করার চেষ্টা করতে হবে। নিজের মানসিক গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে বর্তমান অভিজ্ঞতায় সক্রিয় হতে হবে। আপনার আশপাশে মজার কিছু ঘটলে সেদিকে নজর না দিয়ে অতীতে নেতিবাচক ঘটনায় ডুবে থাকাটা নিজের প্রতিই অন্যায়।”

নেগেটিভ ভিজ্যুয়ালাইজেশন

“নেতিবাচক অভিজ্ঞতায় আটকে থাকা খুব সহজ কাজ। তবে আপনি যদি তা থেকে বেরিয়ে আসতে চান তবে প্রথমেই সেই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিতে হবে, বলেন”, ডা. রোমানফ।

তিনি আরও বলেন, “বরং চিন্তা করুন জীবনের কোনো একটা ভালো ঘটনা বা প্রাপ্তির কথা। এবার ভেবে দেখুন, ওই ঘটনাটা যদি না ঘটত, তবে আপনার জীবন আজ কেমন হত। মনে করুন আপনার প্রিয় বন্ধুর কথা। ভেবে দেখুন তার সঙ্গে পরিচয় না হলে আপনার অবস্থা আজ কি হত। এই চিন্তাগুলো আপনাকে বর্তমানে সে বিষয়গুলো বিষণ্ন করছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।”

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন