কোভিড-১৯’য়ের বিচিত্র লক্ষণ

স্বাদ হারানো, গন্ধ না পাওয়া ছাড়াও রয়েছে অদ্ভূত কিছু উপসর্গ।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2020, 10:25 AM
Updated : 18 Nov 2020, 10:25 AM

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে একথা এতদিন হয়ত সবাই জেনে গেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ওপরেও এর ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব আছে।

‘অ্যাবডমিনাল রেডিওলজি’ শীর্ষক সাময়িকীতে প্রকাশিত নতুন গবেষণা অনুযায়ী, হজমতন্ত্রের ওপর ‘কোভিড-১৯’য়ের তিনটি প্রভাবকে হয়ত ভিন্ন সমস্যা মনে করে ভুল করা হচ্ছে।

চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত সময়ে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত ৩৬টি গবেষণা পুনঃবিশ্লেষণ করেন ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালবার্টা’র ‘ডিপার্টমেন্ট অফ রেডিওলজি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ইমেজিং’।

জানা যায়, প্রায় ১৮ শতাংশ করোনাভাইরাস রোগীর মাঝে হজমতন্ত্রের সমস্যা দেখা যায়। ১৬ শতাংশ করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল’ সমস্যার ভোগেন।

হজমতন্ত্রের সমস্যাগুলোর মধ্যে খাওয়ার রুচি হারানো, বমিভাব ও বমি, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা এই উপসর্গগুলোই বেশি দেখা যায় বেশি। তবে অল্প কিছু রোগীর মধ্যে অন্ত্রের প্রদাহ, অন্ত্রের দেয়ালে বাতাস জমা কিংবা ছিদ্র হতেও দেখা গেছে।

মেয়ো ক্লিনিক’য়ের মতে, ‘বাওয়েল ইনফ্লামেইশন’ বা অন্ত্রের প্রদাহ থেকে অবসাদ, পেট ব্যথা, খাওয়া রুচি হারানো, ওজন কমে যাওয়া, ডায়রিয়া, মলের সঙ্গে রক্ত আসা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে অন্য দুটি উপসর্গের পরিণাম আরও ভয়াবহ হওয়া সম্ভব।

অন্ত্রের দেয়ালে বাতাস জমাকে বলা হয় ‘নিউমাটোসিস ইন্টেন্টিরালিস’, যেখানে পেটের একটি অংশ ফুলে ওঠে। সঙ্গে থাকতে পারে ব্যথা, ডায়রিয়া, মলের সঙ্গে রক্ত ইত্যাদি।

‘বাওয়েল পার্ফোরেশন’ বা অন্ত্রের দেয়াল ছিদ্র হয়ে গেলে রোগীর থাকবে জ্বর, কাঁপুনি, প্রচণ্ড পেট ব্যথা, বমিভাব ও বমি।

হজমতন্ত্রের ভেতরের কোনো উপাদান বাইরে বেরিয়ে আসলে তা সৃষ্টি করবে ‘সেপসিস’ যা ডেকে আনতে মৃত্যু।

ভয়ংকর এই সমস্যাগুলোর পেছনে যে শুধু করোনাভাইরাসই দায়ি তা নয়। আর এই উপসর্গগুলো দেখলে যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বোঝা যাবে সেটাও ঠিক নয়।

তবে চিকিৎসদের এই বিষয়গুলো নিয়েও তদন্ত করা উচিত, বলেন গবেষণার সহকারী লেখক মিচ উইলসন, এমডি।

এগুলো ছাড়াও ‘কোভিড-১৯’য়ের আরও কিছু উপসর্গ আছে যাকে মানুষ ভিন্ন সমস্যার পূর্বাভাস মনে করে বিভ্রান্ত হতে পারেন।

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল এমন কয়েকটি উপসর্গ।

ডেলিরিয়াম

মানসিক কার্যক্ষমতায় মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়াই হল ‘ডেলিরিয়াম’। এক্ষেত্রে মানুষ প্রচণ্ডা দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভোগে এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হওয়ার পর অল্প সময়ের ব্যবধানেই এই উপসর্গ দেখা দেয়।

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ফরাসি এক গবেষণায় অংশগ্রহণকারী রোগীর ৮০ শতাংশের মাঝে ‘নিউরোলজিকাল’ সমস্যা দেখা যায়, যার মাঝে ‘ডেলিরিয়াম’ও ছিল।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহের অভাব কিংবা ‘নিউরন’য়ের প্রদাহ দেখা দিতে পারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে। আর তা থেকেই মানসিক এই সমস্যাগুলো দেখা দেওয়া সম্ভব। 

স্বাদ ও ঘ্রাণ শক্তির পরিবর্তন

স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি হারানো সম্ভব করোনাভাইরাসের সবচাইতে বেশি চোখে পড়া উপসর্গ। তবে একই ইন্দ্রিয়ের ওপর ভিন্ন প্রভাবও দেখা গেছে করোনাভাইরাসের। অনেক রোগীর দাবি তারা কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বাজে স্বাদ ও গন্ধ টের পান। যেমন- গ্যাসোলিন কিংবা পঁচা খাবারের গন্ধ।

ত্বকের র‌্যাশ

ত্বকে জালের মতো দেখতে কোনো র‌্যাশ দেখা দিলে দ্রুত ‘কোভিড-১৯’ পরীক্ষা করানো উচিত। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ৬০ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে যে রোগীর মাঝে কোভিড-১৯’য়ের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে যাদেরই ত্বকে ‘রেটিফর্ম পারপুরা’ নামক জালের মতো দেখতে র‌্যাশ দেখা দিয়েছে, তাদেরকে শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

ঘুমের সমস্যা

করোনাভাইরাস ও সম-সাময়িক অবস্থা নিয়ে প্রায় সকলেই দুশ্চিন্তায় আছেন, নির্ঘুম রাত কাটছে। তবে এই ভাইরাসটাও আপনার ঘুম কেড়ে নিতে সক্ষম। ‘কোভিড-১৯’য়ের কবল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসা অনেকেই বলেছেন তাদের ঘুমের সমস্যা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন