স্বামী, স্ত্রী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের আয় রিটার্নে যেভাবে দেখাবেন

করদাতার স্বামী বা স্ত্রী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের নামে যদি পৃথকভাবে টিআইএন না থাকে তাহলে তাদের আয়ও করদাতার আয়ের সঙ্গে একত্রে দেখাতে হবে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2020, 06:14 AM
Updated : 14 Nov 2020, 06:14 AM

দেখা গেল, স্বামী চাকরি করেন এবং বেতন থেকে যে করযোগ্য আয় হয়েছে তা করমুক্তসীমা অতিক্রম করেছে। তাই তাকে বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।

কিন্তু তার স্ত্রী একজন গৃহিণী এবং তার আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করেনি। তাই তার টিআইএন নেই।

এখন যদি দেখা যায়, আপনার গৃহিণী প্রতি মাসে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করে ব্যাংকে এফডিআর করেছেন এবং তা থেকে তিনি সুদ পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে ওই সুদও আপনি যখন করযোগ্য আয় হিসাব করে রিটার্ন তৈরি করবেন তখন আপনার করযোগ্য আয়ের সঙ্গে যোগ করে দেখাতে হবে।

আমরা যখন আয়কর রিটার্ন তৈরি করি তখন পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী যাদের জন্য বাধ্যতামূলক তারা দাখিল করে থাকি। এই বিবরণী তৈরি করার সময় স্ত্রীর যে সোনা আছে তা কিন্তু উল্লেখ করে দেই।

ঠিক তেমনি, স্ত্রীর যদি আয় থাকে তাহলে তাও স্বামীর করযোগ্য আয়ের সঙ্গে যোগ করে দেখাতে হবে।

আবার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের নামে যদি কোনো আয় হয় তাহলে ওই আয়ও বাবা/মা যার টিআইএন আছে তার সঙ্গে দেখাতে হবে। বাবা এবং মা দুজনেই যদি করদাতা হন তাহলে যেকোনো একজনের সঙ্গে যোগ করে দিলেই হবে।

স্ত্রী যদি করদাতা হন এবং স্বামীর আয় যদি করযোগ্য না হয় সেক্ষেত্রেও স্বামীর আয় স্ত্রীর করযোগ্য আয়ের সঙ্গে যোগ করে দেখাতে হবে।

অর্থ আইন ২০২০ অনুযায়ী টিআইএন থাকলেই ২০২০-২১ কর-বর্ষ থেকে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শুধু ক্রেডিট কার্ড এবং জমি বিক্রির জন্য যদি কোনো ব্যক্তি টিআইএন নিয়ে থাকেন এবং তার করযোগ্য আয় যদি করমুক্ত সীমা অতিক্রম না করে তাহলে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে রিটার্ন দাখিল করা থেকে বাদ রাখা হয়েছে।

গত একটি লেখায় আমরা জেনেছিলাম, গৃহিণীর যদি সঞ্চয়পত্র থাকে এবং সেখান থেকে যে সুদ পেয়েছেন তা থেকে উৎসে কর কর্তন করে রাখা হয়। যদি তার আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম না করে তাহলে এতদিন পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক ছিলো না।

সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে টিআইএন লাগে। যেহেতু টিআইন আছে তাই এ বছর থেকে তাকে আলাদাভাবে তার আয় দেখিয়ে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। স্বামীর আয়ের সঙ্গে আর দেখাতে হবে না।

আরেকটি কাজ করতে হাবে, এতদিন স্ত্রী রিটার্ন দাখিল না করাতে স্বামীর রিটার্নে তার যে সম্পদ যেমন- সোনা বা অন্যান্য যদি আরও থাকে দেখিয়েছিলেন সেগুলো আর স্বামীর রিটার্নে দেখাতে হবে না।

স্ত্রী তার নিজের রিটার্নে দেখাবেন। যেহেতু এখন থেকে স্ত্রী তার আয় রিটার্নে দেখাচ্ছেন তাই তার যাবতীয় আয়, ব্যয় এবং সম্পদের তথ্যও তার রিটার্নেই দেখাবেন।

এ বছর থেকে যেহেতু টিআইএন থাকলেই রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তাই স্বামী/স্ত্রীর মধ্যে যদি একজন করদাতা হন এবং আরেকজনের আয় যদি করমুক্ত সীমার নিচে থাকেন তাহলে তিনিও টিআইএন নিয়ে নিতে পারেন।

এতে করে করদাতা ব্যক্তির করের পরিমাণ কমবে।

ধরুন, স্বামী করদাতা। এতদিন স্ত্রীর যেহেতু আয় করমুক্ত সীমার নিচে তাই স্ত্রীর আয় স্বামীর আয়ের সঙ্গে দেখিয়ে দিতেন। এতে করে স্বামীর করের পরিমাণ বেড়ে যেত।

এখন যেহেতু স্বামী এবং স্ত্রী দুই জনেরই টিআইএন আছে তাই দুজনেই রিটার্ন দাখিল করবেন। স্ত্রীর আয় যেহেতু করমুক্ত সীমার নিচে তাই তাকে কোনো কর দিতে হবে না। শুধু রিটার্ন দাখিল করলেই হবে।

অন্যদিনে স্বামী যখন রিটার্ন দাখিল করবেন তখন তিনি শুধু তার আয়ই রিটার্নে দেখাবেন। স্ত্রীর আয় যেহেতু এবার দেখাচ্ছেন না তাই তার আয় গত বারের মতো বাড়বে না ফলে করের পরিমাণ কমে যাবে।

লেখক: জসীম উদ্দিন রাসেল, আয়কর পরামর্শক এবং প্রশিক্ষক।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন