জলবায়ুর পরিবর্তনে ক্যান্সার আক্রান্তের পরিমাণ বাড়তে পারে

দূষণ, দাবানল, দুষিত বাতাস ইত্যাদির কারণে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার পরিমাণ বাড়তে পারে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

লাইফস্টাইল ডেস্ক আইএএনএসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2020, 03:53 PM
Updated : 9 Nov 2020, 03:53 PM

জলবায়ুর পরিবর্তন বিশ্বব্যাপি বড় ধরনের দুর্যোগ বয়ে আনবে। বিশেষজ্ঞরা এমন সতর্কবানী দিয়ে আসছেন বহুদিন ধরে। তাপমাত্রা, দাবানল, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের মাত্রা ও তীব্রতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, কমছে বাতাসের মান। সেই সঙ্গে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন বাড়াবে ক্যান্সারের মাত্রাও, বিশেষ করে ফুসফুস, ত্বক ও অন্ত্রের।

‘দ্য ল্যানসেট অনকোলজি’ শীর্ষক সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’য়ের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে। পরিবেশে দূষণ, অতিবেগুনি রশ্মীর তেজস্ক্রিয়তা, বায়ুদূষণ, সংক্রামক জীবাণু, খাদ্য ও পানির মজুদে বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয় এই গবেষণায় বিবেচনায় আনা হয়।

গবেষকদের দাবি, “বিশ্বব্যাপি ক্যান্সারের মোকাবেলায় সবচাইতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে চিকিৎসা ব্যাবস্থায় সৃষ্টি হওয়া বিশৃঙ্খলা। ক্যান্সার শনাক্ত করা, এর চিকিৎসা, পরিচর্যা সবকিছুই জটিল প্রক্রিয়া।”

গবেষণার প্রধান, যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র অধ্যাপক রবার্ট এ হিয়াত বলেন, “বিশ্বব্যাপি জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে লড়াই চলছে ঠিক, কিন্তু ‘গ্রিনহাউজ গ্যাস’য়ের নির্গমন কমাতে মানুষের মাঝে যথেষ্ট চেষ্টা নেই।”

জনসাধারণের স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের আছে বড়মাপের প্রভাব। আর জলবায়ু বিরূপ পরিবর্তন হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যাবে না, তাই মানুষজাতির স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব চলতেই থাকবে দূরবর্তী ভবিষ্যত পর্যন্ত। বিশেষ করে পরিবেশের উচ্চ তাপমাত্রা, দূষিত বাতাস, দাবানল ইত্যাদির কারণে মানুষের শ্বাসতন্ত্র ও হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি বাড়ে মারাত্বক হারে।

ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বাড়ার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে উষ্ণ জলবায়ু আর বৃষ্টির নিয়মে তারতম্য। আর যে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো হাজারও মানুষের অপঘাতে প্রাণ কেড়ে নেয়, সেগুলো সৃষ্টি হওয়া পেছনে প্রধান কারণই হল জলবায়ুর পরিবর্তন।

গবেষকরা আরও জানান, “ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার পরিবেশগত প্রধান কারণ হল বায়ুদূষণ, অতিবেগুনি রশ্মীর তেজস্ক্রিয়তা, বাণিজ্যিক কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া এবং খাদ্য ও পানির মজুদে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা। পরিসংখ্যান বলে, ফুসফুস ক্যান্সার ইতোমধ্যেই সবচাইতে বেশি প্রাণঘাতি। আর বায়ুদূষণে ক্রমবর্ধমান গতি এর প্রাণনাশের ক্ষমতাকে আরও বাড়াবে। ধারণা করা হয়, একসময় ১৫ শতাংশ ক্যান্সারের জন্য দায়ি হবে শুধুই বায়ুদূষণ।

ক্যান্সারের চিকিৎসা খাতেও বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে জলবায়ুর পরিবর্তন। বর্তমান করোনাভাইরাস মহামারী এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপি সকল চিকিৎসা খাতের মানুষকে ঝাপিয়ে পড়তে হয়েছে করোনাভাইরাস দমনে। ফলে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা কমেছে, থমকে গেছে এই রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন। আবার ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে অনেক রোগী সময় মতো চিকিৎসা নিতে পারছেন না। অনেকেই উপসর্গ থাকার পরেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন না এই ভাইরাসের ভয়ে।

ভাইরাস আতঙ্ক না থাকলে ওই রোগীর ক্যান্সার হয়ত প্রাথমিক অবস্থাতেই শনাক্ত করা সম্ভব হত, যা তার সুস্থ হওয়া সম্ভাবনাকে জোরদার করত।