‘লং-ডিস্টেন্স’ সম্পর্কে যা করা ঠিক বা ভুল

একটু সচেতন হলে ও সাধারণ কিছু বিষয় মাথায় রেখে নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে গেলে সম্পর্ক সার্থক করা সম্ভব।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2020, 09:57 AM
Updated : 16 Oct 2020, 09:57 AM

সম্পর্ক-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে ‘দূরত্বের’ সম্পর্ক সার্থক করতে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয় সেই সম্পর্কে জানানো হল।

করণীয়: দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তা ভাবনা

আপনার সম্পর্ক কত দিন স্থায়ী হতে চলেছে তা ভেবে চিন্তিত হতে পারেন। স্বাভাবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি বিষয়টিকে আপনার মন থেকে বাদ দিতে পারেন, দীর্ঘ দূরত্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাভাবিক সম্পর্কের চেয়ে ‘লং-ডিস্টেন্স’ সম্পর্ক কিছুটা আলাদা, এর জন্য চিন্তা করতে হয় খানিকটা ভিন্নভাবে এবং সঙ্গীর সঙ্গে এবিষয়ে আলোচনা করা উচিত।

নিউইয়র্কের একজন উদ্যোক্তা আন্দ্রেয়া মিরান্দা জানান তিনি স্পেনের সেভিলিয়ার অধিবাসি রিচির সঙ্গে দীর্ঘদিন দীর্ঘ মেয়াদি সম্পর্কে আছেন।

“লং-ডিস্টেন্স’ সম্পর্ক একটা দীর্ঘমেয়াদি খেলার মতো যা স্বাভাবিক সম্পর্কের চেয়ে আলাদা। দীর্ঘমেয়াদী ও ‘লং-ডিস্টেন্স’ সম্পর্ক সাধারণত এমন মানুষের সঙ্গে হয় যারা ভবিষ্যতে একসঙ্গে থাকতে চান।” বলে মন্তব্য করেন তিনি।

যা করবেন না: অতিরিক্ত যোগাযোগ

নিউইয়র্কে বসবাসরত একজন অভিনেতা জিলিয়ানের সঙ্গী নীনা ফ্লোরিডার সারাসিটায় একজন শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করতেন এবং তখন জিলিয়াম মনে করতেন অতিরিক্ত যোগাযোগ করা একটা বড় সমস্যা।

তার মতে, “যোগাযোগে খুব বেশি সময় ব্যয় করা হলে তা বেশি আবেগিক হয়ে উঠতে পারে যা কথোপকথনের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখতে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মতো। অন্তরঙ্গ সময় কাটাতে দুজনে সময় বের করা প্রয়োজন।”

করণীয়: যোগাযোগের ধরন যেন সব সময় একই থাকে

ফ্লোরিডার অরল্যান্ড এবং নিউ ইয়র্কের ব্রকলিনের চার্লস এবং তার সঙ্গী জ্যাক ‘লং-ডিস্টেন্স’ সম্পর্কে আছেন। তারা তাদের যোগাযোগ সম্পর্কে জানান।

“যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় প্রায় একই রকমভাবে যোগাযোগ করে থাকি। লং ডিস্টেন্স সম্পর্কে যোগাযোগই আসল, যদি এটা ঠিক না থাকে তাহলে আসলে কোনো কিছুই আর বাকি থাকে না।”

যা করবেন না: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নির্ভর করা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হবেন না। এটা আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। কারণ এর মধ্য দিয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। অন্যকে ঈর্ষান্বিত করতে ছবি বা ‘স্টোরি’ পোস্ট করার কোনো মানে নেই।

“কারণ এটা হয়ত ছোট বেলায় কাজে দিত। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এর কোনো ফলাফল নেই” এমনটাই জানান আন্দ্রেয়া।

নিনা ও জিলিয়ান বলেন “এই ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা প্রয়োজন। একে অপরের প্রতি স্বচ্ছ থাকার মাধ্যমে অনেক বেশি সংযুক্ত থাকা যায়। যোগাযোগ মূল চাবিকাঠি। তার মানে এই নয় যে আপনাকে দুর্বল হয়ে পড়তে হবে। ‘আমার খারাপ লাগছে ও তোমাকে মিস করছি’ এই কথাগুলো বলুন।

এই স্বচ্ছতা একে অপরকে আরও কাছে আনে। তাই সঙ্গীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকলাপের ওপর খুব বেশি মনোযোগ না দিয়ে বিশ্বস্ততা বজায় রাখুন ও তা স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করুন।”

করণীয়: ‘ডেট নাইট’য়ের পরিকল্পনা

সম্পর্ককে কার্যকর রাখতে ডেইট পরিকল্পনা করা ভালো উপায়। প্রতিদিন বা সপ্তাহিক যোগাযোগের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে ‘ডেট’ পরিকল্পনা করা যেতে পারে যেখানে একসঙ্গে দুইজন একই সিনেমা দেখা বা গেইম খেলতে পারেন।

নিনা ও জিলিয়ান তাদের বিশেষ ‘ডেট নাইট’গুলো ভিন্নভাবে কাটান। তারা একসঙ্গে অনলাইনে গেইম খেলেন বা শোয়ার সময় একে অপরকে কবিতা ও গল্প পড়ে শুনিয়ে কাটান।

যা করা যাবে না

আন্দ্রেয়ার মতে, সব কিছুই আপনার সময়সীমা মতো হবে তা ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। হতে পারে আপনি তার সঙ্গে সারা জীবন কাটাতে চান। তবে তা ঠিক করার আগে যথেষ্ট সময় নিন। সঠিক ব্যক্তি আপনার জন্য ঠিকই সময় বের করবে এবং  আপনার সঙ্গে থাকার উপায়ও খুঁজে বের করবে।

করণীয়: মাঝে মধ্যে বেড়াতে যান

চার্লস ও জ্যাক শুরু থেকেই জানতেন যে তারা একসঙ্গে থাকবেন। আমরা ‘মিউচুয়াল’ বন্ধু দ্বারা পরিচিত হই। কিন্তু অনেকদিন পর্যন্ত আমরা ‘ডেইট’ শুরু করিনি। তবে আমরা প্রায়ই একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম।  

আগে আমরা সারাদিন কথা বলতাম। কাজের জন্য আমি নিউ ইয়র্কে যেতে পেরেছিলাম এবং সময় সুযোগ হলেই আমরা দেখা করতাম।

“একে অপরের সঙ্গে পরিকল্পনা করে দেখা করা দরকার। দৈনিক হয়ত সরাসরি দেখা হয় না। তাই পরিকল্পনা করে একে অপরের সঙ্গে ভালো সময় কাটানোর ব্যবস্থা করুন। দুজনে একসঙ্গে নতুন কোথাও যাওয়া, নতুন স্মৃতি তৈরি করা বা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।”

আন্দ্রেয়ার মতে কেউ যদি আপনার বিষয়ে আগ্রহী না হন তাহলে সে আপনার সঙ্গে এসব বিষয়ে পরিকল্পনা করতেও সম্মত হবে না।

যা করবেন না: স্বাস্থ্যকর সীমারেখা রাখতে ভুলে যাওয়া

সম্পর্ক অনেক সময় খুব বেশি আগ্রহের কারণ হতে পারে। তাই বলে নিজেদের মাঝে কোন সীমারেখা না থাকাটা ঠিক নয়। সঙ্গীকে নিজের ঠিক বা ভুল জানানো সম্পর্কে জানানোতে কোনো ভুল নেই। তবে তার একটা নির্দিষ্ট সীমা থাকা উচিত। এই সীমা রেখা ভবিষ্যতে সমস্যা এড়াতে সহায়তা করবে।

আন্দ্রেয়া বলেন, “সঙ্গীকে যখন তখন উন্মাদের মতো (সারাক্ষণ) এসএমএস দেওয়া ঠিক না। অনুভূতি সত্যি হলে আপনি নিজে থেকেই তা অনুভব করতে পারবেন।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন