বাসা ছোট বা বড় যেমনই হোক না কেনো তাতে বাগানের ব্যবস্থা করা হলে দেখতে যেমন সুন্দর লাগে তেমনি সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতেও ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে ‘আর্বান গার্ডেনিং’ ধারণাটা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শহরের অনেকেই এখন বাসা ছোট বা বড় সেই ভিত্তিতে ঘরের ভেতরে, বারান্দায়, রান্নাঘরে এমনকি দরজার বাইরে ও সিঁড়িতে গাছ রাখার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।
টেবিল প্ল্যান্ট: ছোট পাত্রে রাখা গাছ একাই বসার ঘর বা কাজের জায়গাকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে। চাইলে ক্যাকটাস, বনসাই, ফার্ন ও অ্যালোভেরার গাছও রাখা যায় টেবিলে।
এগুলো ছোট হওয়ায় খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না। তাই যারা ছোট ফ্ল্যাট বা হাউজিংইয়ে থাকেন তাদের জন্য এটা ভালো উপায়।
ঘরের অভ্যন্তরীণ সাজে নতুন মাত্রা যোগ করতে ঘরে ‘সবুজায়ন’ বেশ ভালো উপায় এবং এটা সারা দিনের কাজের চাপ ও ক্লন্তিভাব দূর করতেও সহায়ক।
গণমাধ্যমকর্মী আইরিন সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি দেখেছি ইন্ডোর প্ল্যান্ট বলা হলেও আমাদের দেশে ঘরের ভেতরে কোনো গাছ একটানা তিন-চার দিন রাখলে অনেকটা নির্জীব হয়ে পড়ে। হতে পারে এটা আমাদের দেশের বাড়ি তৈরির ধরনের কারণে। তাই এদের দুতিন পর পর বাইরে রোদে দেওয়া দরকার”
ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারের অধিবাসী আগ্নেশ লীরা জানান বাসা ছোট আর বারান্দায় খুব একটা আলো বাতাস না আসায় ঘরের টেবিলেই তিনি কয়েটি ছোট গাছ রেখেছেন। এদের ঠিকঠাক যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করেন আর সপ্তাহের শুক্র ও শনি এই দুদিন গাছগুলোকে রোদে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
‘গুডলাক’ বা সৌভাগের গাছ: অনেকেই মানি প্ল্যান্টকে সৌভাগ্যের গাছ বলে মনে করে থাকেন। ফলে বাড়িতেও রাখেন। এটা কেবল বাড়ির সৌন্দর্যই বাড়ায় না বরং সৌভাগ্যের সঙ্গেও জড়িত এমনটা ভাবেন অনেকে। সৌভাগ্যের গাছ হিসেবে ‘পিস লিলি’ ও ‘লাকি ব্যাম্বো’ বেশ সুপরিচিত।
গাছ প্রেমি কম বেশি বেশি সবার বাসায় মানি প্ল্যান্ট চোখে পড়ে। কেউ বা ঘরের ভেতর, কেউ বারান্দার গ্রিলে, কেউ বা দরজার বাইরে মানি প্ল্যান্ট রেখে থাকেন।
আইরিন সুলতানা তাই দরজার বাইরে মানি প্ল্যান্ট রেখেছেন। এটা দেখতে সুন্দর ও যত্ন কম লাগে তাই খুব একটা মাথায় ঘামাতে হয় না এর পরিচর্যা নিয়ে।
আগ্নেশ নিজের ড্রয়িংরুমের একপাশের জানালার গ্রিলে রেখেছেন মানি প্ল্যান্ট।
তিনি বলেন, “ঘরে ঢুকেই আগে চোখে পড়ে এই গাছ, মনটা এমনিতেই একটু সতেজ হয়ে যায়। আর এই গাছ লতানো হওয়ায় তা নিজের পছন্দ মতো গ্রিলে সাজিয়েও দিতে পারি, দেখতে আরও ভালো লাগে।“
ঝুলন্ত গাছ: ছোট বাসার গাছ রাখার জায়গার অভাব হলে ব্যবহার করতে পারেন ঝুলন্ত গাছেন। দড়ির সাহায্যে জানালার রড বা বারান্দার কোনায় ঝুলিয়ে রাখতে পারেন পছন্দের গাছ। ঘরের অভ্যন্তরে বেঁচে থাকতে পারে এমন যে কোন গাছই রাখতে পারেন এখানে।
নিজেকে ব্যস্ত রাখার অন্যতম ভালো উপায় হল বাগান করা এবং একই সঙ্গে ঘরে পড়ে থাকা বাড়তি জায়গাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের সুন্দর উপায়। এটা অনেকটা পোষা প্রাণীর বা শিশুর যত্ন করার মতো যা আপনাকে ইতিবাচক অনুভূতি দান করবে।
রাজধানীর সাধনপাড়ার স্থানীয় অধিবাসী বিন্দু গমেজ গাছ ভালোবাসেন।
আইরিন সুলতানার কথায়, “বারান্দায় কয়েকটি টব ঝুলিয়েছি, এতে ঝাড়ু দেওয়া ও পরিষ্কার রাখা সহজ। তাছাড়া আমি নিজের সুবিধা মতো প্লান্টারও বানিয়ে নিয়েছি যেন সুবিধাজনক জায়গায় রাখতে পারি।”
আজকাল বিভিন্ন নার্সারিতে এমনকি অনলাইনেও প্লান্টার কেনার বা নিজের পছন্দ মতো অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান, এই গণমাধ্যমকর্মী।
রান্নাঘরে বাগান: বাগানের ক্ষেত্রে রান্নাঘরে বাগান করা একটা চমৎকার বিষয়। এর বেশ কিছু সুবিধাও আছে। রান্নাঘরে বাগান করা হলে নিজের পছন্দ মতো সবজির গাছ রাখতে পারবেন এবং তাজা সবজি খাওয়ার স্বাদও গ্রহণ করতে পারবেন।
অনেকেই জায়গার অভাবে, অনেকে আবার শখের বশেও রান্না ঘরে গাছ রেখে থাকেন। সাধারণত, সবজি, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা ইত্যাদি গাছ রাখা হয় রান্না ঘরে।
বাগান করার কেবল ইচ্ছা থাকলেই হবে না। গাছ সম্পর্কে জানা, তার পরিচর্যার ধরণ এবং কোন ধরনের গাছ ঘরে বা বারান্দায় টিকে থাকতে পারে তা বুঝে গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন আইরিন সুলতানা।
গাছ সম্পর্কে জানাশোনা না থাকায় অনেকেই আবেগের কারণে অনেক গাছ কিনে ফেলেন এবং তার ঠিকঠাক যত্ন না করায় গাছগুলো মারা যায়। এভাবে অনেকেই আবার বাগান বিমুখও হয়ে পড়েন।
বিন্দু গমেজ বলেন, “আগে না বুঝেই পছন্দমতো গাছ কিনে লাগাতাম এখন আর তা করি না। যে গাছ আমার ঘরে টিকিয়ে রাখা সম্ভব সেগুলোই লাগাই। অনেকবার গাছ নষ্ট করে ফেলেছি না জানার কারণে এখন আর তেমন ভুল করি না।”
আগ্নেশ জানান, তার বসার ঘরেই আলো বাতাস ঠিক মতো আসে তাই এখানেই তিনি টেবিলে কয়েকটা গাছ রেখেছেন। বারান্দায় জায়গা কম আলোও কম আসে তাই বারান্দায় লতানো গাছ (অপরাজিতা ও করলা গাছ) বুনেছেন তিনি।
গাছের মাটি তৈরি করাটা গুরুত্বপূর্ণ। টব সম্পূর্ণ মাটি দিয়ে ভর্তি করা থাকলে তাতে পানি দেওয়া সমস্যা। তাছাড়া, কেবল মাটি থাকলে নিয়মিত পানি দিতে দিতে তা নিচের দিকে চেপে যায় ও শক্ত হয়ে যায়, এতে শিকড় ঠিক মতো ছড়াতে পারেনা। তাই মাটিটা একটু বুঝে নিজে তৈরি করে নেওয়াই ভালো।
বিন্ধু গমেজ জানান, তিনি নিজেই ঘরে জৈব সার তৈরি করেন সবজি, কলার খোসা ইত্যাদি দিয়ে, এছাড়াও মাঝে মধ্যে সুযোগ করে বাইরে থেকে সার কিনে আনেন তিনি।
বালু বা নারিকেলের পিট মানি ধরে রাখে না ফলে গোড়ায় পানি জমে থাকে না। এছাড়াও বৃষ্টির পানি নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ হওয়ায় তা গাছে দিলে, গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
বৃষ্টির পানি গাছের দেওয়া সম্পর্কে আগ্নেশ লীরা ও বিন্দু গমেজও জানিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে। এটা গাছকে সতেজ করে ও দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কেউ আনন্দের জন্য, কেউ তাজা সবজির জন্য, কেউবা বিনোদনের জন্য বাগান করে থাকেন। শহরে বাগান করার জন্য যেমন আবগের প্রয়োজন তেমনি আবার সুস্থ জীবনযাপনের জন্যও সবুজায়নের প্রয়োজন রয়েছে।
আরও পড়ুন