সব কিছুরই একটা নিয়ম আছে। সুস্থ থাকা কিংবা ওজন কমানোর জন্য ‘ডায়েট’ বা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা ক্ষেত্রেও নিয়ম মানতে হয়।
একেক জনের শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে একেক রকম ‘ডায়েট প্ল্যান’। অনলাইনে দেখলেন আর শুরু করে দিলেন ‘কিটো ডায়েট’, সেক্ষেত্রে হতে পারে হীতে বিপরীত। এজন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ‘ডায়েট’ শুরু করা মোটেই উচিত নয়।
‘ডায়েট’ করার কারণ
শুধু ওজন কমাতেই নয়, সুস্থ থাকার জন্যও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়।
পুষ্টিবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে মানুষের বয়স ও দৈনিক শারীরিক পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে একজন মানুষ কী ধরনের খাবার গ্রহণ করবেন।
যার শারীরিক পরিশ্রম বেশি তার সঙ্গে অফিসে বসে যিনি কাজ করেন তার ‘ডায়েট প্ল্যান’য়ের সঙ্গে অবশ্যই পার্থক্য থাকবে।
এছাড়া যাদের বিভিন্ন দীর্ঘদিনের রোগ রয়েছে, যেমন- ডায়াবেটিস, তাদের ‘ডায়েট’ ব্যবস্থাও হবে অন্যদের চেয়ে আলাদা।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে ভারতীয় পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরী বললেন, ‘‘কিটোজেনিক ডায়েট খুব মেপে মেপে মানতে হয়। আবার সবার জন্য এই ডায়েট প্রযোজ্য না। এই পদ্ধতিতে শর্করা ধীরে ধীরে কমিয়ে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হয়। যেহেতু কম খাওয়ার কারণে অনেক পুষ্টি উপাদান বাদ পড়ে, সেগুলো পূরণ করতে নানান ধরনের সাপ্লিমেন্ট বা ভিটামিন দেওয়া হয়। পুরো ব্যাপারটাই আসলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে করতে হয়।”
“হৃদরোগ বা গর্ভাবস্থায় এই ডায়েট না করাই উচিত। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ভুল ভাবে এ ডায়েট মানলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া, হাইপোটেনশন হতে পারে।”
দীর্ঘ দিন কিটো ডায়েট মেনে চললে বিভিন্ন অসুখও হতে পারে।
ভারতের আরেক পুষ্টিবিদ প্রিয়া আগারওয়ালের কথায়, “কিটো ডায়েটে প্রোটিন ও ফ্যাট বেশি গ্রহণ করা হয়। কোলেস্টেরলের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে ধমনি আটকে যেতে পারে। আবার প্রোটিন বেশি খাওয়া হয় বলে কিডনি বা বৃক্ককে বেশি কাজ করতে হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বৃক্ক।”
“কিটো ডায়েট থেকে হতে পারে ‘কিডনিতে স্টোন’ হতে পারে। বা যকৃতের ক্যান্সার। ‘ফ্যাটি লিভার’ থাকলে তাদের এই ডায়েট একদম করা উচিত নয়। গ্যাসট্রাইটিস এবং ডায়াবিটিস থাকলে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং থেকেও দূরে থাকতে হবে।”
কোন ধরনের খাবার কতক্ষণ পর পর খাবেন, কী নিয়মে খাবেন- এই পদ্ধতির নাম হল ‘ডায়েট’। বিশাল একটা সময় না খেয়ে থেকে তারপর শুধু ফল খেলেন বা একটি রুটি দিয়ে অল্প সবজি খেলেন তাহলে সেটার ফল হবে মারাত্মক।
ভারতীয় পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায় চৌধুরীর বলেন, “কিটো, ইন্টারমিটেন্ট- এই ধরনের ডায়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বা নিজের ইচ্ছে মতো করা যায় না। এগুলো একেক জনের ক্ষেত্রে একেক মেয়াদে করতে দেওয়া হয়।”
“মনে রাখতে হবে, সুষম খাবারই ঠিক ‘ডায়েট’। শরীরে যেমন প্রোটিনের দরকার আছে তেমনই দরকার হয় চর্বি, কার্বোহাইড্রেইট, নানান ধরনের ভিটামিন ও খনিজ।”
ওজন কমাতে হয় ধীরে ধীরে। অনেকেই বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলতে শুধু প্রোটিন গ্রহণ করা শুরু করেন। যা ঠিক না। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ধীরে ধীরে খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে, ধীরে ধীরে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে হয়।
আবার দীর্ঘ সময় না খেয়ে থেকে, দুএক ঘণ্টা পর পর অল্প অল্প খাবার খাওয়া উপকারী।
আসল কথা হল
যাই খাওয়ার হোক না কেনো পরিমিত খেতে হবে। ভাতে অভ্যস্ত বাঙালি, ছোট থেকে ভাত খেয়ে বড় হওয়া। তাই হঠাৎ ভাত খাওয়া ছেড়ে শুধু সবজি মাংস খেলে শরীর ভেঙে পড়তেই পারে। দেখা দিতে পারে নানান রোগ।
তাই সময় মতো পরিমিত খেয়ে সুস্থ থাকাই হবে আসল ফায়দা।
আরও পড়ুন