সম্পদের বিবরণ দাখিল করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক না

মোট পরিসম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা অতিক্রম না করলে আয়কর রিটার্নের সঙ্গে সম্পদ বিবরণী দাখিল বাধ্যতামূলক না।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2020, 11:42 AM
Updated : 11 Oct 2020, 11:42 AM

আগে এই সীমা ছিল ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। অর্থ আইন ২০২০ এর মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে তা ৪০ লাখ টাকায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে।

তবে এর বাইরে আরও কিছু শর্ত রয়েছে। যদি এর মধ্যে কোনো একটি শর্ত পূরণ হয় তাহলে বাধতামূলকভাবে পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী আয়কর রিটার্নের সঙ্গে সংযুক্ত করে দাখিল করতে হবে।

এর মধ্যে রয়েছে, যদি আয় বছরের শেষ তারিখে মোটর গাড়ি (জিপ বা মাইক্রোবাসসহ) এর মালিকানা থাকে অথবা কোনো সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গৃহ-সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হলে বা গৃহ-সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করলে বাধ্যতামূলকভাবে সম্পদের বিবরণ দিতে হবে।

উপরের শর্ত পূরণ না হলেও কোনো ব্যক্তি করদাতা চাইলে স্ব-প্রণোদিতভাবে পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী দাখিল করতে পারেন। যেহেতু এই বিবরণী পূরণ করা বেশ জটিল তাই না দেওয়াই ভালো।

করদাতার স্বামী/স্ত্রী বা নির্ভরশীল সন্তানের নামে যদি সম্পদ থাকে এবং তাদের যদি আলাদা কোনো টিআইএন না থাকে তাহলে উক্ত করদাতার সঙ্গে যোগ করে দেখাতে হবে।

পরিসম্পদ, দায় এবং ব্যয় বিবরণী পূরণ করতে গিয়ে যদি ছাপানো ফরমে জায়গা না হয় তাহলে আলাদা কাগজে বিবরণ দেওয়া যাবে। তবে সেক্ষেত্রে কর বছর, করদাতার টিআইএন, ক্রমিক নম্বর এবং নাম লিখে স্বাক্ষর দিতে হবে।

শুধু এই বিবরণী না, আপনি যদি আলাদা করে কোনো কর বা আয় গণনার কাগজ দিতে চান তাহলেও তাতে এসব তথ্য দিয়ে দেবেন। এতে করে আপনার প্রদত্ত কাগজ হিসেবে আয়কর কর্মকর্তার কাছে বিবেচিত হবে।

পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী পূরণ করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি করদাতারা করে থাকেন তা হল, সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখালে কোনো লাভ আছে কিনা?

এর উত্তর হল, না। লাভের চেয়ে বিড়ম্বনা বেশি। কারণ যা আপনার নেই তা যদি বলেন তাতে ঝামেলা বাড়বেই। তাই আপনার যা আছে তাই লিখুন।

অনেকেই পৈতৃকসূত্রে জমি বা বাড়ি পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে যেহেতু মূল্য জানা নেই তাই আপনি বিবরণ উল্লেখ করে টাকার ঘর ফাঁকা রাখতে পারেন। আবার কেউ কেউ সোনার পরিমাণ অনেক বেশি দেখাতে চান।

এক্ষেত্রেও বলবো, আপনার যা আছে আপনি তাই দেখান। তবে আপনি যদি উপহার হিসেবে সোনা পেয়ে থাকেন তাহলে এক্ষেত্রেও আপনি পরিমাণ উল্লেখ করে টাকার ঘর ফাঁকা রাখতে পারেন।

পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী দিতে হয় বছরের শেষ তারিখে। আপনার ৩০ জুন তারিখে যে সম্পদ এবং দায় আছে তা উল্লেখ করবেন। আর সারা বছর ধরে যে খরচ করেছেন যেটা জীবনযাত্রা সংশ্লিষ্ট ব্যয় বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন তার জের এখানে আনতে হবে।

পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী হল একটা কোম্পানির ব্যালেন্স শিটের মতো। আপনার সারা বছর ধরে যে আয় হয়েছে তার সঙ্গে যে ব্যয় এবং সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে তা মিলে যাবে।

যদি না মেলে তাহলে বুঝতে হবে কোথাও হয়ত তথ্য ঠিকভাবে দেওয়া হয়নি।

গত লেখায় বলেছিলাম, যেহেতু আমরা আমাদের খরচগুলো লিখে রাখিনা এবং তার ফলে অনুমান নির্ভর লিখে থাকি তাই হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে পড়ে।

তাই আপনি সময় নিয়ে রিটার্ন তৈরি করুন এবং সব তথ্য যতদূর সম্ভব সঠিক দেওয়ার চেষ্ঠা করুন। যাতে কোনো কিছু অস্বাভাবিক মনে না হয়।

লেখক: জসীম উদ্দিন রাসেল, আয়কর পরামর্শক এবং প্রশিক্ষক।

আরও পড়ুন