ঘরবন্দি থেকে শিশুদের আচরণগত সমস্যা

লম্বা সময় ঘরে থাকার কারণে শিশুদের মধ্যে আচরণগত নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2020, 07:33 AM
Updated : 9 Sept 2020, 07:33 AM

লকডাউনের প্রভাবে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে ঘরে বন্দি সময় কাটছে শিশুদের।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ঘরে থাকা ছাড়া আর উপায় নেই ঠিক, তবে এই লম্বা সময় ঘরে থাকার কারণে শিশুদের মধ্যে আচরণগত নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

ভারতীয় মনোবিজ্ঞানী নেহা কাদাবাম বলেন, “শিশুর আচরণগত সমস্যা নিয়ে আমাদের চিকিৎসাকেন্দ্রের মানুষের ফোন আসা বেড়ে গেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। পাশাপাশি নতুন বাবা-মায়েদের আমাদের পরামর্শ নেওয়ার মাত্রা বেড়েছে ২০ শতাংশ।”

এই পরিসংখ্যান আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের হলেও, একইভাবে গৃহবন্দি আমাদের দেশের শিশুরাও।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হল এই বিষয়ে বিস্তারিত। 

ভারতের আরেক শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুলাথা শেনোই বলেন, “বাবা-মা দুজনই এখন সন্তানের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে পারছেন। তাই সন্তানের মানসিক অবস্থা আর কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই বলছেন তাদের সন্তান এক কাজে বেশিক্ষণ মনযোগ রাখতে পারেনা। এমনকি এক স্থানে শান্ত হয়ে বসে খেলার মাত্রাও আগের তুলনায় কম, তারা অতিরিক্ত চঞ্চল ও বদমেজাজি হয়ে উঠছে ক্রমেই।”

তিনি আরও বলেন, “সামাজিক মেলামেশার অভাব থেকেই শিশুদের এই আচরণগত সমস্যা হচ্ছে। মাসের পর মাস তারা ঘরে একা, খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে দেখা নেই, খেলাধুলা কিংবা পড়াশোনা নিয়ে ছোটাছুটি নেই। এই সবকিছু মিলিয়েই তারা মাত্রাতিরিক্ত চঞ্চল আর অমনযোগী হচ্ছে।”

আচরণগত সমস্যা ভবিষ্যতে মোড় নিতে পারে মানসিক রোগের দিকে, এমনটা আশঙ্কা করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

তাই শিশুদের এই বদমেজাজকে সবসময় শাষণ না করে সেবিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

ডা. সুলাথা বলেন, “লকডাউনের সময়ে শিশুদের মানসিক সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এই বাড়ন্ত বয়সে শারীরিক পরিশ্রম আর আশপাশের মানুষের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমেই শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটে, যা অনেকটাই এখন স্থবির।”

“গৃহবন্দি এই অবস্থা শেষ হওয়ার আজও কোনো নিশ্চিত সময় জানা নেই। তাই তাদের আচরণগত সমস্যাগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে, পরামর্শ নিতে হবে, জানতে হবে সন্তানের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে।”

কিছু করণীয় বিষয়

শিশুকে বাসায় একটা দৈনন্দিন রুটিনে ব্যস্ত রাখতে পারলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। পড়ার সময়, খেলার সময়, অবসর সময় এগুলো পৃথক করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

সন্তানের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে হবে। তাকে নিজের মনের কথা, সমস্যার কথা বলা শেখাতে হবে। সন্তান যন্ত্রণা করলে সবসময় বকা দেওয়া ঠিক হবে, এতে সে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে যাবে। বাবা-মায়েরও বুঝতে হবে, এই মহামারীর সময়টা শিশুর জন্যও সমান কঠিন। 

সন্তান লালনপালনের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসা প্রয়োজন। সবসময়ই যে আপনাকে আদর্শ বাবা-মা হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

রান্না, ঘর গোছানো ইত্যাদি গৃহস্থালী কাজে সন্তানকেও সঙ্গে নিন। এতে নতুন কিছু করার সুযোগ পাবে।

আরও পড়ুন