কর্মজীবী এখন অফিসে বসে কাজ করার দিনগুলো ফিরে পেতে চান। আর অফিস যেদিন থেকে ঘরে এসেছে, কর্মজীবন আর ব্যক্তিগত সেদিন থেকেই মিশে একাকার হয়ে গেছে।
দিন শুরু হয় ল্যাপটপ সামনে নিয়ে, তার মাঝেই চলছে নিজের খাওয়া, টুকটাক রান্না, ঘরের কাজ, বাচ্চা সামলানো, বাজার করা আরও কত কি! দিন শেষে কোনো কাজই ঠিক মতো হয়নি।
ইতোমধ্যেই কাজ, ব্যক্তিগত জীবনের রুটিন করা আর তা মেলে চলা নিয়ে যথেষ্ট জ্ঞান সবাই অর্জন করে ফেলেছেন। সেই সারমর্ম হল সময়ে কাজ শুরু করে সময়ে শেষ করা, কাজের ফাঁকে উঠে হাঁটা, কাজের আলাদা জায়গা তৈরি করে নেওয়া ইত্যাদি।
তবে বাস্তবে তার কতটুকু কাজে লেগেছে? প্রায়ই কর্মঘণ্টার বাইরে কিছু না কিছু কাজ কিংবা কাজের চিন্তা থেকেই যায়। কারণ সবাই যে আপনার মতো রুটিন মেনে চলছে সেটা মনে করে নেওয়া বিলাসীতা।
এমতাবস্থায় করণীয় কিছু বিষয় একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে জীবনযাপন-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট। বিস্তারিত জানান হল সেই প্রতিবেদন অবলম্বনে।
সমস্যা খুঁজে বের করা
কর্মস্থল আর বাসস্থান যখন একটাই, তখন কাজ শেষ করে চট করেই ব্যক্তিগত জীবনে চলে আসা কঠিন। এখানে সমস্যা নানা ধরনের হতে পারে। হয়ত কাজের ফাঁকে আপনাকে জরুরি কোনো ব্যক্তিগত কাজ সারতে হয়েছে, যার কারণে কাজে সময় বেশি দিতে হচ্ছে। কিংবা আপনি সময় মতো কাজ শুরু করলেও অন্যকারও দেরির কারণে আপনার কাজও আটকে গেছে। অথবা হতে পারে দিন শেষের লম্বা মিটিং যা শেষই হতে চায় না। এমন নানান সমস্যার মধ্যে আপনার সমস্যা কোনটা এবং তা সমাধান করে সময় মতো কাজ থেকে ছুটি নেওয়া উপায় ভাবতে হবে।
বিরতির সময়
প্রতি এক ঘণ্টা পর উঠে একটু হাঁটতে হবে এটা অনেকের মাথায় থাকে ঠিক। তবে কাজে তা খুব কমই করা হয়। ঘরে বসে কাজ করার সময় অফিসভাবটা ঠিক মাথায় থাকে না। এভাবে অবিরাম কাজ করে গেলে একসময় মনে হবে আপনি হয়ত সারাদিন কাজই করে যাচ্ছেন। তাই কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজের হিসেব মতো বিরতি নিতে হবে নিজেকেই। ফোনে অ্যালার্ম দিয়ে রাখতে পারেন এক ঘণ্টা পরপর। বাজলেই ঘরের মধ্যে একটু হেঁটে নিতে হবে। দেখে আসতে পারেন কি রান্না হচ্ছে, কোনো বন্ধুকে ফোন করতে পারেন, পানির বোতলটা ভর্তি করে আনতে পারেন। তবে আবার লম্বা বিরতি নিয়ে নিলে হবে না, ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে কাজে ফিরতে হবে।
শোবার ঘরে কাজ নয়
ঘুম আর কাজ একই ঘরে হলে কাজ শেষে ঘুমের পরিবেশ অনুভব করতে পারবেন না। তাই চেষ্টা করতে হবে শোবার ঘর বাদ দিয়ে অন্য ঘরে কাজ করার। তবে কারও ক্ষেত্রে সেই সুযোগটা নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্তত বিছানায় বসে কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। কাজের জন্য আলাদা চেয়ার টেবিল রাখতেই হবে।
বিরতির করণীয় ঠিক করা
কাজের ফাঁকের বিরতিতে কী করবেন তা ঠিক করে রাখলে বিরতির আকাঙ্ক্ষা মনে থেকে যাবে, ফলে সময় মতো বিরতি নেওয়ার টান অনুভব করবেন। সেটা যেকোনো কাজই হতে পারে। দুপুরের খাবারের বিরতিটা প্রতিদিন একই সময়ে রাখতে হবে। যত কাজই থাকুক না কেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে সেই সময় স্থির রাখার। অ্যালার্ম এখানেও কাজে লাগাতে পারেন। তবে কাজে ফেরার জন্যও একটা অ্যালার্ম রাখা বুদ্ধিমানের বিষয় হবে।
নিজেকে বাহবা দিন
ঘরে আরামে বসে কাজ করছেন বলে কি কাজের পরিশ্রম কমে গেছে? বা কাজটার জটিলতা কি কমেছে? কখনই না। বরং জটিলতা বেড়েছে। অফিসে কাজের সকল প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গ হাতের কাছেই থাকত কিংবা সহকারী ছিল। ঘরে কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ ফটোকপি দরকার হলে আপনাকে কতটা ঝামেলা পোহাতে হয়!
তাই ঘরে বসে কাজ করা স্বাভাবিকের তুলনায় কঠিন। আর আপনি যে তা অনায়াসে করে যাচ্ছেন সেজন্য নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে নিন।
ব্যক্তিগত আর কর্মজীবন এসময় আলাদা রাখাও কঠিন। তাই সেটা যদি সামান্যতম হলেও করতে পারেন তবে আপনি প্রসংশার দাবিদার।
আরও পড়ুন