করোনাভাইরাস মহামারীর শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পৃথিবী জুড়ে অতি পরিচিত একটি দৃশ্য হল বিভিন্ন ভবনে প্রবেশের পথে মানুষের তাপমাত্রা মাপা এবং জীবাণুনাশক স্প্রে করা।
মহামারীর মধ্যে তিনটি মাস পার করে দেওয়ার পর এই দুই ব্যবস্থা কোথাও থাকলে কেমন যেন স্বস্তি ফুটে ওঠে মানুষের চেহারায়।
জীবাণুনাশকে যদি ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে তাহলে তার কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দেহ নেই। তবে তাপমাত্রা মাপার বিষয়টি কী কার্যকর?
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে সেই বিশ্লেষণই জানানো হল।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘দি সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’র নির্দেশনা হল, সকল কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেক কর্মী প্রবেশের আগে তার শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে।
যুক্তি হল এভাবে সম্ভাব্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত করা যাবে।
যদি কারও শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয় তবে তাকে আলাদা করতে হবে, ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না, চিহ্নিত হবেন সম্ভাব্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হিসেবে। সাধারণ মানুষ সেটাই করে আসছেন।
তবে সমস্যা হল, এই পদ্ধতির সঙ্গে বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞরা পুরোপুরি একমত নন।
বরং তাদের মতে, “এই তাপমাত্রা মাপাই নাকি ভাইরাস ছড়ানোর কারণ হতে পারে।”
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা
সম্ভাব্য ভাইরাস সংক্রমণের শিকার ব্যক্তি শনাক্ত করতে তার শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের ধারনা উৎপত্তি ২০০০ সালের ‘সার্স’ ভাইরাস মহামারী থেকে। সেসময় এই পদ্ধতি কার্যকর হওয়া প্রধান কারণ ছিল ওই ভাইরাসে আক্রান্ত ৮৩ শতাংশ রোগীরই জ্বর থাকত।
তবে নতুন করোনাভাইরাস একই গোত্রীয় হলেও তাদের চরিত্র পুরোপুরি এক নয়।
পরিসংখ্যান বলে, এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ৫০ শতাংশের মাঝেই উপসর্গ হিসেবে জ্বর পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাসে সবচাইতে বেশি ঝুঁকিতে থাকা প্রবীণ রোগীদের মধ্যে অনেকেরই জ্বর ছিল না।
আর ‘অ্যাসিম্টোম্যাটিক’ অর্থাৎ যারা সংক্রমণের শিকার তবে উপসর্গ নেই এমন রোগীদের সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যেই জানি।
ফলে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকা যে সম্ভব তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আবার একজন আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে ‘কোভিড-১৯’য়ের উপসর্গ চোখে পড়ার অনেক আগ থেকেই কিন্তু তার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানো শুরু হয়ে গেছে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের শরীরের তাপমাত্রা মাপা অনেকটা পণ্ডশ্রম।
যাদের সাধারণ জ্বর হয়েছে
কোভিড-১৯ এর আক্রমণের বহু আগেই থেকেই আমাদের জ্বর হয়। শরীর গরম হওয়াটা বহু রোগের সাধারণ উপসর্গ। আর এখন বর্ষার মৌসুম, সাধারণ ‘ফ্লু’, সর্দিজ্বর, যা এমনতেই ভালো হয়ে যায়, সেগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার এখনই মোক্ষম সময়।
হঠাৎ একপসলা বৃষ্টিতে ভিজলেও অনেকের গা গরম মনে হয়। তাই এমন সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তে শুধু শারীরিক তাপমাত্রা পরিমাপ কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়।
বরং তাপমাত্রা স্বাভাবিক জেনে হয়ত আমরা নিজেকে ভুল আশ্বাস দিয়ে ফেলছি যে আমার শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নেই।
স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই হয়ত পরিবারকে বুকে টেনে নিচ্ছি সেই ভুল আশ্বাসের ভরসায়।
আরও পড়ুন