চুলের সমস্যায় প্রাকৃতিক উপাদান

ব্রাহ্মী, আমলা ও অ্যালো ভেরার মতো উপাদান দিয়ে কেশ পরিচর্যা করা যায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2020, 01:26 PM
Updated : 24 July 2020, 01:26 PM

ধুলা, ময়লা, রোদ- এরকম নানান কারণে চুল সহজেই খারাপ হয়ে যায়। গরমের কারণে চুলের গোড়া বসে যায়। মাথার ত্বকে রোগ সংক্রমণ হতে পারে। ফলে চুল পড়া শুরু হয়। সূর্যের আলোতে বেশিক্ষণ থাকলে চুল রোদে পুড়ে ভঙ্গুর হয়ে যায়। চকচকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যেতে থাকে।

আবার বেশিক্ষণ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত জায়গায় থাকার জন্য চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে।

চুলের এসব সমস্যা দূর করার জন্য সঠিক যত্নের প্রয়োজন।

রূপচর্চা-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে চুলের এমনই পাঁচটি সমস্যার কার্যকর সমাধান নিয়েই আজকের আয়োজন।

চুল পড়ার সমস্যা দূর করতে ব্রাহ্মী ও আমলা

চুল কম-বেশি সবারই পড়ে। হয়ত কারও কম, কারও বেশি। দিনে ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। তবে এর বেশি হলেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আবার চুল পড়া নিয়ে বেশি চিন্তা করলেও চুল পড়ে বেশি।

যদি খুব বেশি চুল পড়তে থাকে তাহলে হারবাল উপাদান সমৃদ্ধ হেয়ার অয়েল ও হেয়ারপ্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্রাহ্মীলতার  ঔষধি গুণ চুলের জন্য দারুণ উপকারী। ব্রাহ্মী মিশ্রিত তেল ব্যবহারে চুল পড়া কমে। এটি মাথার ত্বককে পুষ্টি যোগায় ও  চুলের মৃত কোষে শক্তি জোগায়।

আমলকীতে খুব ভালো পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। এই ভিটামিন চুল বাড়তে সাহায্য করে এবং নতুন চুলের জন্ম হয়। তাই ব্রাহ্মীর সঙ্গে আমলা ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

রুক্ষ-শুষ্ক চুলের যত্নে বাদাম ও অ্যালো ভেরা

যাদের চুল শুষ্ক তাদের তো আছেই, সাধারণ ও তৈলাক্ত চুলের অধিকারীদের মুখেও শুনতে পাওয়া যায় রুক্ষ-শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ চুলের সমস্যা।

এর কারণ হিসেবে বাইরের দূষণ তো আছেই সেই সঙ্গে রিবন্ডিং, চুলের রং, ব্লিচিং, সস্তা ডাই ও প্রতিনিয়ত আয়রন করাকে দায়ী করা যায়।

অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার অথবা চুলের জন্য সঠিক শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার না করার কারণেও চুল রুক্ষ-শুষ্ক হয়ে পড়ে।

বাদাম-তেল একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার যা আমাদের চুলকে নরম, মসৃণ এবং ময়েশ্চারাইজ করে তোলে। আবার ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে গোড়া থেকে।

চুলের শুষ্কতা কাটানোর জন্য সপ্তাহে একবার বাদাম-তেল এবং ডিমের হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে।

রুক্ষ চুলকে উজ্জ্বল করতে ব্যবহার করতে পারেন অ্যালো ভেরা জেল।

শুষ্ক চুলে আর্দ্রতা ফেরাতে ও চুলের গভীর থেকে কন্ডিশনিং করতে অ্যালো ভেরা ব্যবহার ভালো ফল দেয়।

অ্যালো ভেরা চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে। ফলে আমাদের চুলের রুক্ষতা এবং শুষ্কতাও দূর হয়। মাথার তালুতে অ্যালো ভেরা ব্যবহার করলে আমাদের চুলের সুরক্ষার প্রলেপ তৈরি করে যা আমাদের চুলের আর্দ্রতা আটকে রাখে।

অ্যালো ভেরার সঙ্গে বাদাম ও পাকা-কলার প্যাক চুলের রুক্ষভাব এবং শুষ্কতা দূর করার জন্য আদর্শ।

চুলের ভেঙে যাওয়া রোধ করতে আমলা

রিবন্ডিং, চুলের রং, ব্লিচিং-এর ব্যবহারের ফলে চুল ভেঙে যায়। যা বর্তমানে অনেকেরই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুল ভেঙে ঝরে যাওয়া আটকাতে আমলা-তেল খুব কাজের। সপ্তাহে একদিন চুলের গোড়ায় ভালো করে আমলা তেল মাখুন। তাছাড়া চুল মজবুত ও ঘন করার পাশাপাশি চুলে পুষ্টি জোগাতে ও মাথার ত্বক মসৃণ রাখতে এই তেল বেশ কার্যকর।

আমলার তেল মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। ফলে পুষ্টি চুলের গোড়ায় পৌঁছে যেতে পারে এবং চুলের বৃদ্ধি খুব ভালো হয়।

খুশকি যুক্ত চুলে অ্যালো ভেরার ভূমিকা

খুশকির প্রধান কারণ হচ্ছে ফাঙ্গাসের আক্রামণ। মাথার ত্বকের শুকনা ও মৃত কোষ৷

খুশকি ভরা মাথার জন্য অ্যালো ভেরা খুবই উপকারী। খুশকির কারণে মাথার ত্বকে চুলকানো থেকে খানিকটা ছুটিও দেবে অ্যালো ভেরা।

অ্যালো ভেরা জেলে রয়েছে ছত্রাক-রোধী এবং জীবাণুনাশক উপাদান, যা মাথার ত্বকের চুলকানি প্রতিরোধ করে। ফলে খুশকি থেকে মুক্ত থাকে চুল।

এছাড়াও বাদাম মাথার ত্বক, মৃতকোষ ও খুশকি নরম করে। ফলে, ভালো শ্যাম্পু দিয়ে মাথা পরিষ্কার করার সময় খুশকি ও মৃতকোষ খুব সহজেই উঠে আসে। তাছাড়া বাদামতেল মাথার ত্বকে মালিশ করা হলে লোমকূপ খুলে যায় এবং চুলের গভীরে তেল যেয়ে চুলে পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে।

চুলের আগা ফাটা রোধে মধু ও মেহেদী

শরীরে পানিশূন্যতা হলে তা চুলে প্রভাব ফেলে এবং চুলের আগা ফেটে যায়। চুল কাপড়ের সঙ্গে, বালিশের সঙ্গে ঘষা খেলে চুলের আগা ফেটে যায়। চুলে অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার (যেমন- কালার, রিবন্ডিং) করলে চুলের আগা ফেটে যায়।

চুলের আগা ফাটা রোধে মধু ও মেহেদী পাতা উপকারী। নিয়মিত মেহেদী পাতা ও মধুর প্যাক ব্যবহারে চুলের আগা ফেটে যাওয়া বন্ধ হয়, গোড়া থেকে মজবুত হয় এবং চুল ভাঙা প্রতিরোধ করে চুলকে মজবুত ও ঘন করে তোলে। মেহেদী পাতা ও মধু প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ার কারণে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।

মধু চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে ও মেহেদী পাতার কন্ডিশনিং মাথার চুলকে ঘন করে। আর এই দুইয়ের মিশ্রণ চুলের আগা ফাটা রোধে অত্যন্ত কার্যকর। এটি চুলকে করে তোলে মজবুত, ঘন ও সুন্দর।

অ্যালো ভেরা ক্ষতিগ্রস্ত চুল ও আগা ফাটা চুলের জন্য ভালো সমাধান। এটিতে প্রোটোলাইটিক এনজাইম রয়েছে যা মাথার ত্বকে মৃত কোষ দূর করে চুল বাড়তে দেয়।

অ্যালোভেরার সঙ্গে বাদাম তেল ব্যবহারে চুলের আগা ফাটা লক্ষণীয় ভাবে দূর হয়। লেবুর রস ও বাদামতেল চুলের আগা ফাটা রোধে কার্যকর।

ব্রাহ্মী, আমলা, বাদাম ও অ্যালো ভেরা সমৃদ্ধ একটি তেলও হতে পারে ব্যস্ত জীবনে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী। যা হতে পারে চুলের সকল সমস্যা দূর করার  সহজ ও কার্যকর সমাধান।

বর্তমানে হারবাল উপাদান সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্র্যান্ড তাদের পণ্যের গুণাগুণের সুবাদে সকলের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে।

এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের বাইসারাহ লন্ডন অর্গানিক হেয়ার অয়েল, যুক্তরাষ্ট্রের মাইএল অর্গানিক হেয়ার অয়েল, শ্রীলংকান কুমারিকা হেয়ার অয়েল, জাপানিজ ব্র্যান্ড ওশিমাতসুবকী হেয়ার অয়েল অন্যতম।

আমাদের চুলকে মসৃণ এবং নরম করে তুলতে শুধু হেয়ার প্যাক লাগালেই চলবে না। তার জন্য খেতে হবে প্রোটিন যুক্ত খাবার। যেমন- মাছ, গাজর ইত্যাদি।

সঙ্গে খাওয়া দরকার বিভিন্ন রকমের ফল, সবুজ সবজি ইত্যাদি।

হেয়ারপ্যাকের সঙ্গে এসব খাবার খেলে আমাদের চুলের গোড়ার থেকে চুলের উন্নতি হবে।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং ব্যস্ত জীবনে চুল পাতলা হওয়া বা চুল পড়া, চুল রুক্ষ-শুষ্ক নিষ্প্রাণ হওয়া, চুলে খুশকি, চুলের আগা ফাঁটা-সহ চুলের বিভিন্ন সমস্যা লেগেই রয়েছে। তাই সাধারণ কিছু হারবাল উপাদানে চুলের যত্ন প্রতিদিনের অংশ করতে পারলে চুলের অনেক সমস্যা থেকেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

প্রতীকী ছবির মডেল: বন্যা। আলোকচিত্র: রাইনা মাহমুদ। বিন্যাস ও পরিকল্পনা: আলি আফজাল নিকোলাস। সৌজন্যে: ত্রয়ী ফটোগ্রাফি স্টুডিও।

আরও পড়ুন