ঘরবন্দি জীবনে ঘরোয়া কলহ এড়াতে

আগে নিজেকে সামলান। পরে অন্যদের দোষ ধরুন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2020, 06:18 AM
Updated : 22 July 2020, 06:18 AM

লকডাউনের শুরুতে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক থাকলেও চাকরিজীবীদের ঠোঁটের কোণে ক্ষণিকের জন্য হলেও একচিলতে হাসি হয়ত খেলেছিল।

ঘরে বসে অফিস করার সুবাদে প্রতিদিন সকালে পড়িমড়ি করে অফিস ছুটতে হবে না, যানজট সইতে হবে না, যাতায়াতের খরচ বাঁচবে, পরিবারের সঙ্গে সপ্তাহের প্রতিটা দিন কাটানো যাবে।

সপ্তাহে পাঁচ কিংবা ছয়দিনই দিনের অর্ধেক সময় অফিসে আর আরও কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় কেটে যাওয়া মানুষগুলো হয়ত হাপ ছেড়েছিলেন।

তবে দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে তিনটি মাস। এরমধ্যে অনেকের অফিস শুরু হয়েছে সীমিত পরিসরে, কারও এখনও ঘরে বসেই কাজ চলছে।

তবে পরিবারের সঙ্গে অনেকটা সময় ইতোমধ্যে সবাই কাটিয়েছেন। কেউ হয়ত বলবেন একটু বেশিই বেশি সময় কাটানো হয়ে যাচ্ছে, ঠোকাঠুকি লেগে যাচ্ছে অল্পতেই।

সম্পর্কবিষয়ক একটি ওয়েবসাইট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামলানো কয়েকটি উপায়। বিস্তারিত জানানো হল সেই প্রতিবেদনের আলোকেই।

আগে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা

প্রথমেই আপনার যা জানতে হবে তা হল, পরিবারের সঙ্গে প্রায়শই বাকবিতণ্ডা হওয়ার ঘটনার শুধু যে আপনার জীবনেই ঘটছে তা নয়, অনেকের দৈনন্দিন জীবনেই তা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। ঘরের প্রতিটি মানুষের মেজাজই তীক্ত বিরক্ত, যেন বারুদের মতো সামান্য ঘষাতেই জ্বলে ওঠে। আর একারণেই হয়ত গৃহবন্দি কর্মজীবীরা এখন কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য আক্ষেপ করছেন। তবে তা কতদিনে হবে, কবে পুরানো সেই স্বাভাবিক জীবন ফিরবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই ঘরের প্রতিটি মানুষের একটি গুরুতর দায়িত্ব হল নিজেদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখা।

কথা বলার আগে একটু থামা

তো কীভাবে রাখবেন মেজাজে লাগাম? পুরানো কিন্তু কার্যকর উপায় মুখে লাগাম দেওয়া। অফিসের জরুরি মিটিংয়ের সময় ঘরে বাচ্চাদের বেসামাল কোলাহল, স্ত্রীর ঘরের কাজ নিয়ে কটা কথা শুনিয়ে দেওয়া, কিংবা অফিসের বস ঘরে বসা কর্মী পেয়ে বেহিসাব কাজ দিতে থাকা এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন যা আপনার ধৈর্যের কঠিন পরীক্ষা নিচ্ছে। সঙ্গে আর্থিক দুশ্চিন্তা তো আছেই।

এমন অবস্থায় রাগে গর্জে ওঠা স্বাভাবিক। মেজাজ সামলানোই বরং কঠিন। তবে কঠিনটাই আপনাকে করতে হবে। এজন্য রাগের মুহূর্তে যেকোনো শব্দ উচ্চারণের আগে কয়েক সেকেন্ডের বিরতি দিন, কি বলতে যাচ্ছেন তা একবার নিজের মনেই শুনে দেখুন।

এই সামান্য বিরতি আপনাকে কিছুটা হলেও শান্ত করবে, এরপর আলাপে জড়ালে হয়ত ফলাফল আগেকার থেকে অনেকটা শোভন হবে।

নিজেই পরীক্ষা করা

এবার আসা যাক কেন এমন হচ্ছে সেই কারণ নিয়ে বিশ্লেষণ। কী খেয়েছেন আজ? ঘুম কেমন হয়েছে শেষ রাতে? সকাল থেকেই প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছেন কাজ কিংবা পারিবারিক দায়িত্ব নিয়ে?

এসব ভাবলে নিজেই পেয়ে যাবেন আপনার খিটখিটে মেজাজের কারণ। আপনি যেভাবে কারণ বের করেছেন একই পদ্ধতি পরিবারের অন্যদেরও জানান, তবে তারাও তাদের বদমেজাজের কারণ খুঁজে পাবেন।

এতে পরিবারের সকলেই নিজেদের এবং আশপাশের মানুষের আচরণে ভালোমন্দ অনুধাবন করতে পারবেন।

প্রয়োজনটা বলা

মনে রাখতে হবে, পরিবারের মানুষগুলো সবাই আপনার আপনজন। তাই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার কখনই ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তাদের ওপর ক্রোধ বর্ষণ না করে বরং জানান আপনার কী দরকার। তাদের কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন সেটা তাদেরকে জানান মৌখিকভাবে। বিরক্ত হয়ে কারও কোনো উপকার হবে না।

আলাদা সময়

দিনশেষে সবারই প্রয়োজন একটু নিজস্ব সময়। এটা নিজের ক্ষেত্রে নিজেই বেছে নিন। অন্যদেরকেও নিজের মতো করে সময় কাটানোর সুযোগ দিন। আপনি অনেক কাজ করছেন আর আরেকজন ব্যক্তিগত সময় কাটাচ্ছে তা দেখে যেমন ফুঁসে ওঠা যাবে না তেমনি ঘরের কাজে সাহায্য করার মানসিকতাও থাকতে হবে। আর মন ভালো না লাগলে খুঁটিনাটি কোনো কাজে জড়িয়ে যান। চা বানাতে পারেন, বই পড়তে পারেন, সিনেমা দেখতে পারেন, বন্ধুর সঙ্গে ফোনে আড্ডা জমাতে পারেন।

সবার মিলিত চেষ্টাই পারে একটি সুস্থ পারিবারিক পরিবেশে গড়তে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন