সুখী হওয়ার বিজ্ঞানসম্মত উপায়

নেতিবাচক চিন্তু দূর করতে পারলে জীবনের অধিকাংশ সময় সুখী থাকা যায়।

লাইফস্টাইলডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2020, 10:59 AM
Updated : 2 July 2020, 10:59 AM

আর সবসময় ইতিবাচক মনোভাব ও হাসিখুশি থাকাটা নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার ওপর।

বিজ্ঞান বলে মানুষ নিজেই নিজের মানসিক অবস্থার ওপর অনেকটাই প্রভাব রাখতে পারে। সাধারণ কিছু নিয়মাবলি মেনে চলে মানসিক অশান্তি দূর করা যায়।

এরকম বিষয় নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানানো হল বিস্তারিত।

শরীরচর্চা: রক্ত সঞ্চালন সারা শরীরে এন্ডোরফিন্স হরমোন নিঃসরণ করে মন ভালো রাখতে সহায়তা করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যে কোনো শারীরিক কার্যকলাপ যেমন- দৌড়, ঘরে বসেই সাইকেল চালানো, যোগ ব্যায়াম, নাচ ইত্যাদি এভাবে শরীরে ঘাম ঝড়ানো শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটা চলা শরীরের জন্য উপকারী।

পাতাবহুল সবুজ শাক: গাঢ় সবুজ পাতা যেমন- পালংশাক, পাতাকপি ইত্যাদি ফোলাট সমৃদ্ধ যা দৈনিক চাহিদার ৩৩ শতাংশ পূরণ করে। এই পুষ্টি উপাদান নেতিবাচক মনোভাব এবং হতাশা কমায়।

২০১২ সালের করা করা এক গবেষণা থেকে জানা যায়, যারা বেশি পরিমাণে ফোলাট গ্রহণ করেন তাদের হতাশার লক্ষণ অন্যান্যদের তুলনায় কম থাকে।

হাসি: হাসি কেবল ভালো অনুভূতিরই প্রকাশ না বরং গবেষণাতেও দেখা গেছে যে হাসি মন ভালো রাখতেও সহায়তা করে। সাধারণ হাসির অভিনয়, এমনকি জোর করেও যদি হাসির অনুশীলন করা হয় এটাও মস্তিষ্কের সুখী হওয়ার অনুভূতি তৈরি করে ও মন ভালো রাখতে সহায়তা করে।

বাইরে যাওয়া: মাঝে মধ্যে রোদ পোহান। মানুষের শরীর রোদ থেকে ভিটামিন ডি উৎপন্ন করতে পারে যা হতাশা, উদ্বেগ ও ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে। প্রাকৃতিকভাবে মন ভালো করতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সূর্যালোকে থাকার চেষ্টা করা ভালো।

তাই বলে প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা নয়। সকাল বেলার নরম রোদে ছাদে কিংবা খোলা জায়গা হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করা যেতে পারে।

ধ্যান: কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই মন ভালো করতে ধ্যান কার্যকর ভূমিকা রাখে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এটা ব্যথা কমায় এবং রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। এটা মস্তিষ্কের ‘হ্যাপি হরমোন’ সেরোটনিন, ডোপামিন ও এন্ডোরফিন্স ইত্যাদি নিঃসরণ করতে সহায়তা করে। কীভাবে বা কোথা থেকে শুরু করবেন বুঝতে না পারলে সকালে ঘুম থেকে উঠে ধ্যান করতে পারেন, এটা মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করবে।

কমলার ঘ্রাণ নেওয়া: সিট্রাসের সুগন্ধ যেমন-কমলা, লেবু ও আঙ্গুর ইত্যাদির রাসায়নিক উপাদান মস্তিষ্কের চাপ কমাতে সহায়তা করে। মন ভালো রাখতে কয়েক ফোঁটা সিট্রাস তেল নিয়ে ‘প্রেসার পয়েন্ট’ বা সংযোগস্থলে ব্যবহার করুন। এছাড়াও ফুলের সুগন্ধি ইতিবাচক প্রভাব রাখে।

পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটান: পোষা প্রাণী মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। আপনাকে দেখে তাদের আনন্দ উত্তেজনা, তাদের বিশ্বস্ততা ইত্যাদি আপনাকে ভালো সঙ্গ দেবে। পোশা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটালে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পোষা কুকুরের সঙ্গে কেবল ১৫ মিনিট সময় কাটালে তা সেরোটনিন, প্রোল্যাক্টিন ও অক্সিটোসিন ইত্যাদি ভালো হরমোন নিঃসরণ করে যা মানসিক চাপ বৃদ্ধিকারী কর্টিসোল হরমোন কমাতে সহায়তা করে।

সামান্য বিরতি: গবেষকদের মতে, যারা কাজের ফাঁকে বিরতি নেন, মজার ভিডিও দেখেন তারা কাজে তুলনামূলকভাবে বেশি শক্তি অনুভব করেন এবং কম নেতিবাচক অনুভূতি কাজ করে। এটা কেবল মানসিক স্বাস্থ্যই সার্বিকভাবে ভালো রাখে না বরং এক মিনিটেরও কম সময়ে মন ভালো করে দেয়। এছাড়াও এটা বিপাক বাড়াতেও সহায়তা করে।

গান শোনা: গান শুনা মানুষের মনের ওপর প্রভাব রাখে। এটা মন ভালো রাখা হরমোন ডোপামিন নিঃসরণ করে ভালো স্মৃতিকাতর করে তলে।

একা গান গাওয়া: নিজে গান গেয়েও মন ভালো রাখা যায়।

ইউনিভার্সি অব ম্যানচেস্টারের করা এক গবেষণা থেকে জানা যায়, কান মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত যা প্রশান্তি দিতে সহায়তা করে। যখন তখন গান গাওয়া হলে কান তার সংবেদন মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয় এবং এতে উষ্ণ বা চনমনে অনুভব হয়। তাই গোসলের সময়, গাড়ির সিট বেল্ট বাঁধার সময় বা অন্য যে কোন সময় গান করুন। 

চকোলেট খাওয়া: চকোলেট মন ভালো রাখে। এতে আছে ট্রিপ্টোফান যা মস্তিষ্কে সেরোটনিন উৎপাদনে সাহায্য করে যা মন ভালো রাখতে সহায়ক।

কফি পান: মন ভালো রাখতে সকালে উঠে কফি পান করুন।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির করা এক গবেষণা থেকে জানা যায় দৈনিক দুই কাপ কফি পান ১৫ শতাংশ হতাশা কমাতে সহায়তা করে। তবে মনে রাখবেন মজাদার কফিতে অতিরিক্ত চিনি থাকে যা বাড়তি ক্যালরি যোগ করে। তাই ব্ল্যাক কফি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি: স্মার্ট ফোন বাদ দিন এবং কম্পিউটারের স্ক্রিনেও সময় কম ব্যয় করুন। দ্রুত ও কার্যকরভাবে মনের অবসাদ দূর করতে চাইলে পরিবার পরিজন ও বন্ধুর সঙ্গে সময় ব্যয় করুন।

‘ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনা’র করা এক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, মানুষের স্পর্শ ভালো অনুভূতির হরমোন সেরোটনিন নিঃসরণ বাড়ায় পাশাপাশি রক্তচাপ এবং হৃদপিণ্ডের উচ্চ গতি কমিয়ে আরাম বোধ দেয়।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন