বাজে জীবনসঙ্গী হওয়ার ৭ লক্ষণ

নিজে হয়ত ভাবছেন আপনি ভালো জীবনসঙ্গী। তবে সেটা নাও হতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2020, 08:08 AM
Updated : 30 June 2020, 08:08 AM

কোনো কথা বা কর্মকাণ্ড হয়ত প্রণয় বা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আর সেসব হয়ত আপনি বুঝতেই পারছেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সুসান উইনটার, ‘এলিট ডেইলি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যে কোনো ধরনের পরিবর্তনের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হচ্ছে সতর্ক হওয়া।”

“সৎ এবং নিজেদের ত্রুটির বিষয়ে সচেতন হওয়ার মানে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার দিকে এগিয়ে যাওয়া।”

সঙ্গী পাশে থাকলেও বেশিরভাগ সময় ফোনে ব্যস্ত থাকা, ঝগড়ায় সবসময় নিজে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করা এমনি সঙ্গীর খারাপ সময়ে তাকে মন ভালো করতে বলাও হতে পারে বাজে বিষয়।

এরকমই কিছু কিছু লক্ষণ রয়েছে যা হয়ত আপনাকে বাজে সঙ্গী হিসেবে উপস্থাপন করছে।

ছোটখাট যেকোনো বিষয় ভুল ধরা

সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঙ্গীর কোনো একটা বিষয় হয়ত আপনাকে চুপ করিয়ে দিতে পারে। তবে সঙ্গীর সব বিষয় নিয়েই যদি আপনি আপত্তি জানাতে থাকেন তবে সেটা মোটেও ভালো সঙ্গীর কাজ নয়।

হতে পারে সেটা শসা টুকরা ঠিক হচ্ছে না বলে নির্দেশ করা কিংবা কোনো জিনিস কিনতে গিয়ে সবসময় অসম্মতি দেওয়া। এরমানে হচ্ছে আপনি নিজের অজান্তেই সম্পর্ককে আঘাত করছেন।

উইনটার বলেন, “ভালোবাসার বিপরীত বিষয় হল সঙ্গীর আত্ম-পরিচয়, কর্মকাণ্ড, চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করা। এটা হচ্ছে এক ধরনের মোহ যা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানুষ এরকম করে। ভালোবাসা বা অন্তরঙ্গতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।”

সঙ্গীর ওপর মন খারাপ করেও প্রকাশ না করা

নিজের খারাপ-লাগা অনুভূতি বোতল বন্দী করে রাখার মানে হল বিষয়টা আবার ঘটার সুযোগ করে দেওয়া। মনে রাখতে হবে আপনার সঙ্গী মনোবিজ্ঞানি নয় সবসময় আপনার মনের কথা বোঝার জন্য বসে থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড ব্যানেট বলেন, “সুস্থ শক্তিশালী সম্পর্ক মানে সে নিজে সৎ এবং প্রয়োজনটা প্রকাশ করে, অপরদিকে সঙ্গীও তাই।”

তাই এরপর যখন কিছু খারাপ লাগবে সেটা সঙ্গীকে সরাসরি বলুন। তবে অবশ্যই রাগ বা ঝগড়া করে নয়।

সঙ্গী বন্ধুদের সঙ্গে থাকলে একাকী বোধ করা

সারাক্ষণ একসঙ্গে থাকার মানে হতে পারে, দুজনে আলাদা থাকতেই পারেন না। তবে বিষয় হল একে বলা হয় ‘অতি-নির্ভরশীলতা’। যা সুস্থ সম্পর্কের জন্য ঠিক নয়।

আপনার সঙ্গী আপনাকে ঠকাচ্ছে- এরকম বিষয় বা ঘটনা ছাড়া সবসময় সঙ্গীর সঙ্গে থাকার চেষ্টা করার মনে হল তার প্রতি অতিরিক্ত মোহ কাজ করা।

যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানি জেনিফার রোডেস বলেন, “প্রায় সব কিছু একসঙ্গে করতে গেলে শেষ পর্যন্ত সম্পর্কে তা সমস্যা তৈরি করতে পারে। আপনি হয়ত নিজের অনুভূতিকে চাপা দিয়ে সঙ্গীকে অভিভূত করার চেষ্টা করছেন।”

যা পক্ষান্তরে একসময় সমস্যা তৈরি করবে।

ঝগড়া শেষ বাক্য বা শব্দটা আপনার

সম্পর্কে ঝগড়া থাকবেই। তবে তর্কে সবসময় জয়ী হওয়ার চেষ্টা করা মোটেই সুস্থতার লক্ষণ নয়। হতে পারে আপনি সম্পর্কটাকে সম্পূর্ণই ভুল পথে দেখছেন।

উইন্টার বলেন, “ঝগড়ায় সবসময় নিজের কথাটাই যদি শেষ কথা হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনি সবসময় জয়ী হওয়ার চেষ্টা করেন। সেটা কারও দোষ থাকুক বা না থাকুক। অর্থাৎ সম্পর্কটা হয়ে যায় আপনার শক্তি খাটানোর জায়গা।”

তাই এরপর থেকে এরকম কিছু করার আগে ভাবুন কেনো এমন করছেন। তর্কে জয়ী হওয়ার চেষ্টা না করে বরং আপস করার চেষ্টা করতে হবে।

সম্পর্ক শেষ করার হুমকি

ঝগড়ায় জয়ী হওয়ার মতোই, তর্কের সময় সম্পর্ক শেষ করার হুমকি দেওয়ার মানে হচ্ছে পরিস্থিতিকে নিজের পন্থায় বশ করতে চাচ্ছেন।

অর্থাৎ জয়ী হতে না পারলে আপনি চলে যাবেন।

রিডার’স ডাইজেস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘সাইকোলজিকাল অ্যাপ্রোচ টু কাপল থেরাপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও ‍যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানি স্ট্যান টকিন বলেন, “মানুষ হুমকি দেয় সঙ্গীকে ‘লাইনে’ আনার জন্য। সম্পর্ক আসলে হুমকি দিয়ে চলে না।”

“যত যাই হোক সম্পর্ক ভাঙার কথা তখনই বলা যায় যখন সেটা আসলেই করতে চান। না হলে এই কথার কোনো মূল্য নাই। আর এভাবে হুমকি দেওয়া মানে সম্পর্ককে ক্ষতির মুখে ফেলা।”

সঙ্গীর খারাপ সময়ে ভালো থাকতে বলা

বিষয়টা অদ্ভূত মনে হলেও, সঙ্গীর খারাপ সময়ে তাকে ভালো থাকতে বলা হয়ত এক সময় সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

তাকে ভালো থাকতে বলার অর্থ হতে পারে এরকম, তার মন ভালো থাকলে আপনার সুবিধা তাতে আপনি তাকে নিয়ে ভালো সময় কাটাতে পারবেন। তার খারাপ সময়টা আপনার কাছে মূল্যহীন। এভাবে কি কখানও ভেবে দেখেছেন?

উইন্টার বলেন, “সঙ্গী কী রকম বোধ করবে সেটা নিয়ে আপনি জোর করতে পারেন না। এটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টার লক্ষণ নির্দেশ করে।”

বরং সঙ্গীর খারাপ সময়ে সে চাইলে তাকে সাধারণভাবে সঙ্গ দিন। তার অনুভূতির মূল্য দিয়ে পাশে থাকুন।

সারাক্ষণ ফোনে ব্যস্ত থাকা

বর্তমান সময়ে ফোন ছাড়া যেন জীবন চলে না। কাজ, বন্ধু-আত্মিয়ের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা বিনোদন সব ওই ফোনের মধ্যে। তাই বলে সঙ্গী পাশে থাকলেও তাকে সময় না দিয়ে ফোনে ব্যস্ত থাকাটা মোটেই ভালো কাজ নয়।

একসঙ্গে থেকে নিজের দেওয়া পোস্ট কেমন হল, সঙ্গীর কাছ থেকে সেবিষয়ে সারাক্ষণ জানাতে চাওয়ার অর্থ হতে পারে, একসঙ্গে থেকেও আপনারা একাকী।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মেগান ফ্লেমিং বলেন, “একসঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে নিজের কাজ করে যাওয়া সঙ্গীর সঙ্গে ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা’ অথবা ভাব আদান প্রদানের সীমাবন্ধতা নির্দেশ করে।”

তাই ভালো সঙ্গী হতে চাইলে এসব বিষয়ের দিকে নজর দিন।

প্রচ্ছদের প্রতীকী ছবি: সৌজন্যে ক্যাটস আই।

আরও পড়ুন