মহামারীর সময়ে শিথিল হওয়া লকডাউনে ঘর থেকে বের হয়ে অফিস বা মার্কেট যাচ্ছেন অনেকেই। এক্ষেত্রে রাস্তায় কিংবা অফিসে শৌচাগার ব্যবহার করতে হলে মাথায় রাখতে হবে কিছু বিষয়।
কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সে বিষয়ে জানানো হল জীবনযাপন-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে।
বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বাথরুম করা
ছোটবেলায় বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বাবা-মা জোর করে বাথরুম করানোর বিষয়টা কি মাথায় আছে? বড়বেলাতেও সেটা মেনে চলার চেষ্টা করুন। বাসা থেকে স্বল্প দূরত্বে কোথাও যেতে হলে, চাপ না থাকলেও বাথরুম ব্যবহার করে তারপর বের হন।
বার্মিংহামের ‘ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামা’র নার্সিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক টেডরা স্মিথের পরামর্শ হচ্ছে, “যতটা সম্ভব গণশৌচাগার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে পরিবারের সদস্যদের বাথরুম ব্যবহার করে বের হতে বলুন। বিশেষ করে ছোটদের।”
পাশাপাশি আর্দ্র থাকার চেষ্টা করুন। তবে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে অতিরিক্ত পানি পান বা কফি-জাতীয় পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকাই ভালো। অন্তত গন্তব্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত যাতে গণশৌচাগার ব্যবহার করতে না হয়।
মাস্ক পরা
সারাদিনের জন্য বের হওয়া কিংবা অফিসে যাওয়ার পথে মাস্ক ব্যবহার করতেই হবে। পাশাপাশি গণশৌচাগারে তো অবশ্যই।
মাস্ক ব্যবহার যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা কমাতে পারে তা এখন প্রতিষ্ঠিত।
দূরত্ব বজায় রাখা
গণশৌচাগার সেটা অফিস, মার্কেট কিংবা রাস্তার পাশে- যেটাই হোক, আকারে সাধারণত ছোট হয়। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে ছয় ফিটের কথা বলা হচ্ছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে।
যদি শৌচাগার আকারে বড় হয় তবে খেয়াল করুন সেই দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে কিনা। যদি ভিড় বেশি হয় তো শৌচাগারের দরজার বাইরে অপেক্ষা করুন।
যতটা সম্ভব স্পর্শ এড়ানো
বাথরুম করতে গিয়ে ফ্লাশ করা বা টয়লেটের দরজা লাগানো- এসব এড়ানো সম্ভব না হলে খেয়াল রাখুন হাত যেন নাক-মুখ-চোখে না লাগে। ভাইরাস শরীরে ঢোকার অন্যতম মাধ্যম হাত। আর হাত জীবাণুর সংস্পর্শে আসার কারণ হতে পারে শৌচাগারের বিভিন্ন অংশ স্পর্শ করা।
এক্ষেত্রে স্মিথ বলেন, “ফ্লাশ করা, টয়লেটের সিট নামানো কিংবা দরজার ছিটকানি লাগানো- যাই স্পর্শ করুন না কেনো অবশ্যই তা ধরার সময় টিস্যু ব্যবহার করুন। পাশাপাশি মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। আর অবশ্যই কাজ শেষে সাবান পানি দিয়ে ভালোমতো হাত ধুয়ে নিন। সঙ্গে স্যানিটাইজার রাখুন। যাতে সাবান-পানি না পেলেও সেটা ব্যবহার করতে পারেন।”
টয়লেট সিটের ঢাকনা
ফ্লাশ করার আগে অবশ্যই সিটের ঢাকনা নামিয়ে নিতে হবে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে ফ্লাশ করার পর কমোডে পানির ঘুর্ণি থেকে জীবাণু বাতাসে ভেসে ওঠে।
এই বছর করা ‘ফিজিক্স অফ ফ্লুইডস’ গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, ফ্লাশ করার ফলে টয়লেটের সিট থেকে জীবাণু বহু উপরে বাতাসের মাধ্যমে ভেসে উঠতে পারে।
তাই ঢাকনা নামিয়ে ফ্লাশ করুন। এক্ষেত্রে ধরার জন্য টিস্যু অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। আর ভালো মতো হাত ধুতে তো হবেই।
স্মিথ বলেন, “অনেক টয়লেটে সিট নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ফ্লাশ করে অবশ্যই দূরে সরে যেতে হবে। আর মনে রাখতে হবে ফ্লাশের সময় যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি কণা ছিটে ওঠে সেটা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে লেগে থাকে। বাতাসেও ভেসে বেড়ায়। যা বহন করে করোনাভাইরাস ছাড়াও বিভিন্ন জীবাণু। তাই অবশ্যই বাথরুমের অন্যান্য অংশ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সাবধান থাকতে হবে।”
হাত ধোয়ার পর কোনো কিছু স্পর্শ না করা
বাথরুম ব্যবহার শেষ করে অবশ্যই সাবান-পানি দিয়ে ভালোমতো হাত ধুয়ে তারপর টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। আমাদের দেশের বাস্তবতায় রাস্তার পাশে বা বিভিন্ন মার্কেটের গণশৌচাগারে পানির ব্যবস্থা থাকলেও টিস্যু ও সাবান নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই অবশ্যই স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। অবশ্যই হাত ভালোমতো শুকাতে হবে। এরপর শৌচাগারের কোনো জায়গাই স্পর্শ করা যাবে না।
যত কম সময় থাকা যায়
গণশৌচাগারে যত কম সময় থাকা যায় ততই মঙ্গল। খালি গণশৌচাগার দেখে সেখানে সময়ক্ষেপন করা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। নিজের কাজ করুন আর বেরিয়ে আসুন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় রোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতে, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যত বেশি সময় থাকা হবে তত বেশি নিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
শৌচাগারে থাকা অন্যান্য মানুষদের মধ্যে কে আক্রান্ত আর কে নয়- সে বিষয়ে তো নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই বাথরুমে কাজ দ্রুত শেষ করে বের হয়ে আসতে হব।
শৌচাগারে ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ মোবাইল ফোনে জীবাণু লেগে থাকলে হাত ধুয়ে বের হয়ে আসার পর সেই ফোন ব্যবহার করলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকেই যায়।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন