গোসলে পানির তাপমাত্রার পার্থক্যের প্রভাব

ক্লান্তি বা পেশির ব্যথা কমাতে চাইলে অথবা ভালো ঘুমের জন্য গরম পানিতে গোসল বেশ উপকারী আবার শরীরচর্চার পরে পেশি ঠিক রাখতে ও জ্বলুনি কমাতে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল উপকারী।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2020, 11:02 AM
Updated : 24 June 2020, 11:02 AM

জীবনযাপন-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্যসম্পর্কিত প্রশিক্ষক টারা অ্যালেন বলেন, “গরম ও ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করার আলাদা আলাদা সুবিধা রয়েছে। তাই নিজের প্রয়োজন বুঝে ঠাণ্ডা বা গরম পানি গোসলের জন্য বাছাই করতে পারেন।”

ঠাণ্ডা পানিতে গোসলের উপকারিতা

ঝটপট ঠাণ্ডা পানিত গোসল করা আরামদায়ক না হলেও এটা গরম পানিতে গোসল করার চেয়ে বেশি উপকারি।

ঠাণ্ডা পানিতে গোসল মন প্রসন্ন রাখে।

শরীরচর্চার পরে

শরীরচর্চার পরে বরফ পানিতে বা ঠাণ্ডা পানিতে গোসল শরীরচর্চার পরবর্তি ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে।

২০১৮ সালের করা এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, ঠাণ্ডা পানিতে ডুবে থাকা ‘ক্রাইওথেরাপি’র মতো পেশির দুর্বলতা ও প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।

তাছাড়া যারা এই পদ্ধতি অনুসরণ করেনি তাদের তুলনায় ঠাণ্ডা পানিতে ডুবানো অংশগ্রহণকারী ক্লান্তি ও ব্যথার অনুভূতি থেকে ৯৬ ঘন্টা পর্যন্ত দূরে থাকেন।

জ্বলুনি দূর করে

ত্বক সংবেদনশীল হলে গরম পানির বদলে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন। এতে ঠাণ্ডার কারণে জ্বলুনি কমে। কারণ ঠাণ্ডা পানির আছে প্রদাহনাশক উপাদান।

হসপিটাল অব পেন্সালভানিয়া’র ত্বক-বিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক ক্যারি কোভারিক বলেন, “ঠাণ্ডা পানি, বরফের প্যাক বা ঠাণ্ডা পানিতে গোসল অস্বস্তিকর ও জ্বলুনির অনুভূতি থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে।”

পেশির আরাম

গরম পানিতে গোসল পেশিতে আরাম অনুভূত হতে সহায়তা করে।

২০১৪ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরচর্চার আগে ৪৫ মিনিট গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখলে তা শরীরচর্চার পরে হওয়া পেশির ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। 

শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দূর

গরম পানিতে গোসল বন্ধ নাকের সমস্যা দূর করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাঙ হেল্থ ইনিস্টিটিউট’য়ের তথ্যানুসারে, গরম পানিতে গোসল নাক ও গলায় জমে থাকা কফ দূর করতে সহায়তা করে।

তবে যাদের দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের সমস্যা যেমন ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, সিস্টিক ফাইব্রোসিস বা গুরুতর হাঁপানির সমস্যা আছে তাদের জন্য এই গরম পানির বাষ্প ক্ষতিকারকও হতে পারে।

ঘুম ভালো হয়

গবেষণায় দেখা গেছে ঘুমের এক ঘণ্টা আগে ২০ মিনিট গরম পানিতে গোসল করলে ঘুম ভালো হয়।

ঠান্ডা অনুভূতির জন্য কুসুম গরম পানিতে গোসল

ঠাণ্ডা অনুভূতির জন্য ঠাণ্ডা পানিতে গোসল স্বাভাবিক মনে হলেও এক্ষেত্রে তার ফলাফল ভিন্ন। বরং ঠাণ্ডা অনুভূতির জন্য গরম পানিতে গোসল উপকারী। কারণ এটা ত্বক ও সংবহন তন্ত্রের উত্তাপে প্রভাব রাখে। 

উদাহরণ স্বরূপ, ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। কিন্তু এর ফল স্বরূপ, ত্বকের রক্ত প্রবাহও হ্রাস পায় এবং সার্বিকভাবে শরীর তাপ বের করে দিতে পারেনা।

কোভারিক বলেন, “এতে তাপমাত্রা তাৎক্ষনিকভাবে ঠাণ্ডা অনুভব করি ঠিকই কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।”

কোভারিক কুসুম গরম পানিতে গোসল করার পরামর্শ দেন যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে।

‘সোয়াইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি’র তথ্যানুসারে ৯১.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার পানি গোসল করার জন্য বেশি কার্যকর।

আসল কথা হল

ঠাণ্ড ও গরম দুই রকম পানিতেই গোসল করা উপকারী। নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনোটা নির্বাচন করুন।

কোভারিক প্রায় ৯৫ থেকে ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার কুসুম গরম পানিতে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট গোসল করার পরামর্শ দেন।

আরও পড়ুন