করোনাভাইরাস: যেসব স্থানে ঝুঁকি বেশি

রেস্তোরাঁ, গণপরিবহন ছাড়াও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2020, 04:24 PM
Updated : 22 June 2020, 04:24 PM

করোনাভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই ‘নতুন স্বাভাবিক’ জীবন শুরু করেছি আমরা। রাস্তার শত ধুলায়ও যারা মুখ ঢাকেনি, তারাও আজ মুখে মাস্ক পরে।

তবে এই শিথিল লকডাউনের মাঝে সুস্থ থাকতে হলে কোন স্থানে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বেশি সেগুলো জানতে হবে, আর সেখানে থাকতে হবে আরও বেশি সতর্ক।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল এমন কিছু ঝুঁকিপূর্ণ স্থান সম্পর্কে।

ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের সঙ্গা কী?

করোনাভাইরাস যেকোনো স্থানেই ছড়াতে পারে। তবে বদ্ধ পরিবেশেই এই ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এই বদ্ধ স্থান সেগুলো, যেখানে বাতাস চলাচলের সুবিধা কম এবং কয়েকজন মানুষ যেখানে একসঙ্গে উপস্থিত থাকে।

রেস্তোরাঁ

যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ‘বার’ ও রেস্তোরাঁগুলো এই মহামারীর সময়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। সামান্য কয়েকজন মানুষ নিয়ে আয়োজন করা একটি বুফে খাবারের আয়োজনে কত সহজেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে তা গবেষণার মাধ্যমে অনুধাবন করতে পেরেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন স্বরে কথা বলা, কয়েক পরিবারের মানুষের যাওয়া আসা, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ যেখানে বাতাস চলাচল অনেক কম, খাওয়ার জন্য মুখের মাস্ক সরিয়ে রাখা ইত্যাদি নানান কারণে রেস্তোরাঁগুলোতে বসে খাওয়া কিংবা সময় কাটানো সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়।

থিয়েটার, সিনেমা হল কিংবা কনসার্ট

বিনোদনের এই ধরনের কেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য এখনও বন্ধ। আর সুস্থ থাকতে হলে সেগুলো বন্ধ থাকাও জরুরি। কারণ এসব স্থানে শতাধিক মানুষ একসঙ্গে জমায়েত হয়। সাধারণত, যাদের মধ্যে একজন আক্রান্ত ব্যক্তিই যথেষ্ট সবাইকে আক্রান্ত করার জন্য। আর ছোট পরিসরে আয়োজন করা কোনো আড্ডা কিংবা পার্টিতে যোগ যদি দিতেই হয় তবে আগেই জেনে নিতে হবে কতজন মানুষ আসতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কী ব্যবস্থা থাকবে। খাবারের ক্ষেত্রেও এখানে সতর্কতা থাকা চাই শতভাগ।

সুইমিং পুল ও স্পা কেন্দ্র

খেলা কিংবা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে সাঁতারকে বেছে নেওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। জনসাধারণের প্রবেশাধিকার আছে এমন সকল সাঁতার কাটার স্থান এখনও বন্ধই আছে। তবে কোনো বিলাশবহুল হোটেল গিয়ে যদি সুইমিং পুল পেয়ে যান তবে তা ব্যবহারের সুযোগ থাকলেই ঝাপিয়ে পড়া অনুচিত।

যেকোনো বদ্ধ জলাশয়ে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি নেমে থাকলে তার কাছ থেকে আসা ভাইরাস ওই পানিতে অবশ্যই বিদ্যমান। মনে রাখতে হবে, আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ থেকে তরলকণার সাহায্যে কিন্তু ভাইরাস ছড়ায়। ফলে সুইমিং পুলের পানিতে ভাইরাস বাঁচতে পারে নিসন্দেহে। আবার করোনাভাইরাস ছাড়াও ‘ব্যাক্টেরিয়াম লিজিওনেলা’য়ের মতো ব্যাক্টেরিয়া ছড়াতে পারে ধোঁয়া কিংবা বাষ্পের সঙ্গে মিশে। আর তা খুব সহজেই নিঃশ্বাসের সঙ্গে আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাহলে বাদ গেল স্পাগুলোও।

ধর্মশালা

ভয়ংকর এই পরিস্থিতিতে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া প্রার্থণার গুরুত্ব কখনই কম নয়। তবে তাকে ঘরে বসেও স্বরণ করা সম্ভব। আর ধর্মশালাগুলোর ঝুঁকি কোনো অংশেই কম নয়। এখানেও আছে আবদ্ধ একটি ঘর, অনেক মানুষের সমাগম, পরস্পরের সঙ্গে আলাপ। ধর্মশালায় হয়ত উচ্চস্বরে কথা বলা হয় না। তবে নিচুস্বরে অপরজনের সঙ্গে আলাপ করার জন্য কিন্তু তার খুব কাছে যেতে হয়। তাই ধর্মশালায় যাওয়া কমাতে হবে। গেলেও সুরক্ষাব্যবস্থা সঙ্গে রাখতে হবে। বিশেষ করে প্রবীণদের বেশি সাবধান হতে হবে। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়েছে। ফলে তাদের আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকি যেমন বেশি তেমনি আক্রান্ত হলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও তুলনামূলক কম।

গণপরিবহন

করোনাভাইরাস আসার আগেও গণপরিবহনের পরিচ্ছন্নতার মান ভালো ছিলনা। কিন্তু যার নিজস্ব যানবাহন নেই তার এই গণপরিবহন এড়িয়ে চলার উপায় নেই। অনেক যানবাহনে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা কখনই যথেষ্ট হবে না। আর করোনাভাইরাস যা কিছু সমতলে ৯ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, তার বিরুদ্ধে গণপরিবহন কখনই নিরাপদ হওয়া সম্ভব না। তাই এখানে নিজের সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে।

চুল কাটার দোকান ও পার্লার

লকডাউনে অনেকেই মাথার চুল ফেলে দিয়েছেন ‍পুরোপুরি। পার্লার, সেলুনের কাজগুলো যতটুকু সম্ভব হয়েছে ঘরেই সেরে নেওয়া শিখেছেন। তবে এখন লকডাউন শিথিল হওয়ার পর ‘পিপিই’ পরলেই যে পার্লার বা সেলুনে যাওয়া নিরাপদ তা মোটেই নয়। তিন মাস ঘরে বন্দি থাকার পর অনেকের জন্যই হয়ত এই সেবাগুলো অনেক জরুরি হয়ে উঠেছে। তবে জীবন বাজি রাখার মতো নয়।

তবে যদি যেতেই হয় আগেই দেখে নিন সেখানে কী ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে, কতজন মানুষ সেখানে উপস্থিত আছেন আর নিজের দিক থেকে সর্বোচ্চ ‍সুরক্ষা ব্যবস্থা তো থাকবেই। তবে সবকিছুর পরও না যাওয়াই শ্রেয়।

আরও পড়ুন