‘ফেইশল’ করা ত্বকের জন্য উপকারী হলেও মহামারীর এই সময়ে স্যালনে যাওয়াটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
রূপচর্চা-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে সুন্দর, মসৃণ ও কোমল ত্বক পেতে ফেইশলের উপকারিতা এবং ঘরে বসে নিজেই ফেইশল করার ধাপ সমূহ সম্পর্কে জানানো হল।
এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু প্রসাধনীর প্রয়োজন হয়। এবং এগুলো কাজ করার জন্য কিছুটা সময় দিতে হয়।
তাই ফেইশল করতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে। ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর ফেইশল করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
ত্বক পরিষ্কারের উপকারিতা
জমে থাকা প্রসাধনী দূর করে: ত্বক পরিষ্কার করা হলেও অনেক সময় লোমকূপে প্রসাধনী জমে থাকতে পারে। এবং তা অনেক সময় স্থায়ী হয়ে যায়। ফলে লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করা হলে এই সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
মসৃণ উজ্জ্বল ত্বক: ত্বকে মৃত কোষের জন্য তা দেখতে নির্জীব, রুক্ষ ও বয়স্ক দেখায়। মৃত কোষ দূর করা হলে তা মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়।
আর্দ্রতা রক্ষা: ত্বক পরিষ্কার করার পরে ময়েশ্চারাইজ করা হলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। ত্বক পরিষ্কার করার ফলে মৃত কোষ দূর হয় এবং এই সময় ত্বকে আর্দ্রতার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া ত্বকের পিএইচ’য়ের ভারসাম্য রক্ষা করতেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি।
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি: ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পেলে নানান ধরনের সমস্যা যেমন বয়সের ছাপ, ত্বকের গুণগত মান, সুগঠিত পেশি ও ক্লান্তিভাব দূর হয়।
ফেইশল করার কয়েকটি ধাপ হল
ধাপ-১: মুখ পরিষ্কার করা
প্রথম ও প্রধান ধাপ হল ত্বক পরিষ্কার করা। এতে ত্বক ফেইশলের অন্যান্য ধাপের জন্য প্রস্তুত হয়।
* মৃদু অথবা ফোমধর্মী পরিষ্কারক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
* মুখ ধুতে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।
* পরিষ্কারক যেন খুব বেশি কঠিন বা রুক্ষ না হয় সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন।
* ত্বক বার বার পরিষ্কার করবেন না এতে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল দূর হয়ে যাবে।
ধাপ-২: ভাপ দেওয়া
ভাপ ত্বকের লোমকূপ উন্মুক্ত করে। ফলে ময়লা ও মৃত কোষ সহজেই দূর হয়। ভাপ দেওয়া ত্বককে গভীর থেকে আর্দ্র করে এবং লোম কূপের আকার ছোট করে। এছাড়াও এটা ত্বককে এক্সফলিয়েট করার জন্য প্রস্তুত করে ও শুষ্ক করে ফেলে না।
ধাপ-৩: ত্বক এক্সফলিয়েট করা
ত্বকে ভাপ দেওয়া হলে তা এক্সফলিয়েটের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়। মৃত কোষ ও লোমকূপে জমে থাকা ময়লা দূর হয়।
* মৃদু স্ক্রাব ভেজা ত্বকে ব্যবহার করে।
* স্ক্রাব দিয়ে ত্বক গোলাকারভাবে এক মিনিট মালিশ করুন।
* ত্বক খুব বেশি এক্সফলিয়েট করা যাবে না। ত্বক সংবেদনশীল হলে মৃদু এক্সফলিয়েটর ব্যবহার করুন।
প্রাকৃতিক স্ক্রাব তৈরি- চালের গুঁড়া-১ চা-টেবিল চামচ। কমলার খোসার গুঁড়া আধা চা-চামচ। ননীযুক্ত দই ১ টেবিল-চামচ। এক চিমচি হলুদ।
পদ্ধতি: সব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ঘনত্ব বুঝে এতে দই যোগ করুন। প্যাকটি তৈরি করে মুখে মেখে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
প্যাকটি খানিকটা শুকিয়ে আসলে ভেজা হাত দিয়ে ত্বক আলতোভাবে মালিশ করুন। চালের গুঁড়া ত্বক পরিষ্কার করবে ও কমলার খোসা ত্বক উজ্জ্বল করবে।
ধাপ-৪ মাস্ক ব্যবহার
ত্বক এক্সফলিয়েট করার পরে ত্বকের প্রয়োজন অনুযায়ী মাস্ক ব্যবহার করুন। ফেইস মাস্ক এক্সফলিয়েটের পরে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। এটা লোমকূপ টানটান করতে ভূমিকা রাখে। এক্সফলিয়েটরের পরে পিল-অফ ধর্মী মাস্ক ব্যবহার না করে বরং আর্দ্রতা রক্ষা করে এমন ফেইস প্যাক ব্যবহার করুন।
নিজের ত্বকের প্রয়োজন অনুযায়ী মাস্ক নির্বাচন করতে না পারলে টক দইয়ের তৈরি প্যাক ব্যবহার করুন এটা সব ধরনের ত্বকের সঙ্গে মানানসই।
উপকরণ: ননীযুক্ত দই এক টেবিল-চামচ। মধু আধা টেবিল-চামচ।
পদ্ধতি: সব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে পরিষ্কার ত্বকে ব্যবহার করুন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
মধু ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে এবং এর ব্যাক্টেরিয়া ও প্রদাহনাশক উপাদান দিয়ে ত্বক সুস্থ রাখে। দইয়ের ল্যাক্টিক অ্যাসিড রাসায়নিক উপদানের চেয়ে ত্বকে ভালো কাজ করে।
ধাপ-৫: টোনিং
ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও আর্দ্রতা ধরে রাখতে টোনিং করা জরুরি।
ত্বক প্রাকৃতিকভাবে টোনিং করতে শসার রস বা গ্রিন টিন ব্যবহার করতে পারেন। গোলাপ জলও খুব ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে।
ধাপ-৬ ময়েশ্চারাইজার
উপরের সব ধাপ সম্পন্ন করার পরে ত্বকের আর্দ্রতা নিশ্চিত করতে কোমল ও হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি। ময়েশ্চারিজার যেন লোমকূপ বন্ধ করে না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ছবির মডেল: আশা। আলোকচিত্র: রাইনা মাহমুদ। বিন্যাস ও পরিকল্পনা: আলি আফজাল নিকোলাস। সৌজন্যে: ত্রয়ী ফটোগ্রাফি স্টুডিও।
আরও পড়ুন