করোনাভাইরাসের তাণ্ডব দমেনি সামান্যতম, তারপরও দুই মাসেরও বেশি সময়ের টানা লকডাউনে আনা হয়েছে শিথিলতা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে চালু হয়েছে কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহন।
গণপরিবহনে নানারকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা থাকলেও কতটা মেনে চলতে পারছি আমরা? আবার গণপরিবহনের মতো জায়গায় নিরাপদ থাকার জন্য করণীয় কী?
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হল কিছু পরামর্শ।
দূরত্ব বজায় রাখার বিকল্প নেই
মানুষের চিরাচরিত জীবনযাত্রা আর পরিবহন ব্যবস্থা বড় ধরনের ছাপ রেখে যাবে করোনাভাইরাস। আকাশপথে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য তিন আসনের সারিগুলোতে মাঝের আসনটি ফাঁকা রাখার ব্যবস্থা নিচ্ছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স।
বিমানের সকল কর্মীদের বাধ্যতামূলক ব্যবহার করতে হবে ‘পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট’ বা ‘পিপিই’। আকাশপথে যাত্রায় খাবার সরবরাহ নিষিদ্ধ হচ্ছে, আবশ্যক অনুসঙ্গ হবে ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’।
সড়কপথে খাবারের ঝামেলা না থাকলেও অর্ধেক যাত্রী নিয়ে অর্থাৎ দুজনের আসনে একজন করে বসায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যাতায়াত কতটা নিরাপদ?
যানবাহন যেভাবে ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস
গণপরিবহনে থাকে প্রচুর মানুষের সমাগম। ধাক্কাধাক্কি, গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ানো, বাসের গেটে ঝুলে থাকাই আমাদের চিরাচরিত চিত্র। সীমিত পরিসরে চালু হওয়া গণপরিবহনে সেই পরিস্থিতির সঙ্গে তফাৎ হয়ত খুব কমই দেখা যাবে।
নৌপথে মানুষের উপচে পড়া ভীড়ের চিত্র আমরা ইতোমধ্যেই দেখছি। আকাশপথে ভীড় তেমন না থাকলেও ঝুঁকি আছে সেখানেও।
এখন পর্যন্ত আমরা জানি করোনাভাইরাস মানবদেহের শ্বাসতন্ত্রকে সংক্রমিত করে এবং এর সংক্রমণ ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির লালাকণা থেকে কিংবা ভাইরাস আছে এমন কোনো স্থান স্পর্শ করার মাধ্যমে।
গণপরিবহনের প্রতিটি স্থানেই করোনাভাইরাস-যুক্ত লালাকণা থাকতে পারে। আর দূরপাল্লা হোক কিংবা আন্তঃনগর, এই যানবাহনগুলোতে অনেকক্ষণ সময় পার করতে হয় প্রতিটি মানুষকেই।
এই অবস্থায় উন্নতমানের মাস্ক, গ্লাভস এমনকি পুরোদস্তর ‘পিপিই’ পরলেও ঝুঁকি থেকে যায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। তাই সবকিছু খুলে দেওয়া হলেও আমাদের চেষ্টা করতে হবে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঘরে থেকেই কাজ সারার।
বাতাস চলাচল
পুরোপুরি আবদ্ধ যানবাহন হলেও বিমান এই দিক থেকে বেশ নিরাপদ।
অনেকেই মনে করেন বিমানের ভেতর একই বাতাস ‘রিসার্কুলেট’ করা হয় যা আসলে ভুল ধারনা।
তবে একই প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসগুলো। কারণ এগুলোর মধ্যে বাতাস আটকে থাকে। বায়ুপ্রবাহের জোর থাকে সামান্য। ফলে ভাইরাসও এখানে আবদ্ধ থাকে যাত্রীদের সঙ্গে। যা সংক্রমণের হার বাড়িয়ে দিতে পারে কয়েকগুন।
করণীয়
ভ্রমণ পরিত্যাজ্য হলেও জীবিকার তাগিদে অনেকেই নিরুপায়। তাই যদি করতেই হয় ভ্রমণ তবে নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেকেই নিতে হবে।
- সঙ্গে থাকা ব্যাগ জীবাণুমুক্ত করতে হবে যানবাহন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে।
- ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ এই পরিস্থিতিতে আপনার জীবন বাঁচাবে। বিলাসবহুল পরিবহনে হয়ত কতৃপক্ষই তা সরবরাহ করবে, তবে সেই আশায় বসে থাকলে আপনার চলবে না। ব্যক্তিগত ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ সঙ্গে রাখতে হবে। বাসের আসন জীবাণুমুক্ত করার জন্য সঙ্গে রাখতে হবে জীবানুনাশক স্প্রে।
- বাসের যেকোনো স্থান স্পর্শ করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে, এমনকি গ্লাভস পরা থাকলেও।
- বিমান ও ট্রেনের শৌচাগার নিরুপায় না হলে ব্যবহার করবেন না।
- হাত দিয়ে মুখমণ্ডল স্পর্শ করবেন না, নিরুপায় না হলে মুখ থেকে মাস্ক খুলবেন না। অন্যান্য যাত্রীদের থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখুন। চেষ্টা করুন জানালার পাশের আসনে বসার।
আরও পড়ুন