বিষয়টা এমন নয় যে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। বরং অসুস্থ হয়ে পড়লে এসব রোগীদের খারাপ জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিশেষ করে যদি ডায়াবেটিস সু-নিয়ন্ত্রিত না হয়।
এজন্য নিচের বিধিগুলো মেনে চলা উচিত
• সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখা।
• স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা।
• রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
• চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা।
ডায়াবেটিস এবং করোনভাইরাস
রক্তে উচ্চশর্করার হার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে।
যাদের ডায়াবেটিসের সঙ্গে অন্যান্য রোগ যেমন হার্ট বা ফুসফুসজনিত বা কিডনিজনিত জটিলতা আছে তাদের জন্য করোনভাইরাস প্রাণঘাতী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সংক্রমণ এড়াতে যা করবেন
সর্বোত্তম উপায় হল যতটা পারেন বাড়িতে থাকুন।
যদি বাইরে যেতেই হয় তবে অন্যান্য ব্যক্তিদের থেকে নিজেকে কমপক্ষে ৬ ফুট দূরে রাখুন এবং একটি কাপড়ের মাস্ক পরুন। বাইরে বেরোনোর সময় এবং বাড়ি ফিরে অবশ্যই হাত ধোবেন বা হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
ইন্সুলিন ইঞ্জেকশন নেওয়ার আগেও হাত ধুয়ে নিন এবং যে জায়গায় ইঞ্জেকশন দেবেন সে জায়গা পরিষ্কার করে নিন।
বাড়ির প্রত্যেকেরই নিজের হাত প্রায়শই ধোয়া উচিত। বিশেষত পরিবারের জন্য রান্না করার আগে। কোনো বাসন বা অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিস ভাগ করা যাবে না। আর যদি বাড়ির কেউ অসুস্থ থাকে তবে তার কাছ থেকে যতদূর সম্ভব নিজের ঘরে থাকতে হবে।
একান্তই একই ঘরে থাকতে হলে একটি কাপড়ের মাস্ক পরতে হবে।
করোনাভাইরাসের সময়ে ডায়াবেটিস রোগীর পরিকল্পনা
• ইন্সুলিন বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ বাসায় রাখা যাতে বার বার বাইরে যেতে না হয়।
• রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলে হাতের কাছে মধু, চিনি-মিষ্টি বা ফলের রসের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
• অনেক সময় ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার দরকার হতে পারে। তাই তার ফোন নম্বর জোগাড় করে রাখতে হবে।
যখন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলবেন, জিজ্ঞাসা করুন
• কতবার রক্তের শর্করার পরীক্ষা করতে হবে।
• অসুস্থ হলে আপনার ডায়াবেটিসের ওষুধ কীভাবে সমন্বয় করবেন।
• ঠাণ্ডা বা ফ্লু’র কোন ওষুধগুলো আপনার পক্ষে নিরাপদ।
অসুস্থ হলে কী করবেন
যদি অসুস্থ বোধ করা শুরু করেন তবে বাড়িতে থাকুন। মানসিকভাবে শক্ত থাকুন।
আপনার রক্তের শর্করা স্বাভাবিকভাবে যতবার পরীক্ষা করতেন তার চেয়ে বেশিবার পরীক্ষা করুন।
কোভিড-১৯ ক্ষুধা হ্রাস করতে পারে এবং কম খাওয়ার কারণে শরীর দুর্বল করে ফেলতে পারে। অসুস্থ থাকাকালীন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তরল প্রয়োজন। পানি কাছাকাছি রাখুন এবং পান করুন।
জ্বর বা কাশিজাতীয় ভাইরাসের লক্ষণগুলো থেকে মুক্তিদেয় এমন কিছু ওষুধ রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। উচ্চমাত্রায় অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। অ্যাসিটামিনোফেনের কারণে শর্করার মান মনিটরে ভুল দেখাতে পারে।
কাশি এবং সর্দির ওষুধগুলোতে চিনির পরিমাণ বেশি। যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এগুলো নেওয়ার আগে ডাক্তার বা ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
যদি করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলি যেমন- শুকনো কাশি, জ্বর, বা শ্বাসকষ্ট প্রকাশ পায় তবে ডাক্তারকে ফোন করুন। আপনার রক্তে সবর্শেষ শর্করার মান অন্যান্য রোগের কথা ডাক্তারকে খুলে বলুন।
নিচের লক্ষণগুলো দেখা মাত্র রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে
• ক্লান্তি, দুর্বলতা, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা
• বমি বমিভাব বা বমি হওয়া
• পেটের তীব্র ব্যথা
• তীব্র শ্বাসকষ্ট
হাসপাতালে যাওয়ার সময় অবশ্যই রোগীর ডায়াবেটিস-সহ অন্যান্য রোগের কাগজপত্র মনে করে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
লেখক: ডা. বাধন কুমার দাস। বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল্স লি. এর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত আছেন।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন