লকডাউন থেকে খাবার নষ্ট না করার শিক্ষা

এই লকডাউন থেকে খাবারে মিতব্যয়ী হওয়ার শিক্ষা নিতে পারি আমরা।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2020, 03:48 PM
Updated : 11 May 2020, 03:48 PM

লকডাউনের একটি ভালো দিক হল খাবার নষ্ট করার মাত্রা কমে গেছে অনেক। রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ, যেখানে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে খাবার অপচয় হয়ে প্রতিদিন।

সচ্ছল পরিবারগুলোরও বিলাসিতা কমেছে, সবাই হিসেব করে বাজার করছেন। পরিমিত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করছে। নিজ অবস্থান থেকে কমবেশি সবাই সুবিধাবঞ্চিতদের খাবার যোগানোর চেষ্টা করছেন।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক এই প্রত্যাশা প্রতিটি মানুষের। তবে এই লকডাউন থেকে খাবারে মিতব্যয়ী হওয়ার শিক্ষা নিতে পারি আমরা।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে,  “ভারতীয় পুষ্টিবিদ মঞ্জুরি চন্দ্র বলেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যারা এই পরিস্থিতিতে নিজের কাঙ্ক্ষিত সদাই সংগ্রহ করতে পারছেন না তাদের অধিকাংশই তাদের চাহিদা আর প্রয়োজনীয়তার মধ্যকার পার্থক্যটা টের পাবেন। চেষ্টা করবেন যতটুকু না হলেও নয় ততটুকুতেই বেঁচে থাকার। কোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনেক বড় একটা তাগিদ।”

খাবার অপচয় না করার চিন্তা হয়ত অনেকেই করেন। তবে সেটা ঠিক করা হয়ে ওঠে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সচেতন হয়েছেন কমবেশি সবাই। যখন তখন যেকোনো কিছু কেনার সুযোগ না থাকায় এবং আর্থিক টানাপোড়নে পড়ে রান্নার সরঞ্জাম ব্যবহারে মিতব্যয়ী হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ। খাবার নষ্ট না করে বেঁচে যাওয়া খাবার দিয়ে আরেকবেলার চালিয়ে নেওয়া চেষ্টা করছেন কিংবা সুবিধাবঞ্চিতদের দান করছেন।

খাবারের অপচয় কমানোর কয়েকটি পন্থা এখানে দেওয়া হল।

কার্যকর পরিকল্পনা: অপচয় রোধ করার একটি কার্যকর উপায় হল কাঁচা তরকারি কম কেনা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিন বাজার করাও প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পুরো সপ্তাহের খাবারে রুটিন সাজিয়ে নিতে পারেন এবং সে অনুযায়ী বাজার করতে পারেন। এতে সপ্তাহ শেষে কাঁচাবাজার নষ্ট হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। তবে দীর্ঘদিন রেখে খাওয়া যায় যেসব জিনিস সেসব অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি করে কেনা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, কারণ তাতে প্যাকেজিংয়ের ব্যবহৃত প্লাস্টিক, পলিথিন ইত্যাদি বর্জ্য তৈরি হবে কম।

রান্নার পদ নির্বাচন: কী রান্না হবে সেই সিদ্ধান্ত কীভাবে নেন। নিজের কিংবা পরিবারের কারও পছন্দের পদগুলোই এখানে প্রাধান্য পায় বেশি। ছোটদের বায়নাও এখানে প্রভাব ফেলে। আর বিশেষ দিনে চাই বিশেষ রান্না। কদিন এমন হয় যে ফ্রিজ খুলে যা আছে দেখলেন তাই রান্না করতে হল?

লকডাউনের কারণে এমনটা এখন হয়ত অনেক ঘরেই হচ্ছে।

তবে ভেবে দেখুন, এটাই যদি স্বাভাবিক নিয়ম হত তাহলে সংসারের খরচ যেমন কমত তেমনি খাবারও নষ্ট হত কম। অনেক তরকারির খোসা, যা সচরাচর ফেলে দেওয়া হয়, তা দিয়ে ভর্তা কিংবা ভিন্ন কোনো পদ রান্না করে খাওয়া সম্ভব।

প্রতিদিনের খাবার শেষে কিছু খাবার বেঁচে যায় যা ফেলে দেওয়া হয়। তা না করে বেঁচে যাওয়া খাবার ভালোভাবে ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে কয়েকদিনের খাবার দিয়েও কিন্তু একদিন অনায়াসে পার করে দিতে পারেন। দুদিন আগের রান্না করা মাছ আজ পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে খেতে পারেন, এমনও হতে পারে সেদিনের থেকে আজই মাছটি খেয়ে বেশি স্বাদ পাবেন।।

সঠিকভাবে সংরক্ষণ: সবধরনের খাবারই শীতল এবং আবৃত স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে দ্রুত নষ্ট হয়ে না যায়। শুকনা খাবার এবং ফ্রিজে না রাখলেও ভালো থাকবে এমন খাবার রাখার জন্য ঘরে নির্ধারিত স্থান থাকা উচিত। সহজে তৈরি করা যায় এবং জরুরি সময়ে কাজে আসবে এমন উপকরণ এখানে সংরক্ষণ করতে হবে।

যে খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়া হয় সেগুলোই কেনা উচিত। সংরক্ষণের জন্য এমন স্থান বেছে নিতে হবে যেখানে সূর্যের তাপ কম পৌঁছায়। রান্নাঘর কিংবা খাবার ঘরের কোনো ‘শেল্ফ’ হতে পারে আদর্শ স্থান। ঘরে যে খাদ্যদ্রব্য আছে সেগুলোর মেয়াদের দিকে মনযোগী হতে হবে। পড়ে থেকে কোনো খাবার নষ্ট যাতে না হয় সেদিকে সতর্ক হতে হবে। আর নষ্ট হলে তা দ্রুত ফেলে দিতে হবে যাতে অন্য খাবার নষ্ট করতে না পারে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: স্বাস্থ্যকর খাবার কিন্তু ‘জাঙ্কফুড’য়ের তুলনায় বেশিদিন ভালো থাকে। তাই কাঁচাবাজার যথাসম্ভব তাজা কেনার চেষ্টা করতে হবে। উদ্ভিজ্জ খাবারের প্রতি বেশি জোর দিতে হবে, প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করাই মঙ্গল। পাশাপাশি শাকসবজি বেশি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী হবে যা করোনাভাইরাস থেকে কিছুটা হলেও বাড়তি সুরক্ষা দেবে।

ফ্রিজ: খাবারের অপচর কমানোর মূলমন্ত্র হল খাদ্যদ্রব্য সতেজ রাখা। হাতের কাছে যা আছে তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিভিন্ন খাদ্য উপাদান সম্পর্কে জানতে হবে, কীভাবে তা নষ্ট হয়, কীভাবে সংরক্ষণ করলে লম্বা সময় খাওয়ার যোগ্য থাকবে ইত্যাদি। খাবার হিমায়িত করে রাখলে তার স্থায়িত্বকাল বাড়ানো সম্ভব অনেকটা। তবে হিমায়িত করার পদ্ধতি কোন খাবারের জন্য কেমন সেটাও বোঝা জরুরি। 

উচ্ছিষ্ট থেকে সার: লকডাউনে বাসায় বসে যারা বিরক্ত তাদের জন্য মজার একটি কাজ হতে বারান্দায়, ছাদে বাগান করা। প্রতিদিনের কাঁচা তরকারি উচ্ছিষ্ট দিয়ে সেই বাগানের জন্য সার তৈরি করাও হতে পারে সময় কাটানোর একটা মজার উপায়। আবার শাকসবজির বীজ থেকে নতুন গাছ গজাতে পারার আনন্দও হবে পারে অতুলনীয়। এতে সময় কাটবে, মানসিক তৃপ্তি মিলবে। আবার ঘরে বসেই একবেলার এক পদ খাবার রান্না করতে পারাটা মন্দ কি!

প্রতীকী ছবির মডেল: বৈশাখি। ছবি: অপূর্ব খন্দকার।

আরও পড়ুন