মাস্ক পরার কারণে ত্বকের ক্ষতি সামলাতে

অনেকক্ষণ মাস্ক পরা আর ঘামের কারণে ত্বকে নানান সমস্যা হতে পারে। 

লাইফস্টাইল ডেস্কআইএএনএস/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2020, 03:46 PM
Updated : 9 April 2020, 03:46 PM

সাধারণ মানুষ নিজেদের ঘরে নিরাপদ রাখার সুযোগ থাকলেও চিকিৎসা-সেবার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সে সুযোগ নেই। এছাড়াও বিভিন্ন সেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানের কর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ওষুধের দোকানের কর্মী, জরুরি পরিবহন কর্মীরাও ঘরে বসে থাকতে পারছেন না।

পুরো সময়টি তাদেরকে অন্যান্য সুরক্ষা কবচ স্বরূপ অনুসঙ্গের পাশাপাশি পরতে হচ্ছে মাস্ক। দিনের পর দিন লম্বা সময় মাস্ক পরে থাকার কারণে সেখানে জমে থাকা ঘাম, ঘর্ষণ ইত্যাদির কারণে ত্বকের ক্ষতি হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে প্রদাহ সৃষ্টির আশঙ্কা।

করোনাভাইরাস আতঙ্কের মাঝে অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কথা ভুলে যাওয়া মোটেই উচিত হবে না। জরুরি সেবার আওতাভুক্ত প্রতিটি মানুষের উচিত সকল কাজের মাঝে নিজের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।

মাস্কের কারণে ত্বকের যে সমস্যা হতে পারে তা এড়ানো সহজ। ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে যা ভাইরাসের কবল থেকে বাঁচারই একটি অংশ এবং ত্বক আর্দ্র রাখতে হবে। ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করতে পর্যাপ্ত পানি এবং ‘ময়েশ্চারাইজার’ ব্যবহার দুটোই জরুরি।

ভারতের ইন্দ্রপৃষ্ঠ অ্যাপোলো হাসপাতালের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডি. এম. মহাজন বলেন, “যাদের লম্বা সময় মাস্ক পরতে হচ্ছে তাদের ত্বক ময়েশ্চারাইজ করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সম্ভব হলে সবার কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে কিছুক্ষণ মাস্ক খুলে রাখতে হবে। আর একই মাস্ক সারাদিন পরে থাকা চলবে না, আট থেকে নয় ঘণ্টা পর পরিবর্তন করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসক এবং চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বেশি সাবধান থাকতে হবে। কারণ সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা, ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সঙ্গেই তাদের কাজ। এমতাবস্থায় সংক্রমন থেকে বাঁচতে তাদের মাস্ক হতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁটসাঁট। তাদের ব্যবহার করা মাস্কের কারণে ‘ন্যাসাল ব্রিজ’, আশেপাশের গাল ও চোয়ালের মাংসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাপ পড়ে থাকা অত্যন্ত জরুরি। এতে ওই অংশগুলোতে র‌্যাশ, শুষ্কভাব, ব্রণ ইত্যাদিসহ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতেই পারে।”

ভারতের ফোর্টিস হাসপাতালের ত্বক বিশেষজ্ঞ মঞ্জুল আগারওয়াল বলেন, “‘সার্জিকাল ফেইস মাস্ক’ এবং ‘এন নাইনটি ফাইভ রেস্পিরেটর মাস্ক’ সঠিকভাবে পরলে তা শ্বাসতন্ত্র নিঃসৃত ‘ড্রপলেট’য়ে থাকা সংক্রামক রোগের জীবাণু থেকে যথেষ্ট সুরক্ষা দিতে পারে। ‘সার্জিকাল মাস্ক’ সাধারণত তৈরি ‘পলিপ্রোপেলিন’ কাপড় দিয়ে যা কোনো বোনা কাপড় নয়। আবার ‘ডিস্পোজেবল এন নাইনটি ফাইভ রেস্পিরেটর’য়ে থাকে চারটি পরত। এর একেবারে ভেতরের পরত, যেটি ত্বকের সংস্পর্শে থাকে, সেটিও তৈরি হয় ওই ‘পলিপ্রোপেলিন’ দিয়েই।”

“যদিও অন্যান্য সকল প্লাস্টিক উপাদানের মধ্যে ‘পলিপ্রোপেলিন’কে সবচাইতে নিরাপদ ধরা হয়, তারপরও এর কারণে ত্বকের অ্যালার্জি, র‌্যাশ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। বিশেষত, মাস্কটি যদি ভেজা হয় কিংবা অনেকক্ষণ পরে থাকা হয়। আবার এই মাস্কগুলো নাকের অংশে আরও আঁটসাঁট হয়ে যাতে বসতে পারে সেজন্য নমনীয় অ্যালুমিনিয়ামের পাত বসানো থাকে। এই আঁটসাঁট অবস্থার কারণে নাকের ওপর ‘কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস’, ‘ফ্রিকনাল ডার্মাটাইটিস’, ‘ফ্রিকশনাল মেলানোসিস’ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।” বলেন আগারওয়াল।

চিকিৎসকদের মতে, “নিঃশ্বাস ছাড়ার কারণে মাস্কের ভেতরে যে আর্দ্রতা জমে তা শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ব্যাক্টেরিয়ার বংশবিস্তারের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। এতে সৃষ্টি হতে পারে ‘ফলিকিউলাইটিস’ ও একই ধরনের অন্যান্য সংক্রমণ। বিশেষত, যাদের ঘন দাড়ি-মোচ আছে তাদের এই ঝুঁকি বেশি। এছাড়াও ব্রণ ও ছত্রাকজনীত সংক্রমণও বাড়তে পারে ঘাম জমার কারণে।

মঞ্জুল আগারওয়াল বলেন, “মাস্ক পরার আগে ‘মেইক-আপ’ কিংবা তেলজাতীয় কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করলে তা ত্বকের লোপকূপ আটকে দেয়। যে কারণে ব্রণের আশঙ্কা বাড়ে। আবার যে ‘ইলাস্টিক’ অথবা ফিতা দিয়ে মাস্কটি কানের সঙ্গে আটকে রাখা হয়, তার কারণে কানে ব্যথা হতে পারে। কানের পেছনে থাকা ‘রেট্রোঅরিকুলার রিজিওন’য়ে ‘কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস’ও দেখা দিতে পারে একই কারণে। তাই সম্ভব হলেই নিরাপদ স্থানে গিয়ে মাস্ক খুলতে হবে কিছু সময়ের জন্য, নতুন মাস্ক পরার সুযোগ না থাকলে ব্যবহৃত মাস্কটি পরিষ্কার করে নিতে হবে।”

ভারতের ম্যাক্স সুপার হাসপাতালের ত্বক বিশেষজ্ঞ রাহুল অরোরা বলেন, “যাদের ত্বকে ব্রণের সমস্যা তীব্র এবং প্রচলিত চিকিৎসা যেমন ‘স্যালিসাইলিক অ্যাসিড’, ‘বেঞ্জল পেরোক্সাইড, ‘রেটিনোইডস’ ইত্যাদি ব্যবহার করছেন তাদের উচিত এগুলো সাময়িক বন্ধ রাখা। কারণ, এগুলো ব্যবহারে ত্বক রুক্ষ হয়, জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়। আর মাস্কের কারণে এই সমস্যাগুলো বেড়ে যেতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তারা মাস্ক ব্যবহার করতে পারবেন না, এমনটা নয়। ত্বকের অস্বস্তি হলে ‘সেরামাইডস’, ‘স্কোয়ালেন’, ‘নিয়াসিনামাইড’ অথবা ‘হায়ালুরনিক অ্যাসিড’ আছে এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে, ত্বককে সুরক্ষা দেবে।”

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন