বাসা থেকে অফিসের কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে

‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’- বিষয়টা আনন্দের মনে হলেও বাসা থেকে অফিসের কাজে মনোযোগ রাখা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2020, 01:20 PM
Updated : 4 April 2020, 01:20 PM

দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অনেকেই ঘর থেকে অফিসের কাজ করছেন। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ পদ্ধতিটা বর্তমান পরিস্থিতির জন্য নিরাপদ। তবে অন্যমনষ্কতা দেখা দিতেই পারে। এই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার অভ্যাসও রপ্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে ঘরে কাজের পরিবেশ তৈরি করার বিষয়টাও সহজ নয়।

এই কাজগুলো সহজ করে দেওয়ার লক্ষ্যে জীবনযাপন-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন জানানো হলো কয়েকটি পরামর্শ।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ: ঘরে বসে অফিসের কাজ করার পূর্ব শর্ত হল শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং কাজ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা।

বস্টন’য়ের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক বারবারা লার্সন বলেন, “কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের পরিষ্কার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কাজ শুরু ও শেষের আগে ১০ মিনিট ফোনালাপের মাধ্যমে কাজের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন। তবে কর্মকর্তার সঙ্গে আগেই আলাপের মাধ্যমে সময়টা ঠিক করে নিতে হবে। কারণ অনেক কর্মকর্তার মাথায় ব্যাপারটা নাও আসতে পারে।”

অফিসের কাজ ঘরে বসে করার যতই অভ্যাস থাকুক না কেনো তাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়া খুবই সহজ। আবার যাদের এই অভ্যাস নেই, তারা নিঃসঙ্গতা অনুভব করতে পারেন যা পরোক্ষভাবে কাজের গতি ও মনযোগ কমিয়ে দিতে পারে।

চোখের আড়াল মনের আড়াল বলেও একটা বিষয় থেকে যায়। এক্ষেত্রে ‘ভিডিও কল’ কার্যকর। কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য কাজ ভাগ করে দেওয়া, কাজের অগ্রগতি জানা এবং দলের সবার সঙ্গে আলোচনার জন্য ভিডিও কনফারেন্স অত্যন্ত কার্যকর।

কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা: ঘরের অলস মন মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে বসলে কাজের গতি কমবে এটাই স্বাভাবিক। তাই পরিপাটি পরিচ্ছদ না হলেও নাস্তা সেরে, গোসল, কাপড় বদলে কাজে বসা উচিত, এতে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হবে।

যারা ঘরে বসে কাজ করতে অভ্যস্ত নন, তাদের ঘরে স্বভাবতই অফিস ভাব থাকবে না। তাই বিশেষ এই পরিস্থিতিতে ঘরের একটি কোনকেই নিজের ডেস্ক বানিয়ে নিতে পারেন, যা শুধুই কাজ করা জন্য। কাজ সারতে প্রয়োজনীয় সকল অনুসঙ্গ এখানে হাতে নাগালে রাখতে হবে। মনিটর, তারবিহীন কিবোর্ড-মাউস, পানির বোতল, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তা রাখার জায়গা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস এই ডেস্কে থাকা উচিত।

ভালো একটি চেয়ার সবার ঘরেই থাকা উচিত। কারণ টেলিভিশন দেখার সোফায় বসে অফিসের কাজ করলে মনযোগ যেমন আসবে না, তেমনি বসার ভঙ্গির কারণে ক্ষতি হবে, শরীরে ব্যথা দেখা দিতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়ার মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক বলেন, “ঘরে বসে কাজ করা একটি অন্যতম দিক হল ঘরের স্বাভাবিক পারিপার্শ্বিকতা থেকে নিজেকে কিছুটা হলেও আলাদা করে নেওয়া। পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দিতে হবে আপনাকে যেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ডাকাডাকি করা না হয়, বাচ্চাদেরও সামলে রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে।”

ঘরে নিজের কাজের জায়গা আলাদা করতে পারলে এবং কাজে পুরোপুরি মনযোগ দিতে পারলেই প্রকৃত অর্থে ঘরে বসে কাজ করার সুবিধাগুলো উপভোগ করতে পারবেন। কারণ অফিস যাতায়াতের ঝক্কি পার করতে না হওয়ায় কাজেও আসবে গতি।

কাজের ইতি টানা: ঘরে বসে কাজ করার খারাপ দিকও থাকবে। আর তা হল প্রকৃত অফিসে না যাওয়ার ফলে অফিস ছুটি, বাসায় ফেরা ইত্যাদি যে কাজগুলো অফিস সময়ের ইতি টেনে আনে, তা আপনার ক্ষেত্রে ঘটবে না। সেক্ষেত্রে কাজের শুরু যেমন করেছিলেন কফি দিয়ে, তেমনি শেষটা করতে পারেন সামান্য শরীরচর্চার মাধ্যমে।

নিঃসঙ্গতা সামলানো: সহকর্মীরাও অফিসের পরিবেশের অংশ। আর বর্তমান ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কেউই আপনার আশপাশে নেই। হয়ত যোগাযোগের মাধ্যম আছে তবু কাজের ফাঁকে সামান্য হাস্যরত, রসিকতা, আড্ডাগুলো নেই। ফলে নিঃসঙ্গতা মনোযোগ নষ্ট করতেই পারে। এক্ষেত্রেও প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি। প্রিয় সহকর্মীদের সঙ্গে স্কাইপ, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদিতে যোগাযোগ রাখতে পারেন। সহকর্মীদের সঙ্গে ‘ইনফরমাল’ হোয়াটস অ্যাপ কিংবা ফেইসবুক চ্যাটিং গ্রুপগুলো কাজে লাগানোর এটাই মোক্ষম সুযোগ।

নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো হলে ‘ভার্চুয়াল পার্টি’ও আয়োজন করে ফেলতে পারেন। যেখানে ভিডিও কল’য়েই হতে পারে সহকর্মীদের আড্ডা।

লার্সন বলেন, “বিষয়গুলো অদ্ভুত মনে হতে পারে, তবে মনে রাখতে হবে পরিস্থিতিই এমন অদ্ভুত। তাই সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তা উপভোগ করতে পারলেই মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকতে পারবেন।”

মনোবল ধরে রাখা: পরিস্থিতি যে বিপজ্জনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চারিদিকেই খারাপ খবরের ছড়াছড়ি। উত্তরণের আশার আলো এতই ক্ষীণ যে, নিরাশ হয়ে পড়া যেন খুবই সহজ। তার ওপর আছে প্রিয়জনদের দুশ্চিন্তা, ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা। তবে ভেঙে পড়া চলবে না, ঘরে থেকেই পুরো পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ব্যবস্থা আমাদের আছে। তাই কাজের সময় সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে, অবসর সময়ে দূরের পরিবার পরিজন, বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। ‘মেসেজিং’য়ের পরিবর্তে ‘ভিডিও কল’ মানসিকভাবে বেশি উপকারী হবে।

‘লক ডাউন’য়ের প্রভাবে প্রতিদিন সকল ব্যবসা খাত প্রচণ্ড ক্ষতির শিকার হচ্ছে। অনেকেই চাকরি হারাচ্ছেন, কারও কাজের চাপ বাড়ছে, বেতনভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এমতাবস্থায় কর্মকর্তাদের উচিত তার কর্মীদের কাছে দুঃসংবাদ কিংবা তার পূর্বাভাস প্রকাশ করা, নৈতিকতা বজায় রাখা।

‘বস’ হিসেবে নয়, একজন দলনেতা হিসেবে চিন্তা করা। শুধু কাজ চাপিয়ে না দিয়ে কর্মীদের মানসিক অবস্থাও বিবেচনা আনতে হবে, তাদের কাজের স্পৃহা ধরে রাখতে অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে।

আরও পড়ুন-