ঘরে আটকে থাকার ফাঁদে দাম্পত্য-জীবন ঠিক রাখতে

রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা একসঙ্গে থাকতে বিরক্ত লাগলেও সম্পর্কের টানাপোড়েন ‍দূর করার এই সুযোগ হয়ত আর মিলবে না।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2020, 11:16 AM
Updated : 29 March 2020, 11:16 AM

পরিবারকে সময় দেওয়া যাদের হত না তাদের জন্য ঘরে থাকার বিষয়টা এখন হয়ত আশীর্বাদ বয়ে আনছে। সঙ্গীর সঙ্গে কাটছে দিনের বেশিরভাগ সময়।

তবে অনেক দম্পতি আছেন যারা আবার এই সময়ে মানসিক চাপে ভুগছেন। ভাবছেন সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে থেকে স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানো একটা মানসিক চাপের বিষয়। সেখান থেকে লেগে যাচ্ছে ঝগড়া।

নিজেকে যদি দ্বিতীয় দলের মনে করেন- তবে জেনে রাখুন আপনি একা নন। বিশ্বজুড়ে ঘরে আবদ্ধ থেকে এই পরিস্থিতিতে অনেকেই পড়ছেন। আর সে কারণেই বিভিন্ন সম্পর্ক-বিষয়ক অভিজ্ঞ পেশাজীবীরা পরামর্শ দিয়ে চলেছেন অনলাইনে বা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে।

এরকমই একজন সম্পর্ক-বিষয়ক অভিজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসক র‌্যাচেল রাইট জানিয়েছেন কীভাবে সঙ্গীর সঙ্গে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা থেকেও সম্পর্ক ভালো রাখা যায়।

নিজস্ব সময়: রাইটের মতে, “সবারই নিজস্ব সময়ের দরকার আছে। আর সেটা শুধু বাথরুমে নয়।”

“সেটা হতে পারে শুধুই একটু জিরিয়ে নেওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে বার্তা আদান প্রদান, বই পড়া ইত্যাদি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই সময়টা হতে হবে একান্তই আপনার। এর জন্য সঙ্গীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হবে।”

“যখন আপনি নিজস্ব সময় কাটাবেন তখন সঙ্গীকেও তার নিজস্ব সময় কাটাতে দিতে হবে। সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য দুজনেরই এটা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একজন আরেকজনের ওপর চোখ রাখা যাবে না। বিশ্বাসটাই আসল এখানে।”

তালিকা তৈরি করা: এই সময় বহু মানুষ সাধারণ রুটিন পালন করতেই মানসিক চাপে পড়ছেন। তাই সঙ্গীর সঙ্গে বসে আলোচনা করে কিছু সময় আলাদা করে নিন দুজনেই। হতে পারে সেটা ঘরে থেকে অফিসের কাজ করার সময় সঙ্গীর অন্য ঘরে থাকা।

কিছুটা সময় বাইরে কাটানো: এই সময় ঘরের বাইরে যেতে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে আসল কথা হল যে কোনো মানসিক চাপ কাটাতে মুক্ত নির্মল বাতাস খুবই ভালো কাজ করে। তাই বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসা যেতেই পারে। তবে সেটা অবশ্যই অন্যদের থেকে ছয় ফিট দূরত্বে থাকার যে নিয়ম রয়েছে সেটা পালন করতে হবে। বাইরে না গেলেও কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে লম্বা শ্বাস নেওয়া বা ছাদে গিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটিও করা যেতে পারে।

অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা: একেবারেই ঘরে বসে কারও সঙ্গে যোগাযোগ না করার কোনো মানে হয় না। একই মুখ বার বার দেখতে দেখতে বিরক্ত লাগবেই। মানুষের স্বভাবই এরকম। সে বৈচিত্র্য চায়। তারমানে এই নয় সে সঙ্গীকে পছন্দ করছে না। আর টেকনোলজির এই যুগে সরাসরি না গিয়েও বন্ধু আত্মিয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যায়। তাই যাদের সঙ্গে কথা বললে মনের চাপ কমবে তাদের সঙ্গে ফোনে আলাপ করুন। দিনে অন্তত দুজনের সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারেন। পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে মিলে ভিডিও চ্যাটও করতে পারেন। যা সত্যিই সাংসারিক মানসিক চাপ কমিয়ে আনতে পারে।

কথা বলুন সুন্দর করে: যে কোনো সম্পর্ককে সুন্দর রাখতে যোগাযোগটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই কোরেন্টিন জীবনে তো এই অবস্থা আরও সহায়ক। এই সময় কথাকাটি, তর্ক-বিতর্ক হবেই। তাই বলে গালাগালি অবশ্যই করা যাবে না। লজ্জা দিয়ে কথা বলা বন্ধ। সহানুভূতির মাধ্যমে নিজের কথা সঙ্গীকে বুঝিয়ে বলুন। তেমনি সঙ্গীর কথাও মনোযোগ ও ধৈর্য্য নিয়ে শুনতে হবে। সমস্যা যাই হোক এই সময় নিজের ভালো দিকগুলো দেখাতে না পারলেও অন্তত অস্থির হওয়া যাবে না।

রাইট বলেন, “নিজের এবং সঙ্গীর প্রতি মায়াময় স্বাভাবিক আচরণ এই সময়েই করতে হবে।”

সময়কে কাজে লাগান: আপনার যদি সেই দম্পতি হয়ে থাকেন যাদের মধ্যে কাজের জন্য সারাদিন দেখাই হত কম। তবে এই সুযোগ কাজে লাগান। যদিও ঘরের ফাঁদে আটকে থাকাটা ভালো বিষয় না। তারপরও সঙ্গীর সঙ্গে মজার সময় কাটানোর এই সুযোগ ছাড়বেন কেনো।

একসঙ্গে ভালো সময় কাটাতে যা করতে পারেন

- একসঙ্গে ভিডিও গেইম খেলা।

- কোনো নতুন জিনিস শেখা, একসঙ্গে। হতে পারে বিদেশি কোনো ভাষা।

- শারীরিক মিলনে যাওয়া, নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করা।

- একসঙ্গে থাকলে একে অপরকে ‘মেসেজ’ করতেই পারে ভালোবাসার কথা জানিয়ে।

- ঘরের আসবাবপত্র নতুন করে সাজানো, একসঙ্গে ঘর পরিষ্কার করা, রান্না করা, কাটা বাছায় সাহায্য করা ইত্যাদি।

 

আরও পড়ুন