করোনাভাইরাসের ভুয়া পরামর্শ এড়াতে

ফেইসবুকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বহু গুজব ছড়াচ্ছে যেগুলো কোনো ভিত্তি নেই।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2020, 02:27 PM
Updated : 11 March 2020, 02:28 PM

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যখন তুঙ্গে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটা প্রতিরোধে নানান ভুল তথ্য প্রদান করা হচ্ছে। যা মানুষের কোনো উপকারেই আসবে না। উল্টো করবে ক্ষতি।

বিবিসি’র পর্যবেক্ষণে এরকমই কিছু বিষয় নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে প্রচলিত ভুল তথ্য এবং সেগুলোর সঠিক বিষয় সম্পর্কে এখানে জানানো হল।

রসুন

করোনাভাইরাসের আবির্ভাব হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে দেখা গেছে রসুন খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, রসুনে ‘অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল’ উপাদান থাকায় তা স্বাস্থ্যকর। তবে এটা করোনাভাইরাস থেকে বাঁচায় এমন কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। 

অনেকক্ষেত্রেই দেখা গেছে, এই সকল্ উপাদান শরীরে প্রতিশোধকের কাজ না করলেও প্রতিরোধকের কাজ করে। মূলত, এই সকল কারণের এগুলো খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

‘দ্যা সাউথ চায়না মর্নিং’য়ে একজন নারী সম্পর্কে জানানো হয় যে, তিনি ১.৫ কেজি কাঁচা-রসুন খাওয়ার কারণে গলা ফুলে যাওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

আমরা সবাই জানি যে- তাজা ফলমূল, সবজি ও পর্যাপ্ত পানি পান শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তবে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, করোনা থেকে বাঁচাতে এইসকল উপাদান কার্যকর।

খনিজ

জর্ডান সাথের নামক একজন ইউটিউবার কয়েকটি ভিডিওতে দেখিয়েছেন যে, ‘মিরাকেল মিনারেল সাপ্লিমেন্ট’ বা এমএমএস করোনাভাইরাস দূরে রাখতে সহায়তা করে।

এতে আছে ক্লোরিন ডাই-অক্সাইড নামক ব্লিচিং উপাদান।

সেথার ও অন্যান্যরাও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগে জানিয়েছেন যে, ক্লোরিন ডাই অক্সাইড (এমএমএস) ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে এবং করোনাও দূর করে।

গত বছর, ‘ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)’ এমএমএস পান করার ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে। অন্যান্য দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়টিকে গুরুত্ব নিয়ে দেখেছে।

‘এফডি’য়ের মতে, যে কোনো অসুস্থতায় এটা প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করেছে বলে কোনো নজির পাওয়া যায়নি। বরং, সতর্ক করা হয়েছে যে, এটা পান করলে বমি বমিভাব, বমি, ডায়রিয়া ও পানিশুণ্যতার সৃষ্টি করতে পারে।    

ঘরে তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজার

অনেক ছোট ছোট ভিডিওর মাধ্যমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার জেল তৈরির উপায় জানা যায়। কারণ করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হল হাত ধোয়া।

কিন্তু এই পদ্ধতি অধিকাংশ মানুষের সঙ্গে মানানসই নয় এবং সব ধরনের ত্বকের জন্যও উপযোগী না।

৬০ থেকে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ড জেলে সাধারণত ‘ইমোলিয়েন্ট’ থাকে। যা ত্বককে কোমল রাখতে সাহায্য করে।

‘লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকেল মেডিসিন’য়ের অধ্যাপক স্যালি ব্লুমফিল্ড বলেন, “৬০ থেকে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল সমৃদ্ধ স্যানিটাইজার বানানো সম্ভব না। এমকি ভদকাতে ৪০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে।”

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সেন্টার’য়ের তথ্যানুসারে, ঘরের মেঝে পরিষ্কার করতে বাজারে যে সাধারণ পরিষ্কারক পাওয়া যায় তা-ই জীবাণু ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। তাই বলে সেটা শরীরে নয়, বাসাবাড়ি জীবাণু মুক্ত রাখার কাজে ব্যবহার করাই উচিত। আর হাত ধোয়ার জন্য সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ঘষে তারপর প্রবাহমান পানিতে ধুয়ে ফেলাই মোক্ষম পন্থা।  

প্রতি ১৫ মিনিট পর পর পানি পান

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুবার প্রচারিত হয়েছে একজন জাপানের চিকিৎসকের কথা। যিনি প্রতি ১৫ মিনিট পর পর পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন। এতে করতে মুখে প্রবেশ করা যে কোনো ভাইরাস পরিষ্কার হয়ে যায়। এই পোস্টের আরবীয় ভাষার অনুবাদটি ২ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি প্রচার করেছে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ট্রডিও লং জানান, শরীরে এমন কোনো কার্যক্রিয়া নেই যেখানে  ভাইরাস পাকস্থলিতে যাবে এবং তা ধ্বংস হবে।

করোনাভাইরাসের মতো সংক্রমণ শ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করে। এটা মুখের মাধ্যমেও প্রবেশ করতে পারে। তবে ক্রমাগত পানি পান যে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচাবে তা ঠিক নয়।

তবে, মনে রাখতে হবে, পানি পান করা ও নিজেকে আর্দ্র রাখা স্বাস্থ্যগতভাবেই উপকারী। 

আইসক্রিম এড়িয়ে চলা এবং তাপ

বিভিন্ন দেশেই ইউনিসেফের নামে মিথ্যা রটানো হয়েছে যে, গরম পানি পান এবং সূর্যের আলো করোনাভাইরাসকে ধ্বংস করে। আর এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে যতটা সম্ভব আইসক্রিম বাদ দিতে হবে। 

করোনাভাইরাস সম্পর্কে ভুল ধারণার ওপর  ইউনিসেফে পক্ষে কাজ করা কর্মকর্তা শার্লোট গর্নিটজকা বলেন, “সম্প্রতি ইউনিসেফের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে আইসক্রিম ও অন্যান্য ঠাণ্ডা খাবার বাদ দেওয়া এই করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। যা, সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।” 

গরমে সর্দির ভাইরাস টিকে থাকতে পারেনা। তবে গরমই যে করোনাভাইরাস ধ্বংসের উপায় সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

ভাইরাসকে অকেজো করতে শরীরে তাপ প্রয়োগ বা রোদে বাইরে থাকা কার্যকর নয়। অধ্যাপক ব্লুমফিল্ডের মতে, এটা অকার্যর।

তিনি আরও বলেন, “এই ভাইরাস শরীরে ঢোকার পরে মারার কোনো উপায় নেই। দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাই একে মারতে পারবে। এজন্য রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকতে হবে।”

ব্লুমফিল্ডের মতে, দেহের বাইরে থেকে তাপ দিয়ে করোনাভাইরাস ধ্বংস করতে চাইলে প্রায় ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। যা কিনা গরম পানি দিয়ে গোছল করার চাইতে বহুগুণ গরম।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন